সাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়। জ্বলে পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়। পাকিস্তানকে ৯ রানে হারিয়ে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের অভিষেক আসরেই ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।
সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় শুরু হওয়া ম্যাচে টসে হেরে আগে ব্যাট করা বাঘিনীরা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৩৪ রান করে। জবাবে পাকিস্তান ৯ উইকেটে ২২৫ রানেই থামে।
আগে ব্যাট করা টিম টাইগ্রেস ওপেনিং জুটিতে ৩৭ রান পায়। উইকেটরক্ষক ব্যাটার শামীমা সুলতানা ১৭ রান করে ক্রিজ ছাড়লে জুটি ভাঙে।
দ্বিতীয় উইকেটে শারমিন ও ফারজানা ৪২ রান যোগ করে দলকে ভালো অবস্থানে রাখেন। সাবলীল খেলতে থাকা শারমিন খানিকটা বিস্ময়করভাবে বোল্ড হন। ৫৫ বলে ৬ চারে ৪৪ রান করা এই ব্যাটার লেগ স্টাম্পের উপর থাকা একেবারেই সাদামাটা বলে সুইপ করতে যান। উমাইমা সোহাইলের বল তার গ্লাভসে লেগে স্টাম্পে আঘাত করে।
নিগারকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৯৬ রানের দারুণ জুটি গড়ে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পাওয়ায় মুখ্য ভূমিকা রাখেন ফারজানা। ফিফটির কাছাকাছি যাওয়া টাইগ্রেস অধিনায়কের বিদায়ের ভাঙে জুটি। ৬৪ বলে এক চারে ৪৬ রান করে তিনি ফাতিমা সানার বলে লেগ বিফোরে কাটা পড়েন।
শেষ ১০ ওভারে অবশ্য নিগারের দল ৫৯ রানের বেশি তুলতে পারেনি, হারিয়েছে ৪ উইকেট।
দলীয় ২০৪ রানের মাথায় ক্রিজ ছাড়েন ১৩ বলে ২ চারে ১৬ রান করা রুমানা আহমেদ। খানিক পর টাইগ্রেস ব্যাটারদের ভেতর সর্বাধিক ৭১ রান করা ফারজানাও ড্রেসিংরুমে যান। ১১৫ বলে ৫ চারে ৭১ রান করে তিনি সিদরা নাওয়াজের গ্লাভসবন্দি হন।
ফারজানার বিদায়ের পরের বলেই রানের খাতা না খুলেই ফাহিমা খাতুন এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন নাশারা সান্ধুর বলে। শেষ ওভারে ১৩ বলে ১১ রান করা ঋতুমণি রান আউট হন। সালমা খাতুন ১১ ও নাহিদা আক্তার ২ রানে অপরাজিত থাকেন।
পাকিস্তানের হয়ে সান্ধু ৪১ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট পান ফাতিমা সানা, নিদা দার ও উমাইমা সোহাইল।
বাজে ফিল্ডিংয়ের টিম টাইগ্রেস দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছিল। অষ্টম ওভারে সালমার করা চতুর্থ বলে সুইপ করতে গিয়েছিলেন নাহিদা খান। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় শর্ট ফাইন লেগে। কাছাকাছি থাকার পরও রুমানা বল নাগালে নিতে পারেননি। পরের বলেই ১৫ রানে থাকা সিদরা আমিনের ক্যাচ ফেলে দেন উইকেটরক্ষক শামীমা।
পাকিস্তানের প্রথম উইকেটের পতন ঘটাতে ২৩.৪ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ৬৭ বলে ৩৪ চারে ৪৩ রান করা নাহিদাকে বোল্ড করেন রুমানা। ভাঙে ৯১ রানের জুটি।
৫৬ রানে আবারো জীবন পান সিদরা। মিড অনে নাহিদা তার ক্যাচ নিতে পারেননি। ৩১তম ওভারের শেষ বলে আবারো সিদরা বেঁচে যান। সহজ ক্যাচ ফেলেন ফারজানা।
৩৮তম ওভারে বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দেন জাহানারা আলম। তার বলে বিসমাহ মারুফ ক্রিজ ছাড়লে ভাঙে ৬৪ রানের জুটি। মিডউইকেটে ক্যাচ ধরেন শারমিন।
এরপর বাঘিনীরা নিয়মিত উইকেট তুলতে থাকে। ৫ রানের ভেতর ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান। ২ উইকেটে ১৮৩ থেকে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৮৮ রান। ফাহিমার বলে ১০ রান করা উমাইমা ফারজানার হাতে ধরা পড়া দিয়ে যার শুরু।
রুমানার বলে রানের খাতা না খুলে আউট হন নিদা দার। ৪৪তম ওভারে পরপর দুই বলে আলিয়া রিয়াজ ও ফাতিমা সানাকে ফ্লাইটেড বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে হ্যাটট্রিকের আশাও জাগিয়েছিলেন ফাহিমা। ওই ওভারের শেষ বলে সিদরা নাওয়াজ রান আউট হন।
অষ্টম উইকেটে ২১ রান যোগ করে বাঘিনীদের খানিক দুশ্চিন্তায় ফেলেন সেঞ্চুরি করা সিদরা আমিন ও দিয়ানা বেইগ। ১২ রান করা বেইগ সালমার বলে লেগ বিফোরে কাটা পড়েন। খানিক পর ১৪০ বলে ৮ চারে ১০৩ রান করা সিদরা আমিন রান আউট হলে ইতিহাস গড়ার কাছাকাছি চলে যায় বাংলাদেশ।
শেষ দুই ব্যাটার সুবিধা করতে পারেনি। ফলে জয়ের আনন্দে মাঠ ছাড়ে বাংলার মেয়েরা।
বাংলাদেশের হয়ে ৩৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট পাওয়া ফাহিমা খাতুন হন ম্যাচ সেরা। ২৯ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন রুমানা আহমেদ। একটি করে উইকেট পকেটে ভরেন জাহানারা আলম ও সালমা খাতুন।