নির্ধারিত ওভার শেষে টাই। টাই সুপার ওভারেও। উত্তেজনার পারদ চড়তে চড়তে ফেটে গেছে থার্মোমিটার! নাটক জমে হল ক্ষীর! লর্ডসে রোমাঞ্চের শেষে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। সুপার ওভারে টাই হওয়ার পর ম্যাচে বাউন্ডারির সংখ্যা হিসাবে এগিয়ে চ্যাম্পিয়ন মরগানের দল।
আবারও পারল না নিউজিল্যান্ড। টানা দ্বিতীয় আসরে ফাইনালে উঠে শিরোপা থাকল অধরা। লর্ডসে শিরোপার মঞ্চে কাজের কাজটা সারল ইংল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসনদের সুপার ওভারের নাটকীয়তায় হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে ইংলিশরা। তাতে ২৩ বছর পর নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল বিশ্বকাপ। আগামী চার বছর সোনালী ট্রফির নতুন রাজ্য এখন ইংল্যান্ড, যে রাজ্যে রাজা মরগান।
লর্ডসে ফাইনালের মঞ্চে টস করতে নেমেছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগান। দুদলের জন্য নির্ধারিত ১০০ ওভারের লড়াই শেষে তাদের একজনের উঁচিয়ে ধরার কথা শিরোপা। সেটি আধাঘণ্টা পেছাল। খেলা যে টাই হয়ে তখন সুপার ওভারে। সেখানেও টাই। তবে দিনশেষে শিরোপার হাসিতে মাতা ব্যক্তিটি মরগান। দুজনের যে-ই ট্রফি ছুঁতেন, তার দেশের জন্যই হত প্রথম বিশ্বকাপ জয়। সেখানে এগিয়ে থাকলের ইয়ন মরগান।
ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে এবার বসেছিল বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর। আগের আসরগুলো মিলিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচবারের শিরোপা জেতা দল অস্ট্রেলিয়া। দুবার করে জিতেছে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একবার করে টাইটেল গেছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়। নিউজিল্যান্ড বা ইংল্যান্ড আগে কখনোই শিরোপা জিততে পারেনি। সেই খরা কাটাল ইংল্যান্ড। আর ১৯৯৬ সালের পর নতুন কোনো দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু খেল থ্রি-লায়ন্সরা।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
আগেও একবার শিরোপার মঞ্চে গিয়েছিল চলতি আসর নিয়ে মোট আটবার সেমিফাইনালে খেলা নিউজিল্যান্ড। এবার নিয়ে ফাইনালে আসাটা দুইয়ে দাঁড়ায়। প্রথমবার গত আসরেই, তাসমান সাগরপাড়ের প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথ আয়োজক ছিল তারাও। ফাইনালে অজিদের কাছেই ভেঙে পড়ে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের দল। এবার কাঁদাল ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ড সেখানে প্রথমবার ফাইনালে ওঠে সেই ১৯৭৯ সালে, টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরেই, হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। পরে ইংলিশরা আরও দুবার ফাইনালে খেলেছে, ১৯৮৭ সালে হারে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। পরেরবার ১৯৯২ আসরে হার পাকিস্তানের কাছে। কখনোই শিরোপা জিততে না পারা ইংলিশরা এবার চতুর্থবারের মতো শিরোপার মঞ্চে এসে করল বাজিমাত।
ইংল্যান্ড শিরোপার পথে সেমিতে ৮ উইকেটে হারিয়ে আসে অস্ট্রেলিয়াকে। লিগপর্বে গেছে নানা চড়াই-উতরাই। ৯ ম্যাচে ৬ জয় ও ৩ হারের পথ মাড়িয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনে থেকে সেরা চারে পা রেখেছিল মরগান-রুটদের দল।
নিউজিল্যান্ডও সেখানে গেছে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে। সেরা চারে এসেছে চতুর্থ দল হিসেবে। লিগপর্বে ৯ ম্যাচে ৫ জয় ও ৩ হারের সঙ্গে একটি বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে সেমিতে আসে উইলিয়ামসন-বোল্টদের দল। তবে চার নম্বর দল হিসেবে সেমিতে এলেও ভারতকে ১৮ রানে হারিয়ে সবার আগে ফাইনালের টিকিট কেটেছিল কিউইরাই। রোববারের দিনশেষে তারা রানার্সআপ।
দীর্ঘ ৪৬ দিনের লড়াই শেষে ক্রিকেটবিশ্বের চোখ আটকে ছিল লর্ডসে। মহারণের মঞ্চ প্রস্তুত ছিল, নিজেদের শান দিয়ে রেখেছিল প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। কুশীলব হিসেবে একদিকে স্টোকস-আর্চাররা, অন্যদিকে গাপটিল-টেলররা। ক্রিকেট ভাগ্য হেলে গেল ইংলিশদের দিকেই, রোমাঞ্চের শেষে বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বেছে নিল ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ডকে!