চীনের শেয়ারবাজারে দরপতনের প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে। অর্থনীতিতে ধীরগতি এবং ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির কারণে চীনের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহের নিম্নগতি এখনো অব্যাহত রয়েছে। দেশটির শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক সাংহাই কম্পোজিট সোমবার দিনশেষে ৮.৫ শতাংশ কমে ৩ হাজার ২শ’ ৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দরপতন ঠেকাতে দেশটি প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় পেনশন তহবিলের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু শত চেষ্টাতেও নিম্নমুখিতা ঠেকানো যাচ্ছে না। ধস নেমেছে বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে। হংকং-এর হ্যাংসেং সূচক ৪.৯ শতাংশ নেমে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩শ’ ১৩ পয়েন্টে।
ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পুঁজিবাজার, জাপানের নিক্কেই ২২৫ দিনশেষে ৪.৬ শতাংশ কমে হয় ১৮ হাজার ৫শ’ ৪০ পয়েন্ট। যা গত ৫ মাসে সবচেয়ে কম। অস্ট্রেলিয়া শেয়ারবাজারে দিন শেষ হয়েছে সূচক ৪.১ শতাংশ হ্রাসের মধ্য দিয়ে ৫ হাজার ১ পয়েন্টে। অন্যদিকে সাউথ কোরিয়ার কসপি সূচক ২.৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮শ’ ২৯ পয়েন্টের মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়।
ইউরোপের শেয়ারবাজারগুলোর দিন শুরুই হয়েছে পতনের মধ্য দিয়ে। লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক দিনের শুরুতেই ২.৫ শতাংশ কম ছিলো। ফ্রান্স এবং জার্মানির বেশিরভাগ পুঁজিবাজারে দিনের শুরুতে সূচক ছিলো আগের দিনের চেয়ে ৩ শতাংশ নিচে।
চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে গত ডিসেম্বরের পর এবার একদিনের সর্বোচ্চ ধস দেখলো দুবাই শেয়ারবাজার। দেশটির প্রধান সূচক দুবাই ইনডেক্স ৭ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৪শ’ ৫১ পয়েন্টে নেমে আসে। যা গত মার্চের পর সবচেয়ে কম। এছাড়াও আবুধাবিতে সূচক পড়েছে ৫ শতাংশ এবং কাতারে ৫.৩ শতাংশ।
তেলের দামও এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন দেশটির অর্থনীতিবিদরা। বৈশ্বিক বাজার ধসে বিশাল দরপতনের মুখে পড়েছে ভারত। দেশটির প্রধান শেয়ারবাজার বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক সেনসেক্স ১ হাজার ৫শ’ পয়েন্ট, বা ৫ শতাংশ কমেছে, যা ভারতের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহৎ পতন। এর ফলে ভারতীয় মুদ্রা রুপির দাম কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি ডলারে ৬৬.৬৭ রুপি।
চীনের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির হার ও দেশটির শিল্পখাতের উৎপাদন কমার শঙ্কায় ৫’শ পয়েন্ট নেমে গেছে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক। আর এতে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের লোকসান হলো ১শ’ ৯০ কোটি মার্কিন ডলার। বিশ্বের তৃতীয় বিত্তশালী ওয়ারেন বাফেটকেও লোকসান গুনতে হয়েছে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের দুই পুঁজিবাজারেও লেগেছে দরপতনের হাওয়া। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ আগের দিনের চেয়ে ডিএসইএক্স সূচক ৩৭ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭শ’ ৯৩ পয়েন্টের মধ্য দিয়ে দিন শেষ করেছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে দিনশেষে সিএসসিএক্স সূচক ৬৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৯শ’ ৫৬ পয়েন্টে। চীনের পুঁজিবাজার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না এলে বিশ্বব্যাপী দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।