প্রতি চার বছর পর পর বসে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। আর এ সময় ফুটবলকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষের উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। বিশ্বকাপের মতো আসরে কখনো নিজেদের দল অংশ গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন না করলেও, কিংবা অদূর ভবিষ্যতে এমন লক্ষ্যণ না থাকলেও বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন না। চলমান ২১তম ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়েও চলছে মানুষের নানা উন্মাদনা।
বিশ্ব ফুটবল নিয়ে মোটাদাগে বাঙালির মুগ্ধতা জন্মে ব্রাজিল ফুটবলার কিংবদন্তি পেলে এবং আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ফুটবলার ম্যারাডোনার অসাধারণ খেলাতেই। সেই থেকেই সমর্থকদের বিরাট অংশ দুই ভাগে ভাগ হয়। এক পক্ষ আর্জেন্টিনা এবং অন্যপক্ষ ব্রাজিল। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার দাপট অব্যাহত। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, দুই দলের সমর্থকরাই পরস্পরকে প্রতিপক্ষ ভাবেন।
শুধু দুই দল মুখোমুখি হলেই নয়, সমর্থকদের যুদ্ধটা এখন ছড়িয়ে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিল যার সাথে খেলছে সেই ফলাফলের দিকেও! আর্জেন্টিনা হারলে খুশি হন ব্রাজিল সমর্থকরা, আবার একইভাবে ব্রাজিল হারলে খুশি হন আর্জেন্টিনা সমর্থকরা।
সমর্থকদের মধ্যে যুদ্ধংদেহি মনোভাব না হলে কিসের বিশ্বকাপ! আর এমনটাই যেনো দেখা যাচ্ছে এবারের বিশ্বকাপকে ঘিরে বাঙালি সমর্থকদের মধ্যে। তারকারাও এক বিন্দু পিছিয়ে নেই। নিজের পছন্দের দলের সমর্থন নিয়ে তারাও গলা ফাটাচ্ছেন সোশাল মিডিয়ায়। যেহেতু সাধারণ দর্শকদের মতো মিডিয়ারও বিরাট একটা অংশ সমর্থন করেন আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলকে। সংগত কারণেই তারকা সমর্থকদের মধ্যেও বাকযুদ্ধটা উপভোগ্য!
১৪ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপের আসর শুরুর আগে থেকেই নিজেদের দলের সমর্থন হিসেবে তারকারাও ছবি, স্ট্যাটাস দিচ্ছিলেন সমানতালে। পছন্দের দল সমর্থন করার যুক্তি, পাল্টা যুক্তিতেও অংশ নিতে দেখা গেছে অনেককেই। তবে ২১তম ফুটবল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগ পর্যন্ত যুক্তিতে বেশ সরস ভূমিকায় পালন করছিলেন বাঙালি আর্জেন্টাইন ভক্তরা। তারা উন্মুখ হয়েছিলেন অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল আইসল্যান্ডকে নিশ্চিত ভাবেই হারাবে আর্জেন্টিনা। ফলত কিছুটা নীরব ভূমিকা পালন করেন ব্রাজিল ভক্তরা। কিন্তু দুঃখের বিষয় ১-১ গোলে ম্যাচটি ড্র হয়! গণেশ পাল্টে যায়! আর্জেন্টাইন ভক্তরা এবার চুপটি মেরে যান! আর এই সুযোগটাই নেন দেশের ব্রাজিল ভক্তরা। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের নানা ভাবে ক্ষেপিয়ে তুলেন। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার সেরা খেলোয়ার মেসির পেনাল্টি মিস করার ঘটনা উল্লেখ করে আর্জেন্টাইন ভক্তদের সঙ্গে নানা ভাবে মজা করেন ব্রাজিল সমর্থকরা।
ব্রাজিলের কট্টর ভক্ত হিসেবে খ্যাত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী স্ট্যাটাসে বলেন, ‘হোয়াইল আই ফিল সরি ফর মেসি, আই ফিল এক্সট্রেমলি হ্যাপি ফর আইসল্যান!’-এ যেনো আর্জেন্টাইন সমর্থকদের জন্য কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা!
একদিন পরেই এবার রণাঙ্গনে ব্রাজিল! প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল হওয়ায় ব্রাজিল ভক্তরা ধরেই নিয়েছিলো খুব সহজ হবে জয় পাওয়া। কিন্তু আর্জেন্টিনা-আইসল্যান্ড ম্যাচেরই মতোই রিপিট হলো এই ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ড ম্যাচটি। আগের ম্যাচের ক্ষত ভুলে চুপ মেরে থাকা আর্জেন্টাইন ভক্তরা এবার গর্জে উঠলেন। ব্রাজিল ভক্তদের চেয়ে দুই পা এগিয়ে এবার তারা পাল্টা জবাব দিলেন!
চিরকুট ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ভোকাল এবং আর্জেন্টিনার চরম ভক্ত শারমিন সুলতানা সুমি ব্রাজিল ভক্তদের ইঙ্গিত দিয়েতো ফেসবুকে স্ট্যাটাসই দিয়ে বসলেন। বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক বঙ্কীমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ‘কপাল কুণ্ডলা’র জনপ্রিয় উক্তি ‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেনো?’ থেকে ধার নিয়ে লিখলেন, ধরেনিলাম আর্জেন্টিনা অধম, তাই বলিয়া ব্রাজিল উত্তম হইলোনা কেন?
তার এমন কথাকে সাপোর্ট করেছেন শোবিজ অঙ্গনের অনেক তারকা শিল্পী, অভিনেতা, নির্মাতা। এমন মন্তব্য দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্রাজিলের সমর্থকদের কিছুটা ঘায়েল করা গেল বলে মন্তব্যের ঘরে এসে সুমিকে বাহবা দিচ্ছেন অনেকে! নির্মাতা শাহনেওয়াজ কাকলী যেনো আরো এক পা এগিয়ে। তিনি লিখলেন, ‘নেইমারকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র বানাবো। সে কঠিন অভিনেতা।’
আইসল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডকে এক করে ফেলায় আর্জিন্টাইন ভক্তদের টিপ্পনী কেটে ব্রাজিল ভক্তদের কেউ আবার নতুন যুক্তি নিয়ে হাজির। টিপ্পনী কেটে বলছেন, ‘এই আকাশী, তোমাদের লজ্জা করেনা, সুইজারল্যান্ডের সাথে আইসল্যান্ডের তুলনা দিতে!’
সব মিলিয়ে বলা যায়, শুধু কট্টর ফুটবল ভক্তদের মনেই নয় বিশ্বকাপের উত্তেজনা বিরাজ করছে সমস্ত অঙ্গনের মানুষদের মনে। এমন উত্তাপ ছাড়া কি আর বিশ্বকাপ জমে!