সন্ধ্যায় এক হইহই মুহূর্ত। দিনের প্রথম ম্যাচটা শেষ হলো মাত্র। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুমের দিকে রওনা হয়েছেন ম্যাচের দুই দল রহমতগঞ্জ এবং মুক্তিযোদ্ধার ফুটবলাররা।
সেটাই নিয়ম, কারণ আরেকটি ম্যাচ খেলতে আসা দুই দলকে ছেড়ে দিতে হবে ডাগআউটের অধিকার। বেশিরভাগ খেলোয়াড় ড্রেসিংরুমের দিকে দৌড় দিলেও রহমতগঞ্জের ‘ম্যাচ উইনার’ বিদেশী রিক্রুট জেডিয়েন সলোমন ছুটে আসলেন ডাগআউটের পেছনে। দৌড়ে গিয়ে দখলে নিলেন সাইড লাইনের পাশে রাখা পানিভর্তি বালতির! মুহূর্তেই গোসলটাও সেরে নিলেন সেখানেই।
মাঠে যারা ছিলেন দৃশ্যটা তারা দেখেছেন, কিন্তু কেউই এটাকে সলোমনের দোষ হিসেবে বিবেচনায় নেন নি। অবশ্য এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলো না এই ফুটবলারের।
কারণ গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের যে অবস্থা তাতে এখানে ফুটবল ম্যাচ খেলা আর ধান খেতে হাল চাষ করা প্রায় কাছাকাছি কাজ।
কাঁদা মাঠেই চলছে বাংলাদেশের প্রধান পেশাদার ফুটবল লিগ-বিপিএল। বাংলাদেশের সবচে বড় এবং বিগ-বাজেটের ফুটবল লিগ এবং দেশের ক্লাব ফুটবলে ফুটবলারদের অন্যতম প্রধান আয় রোজগারের উপলক্ষও এই বি-লিগ। কিন্তু মাঠের এ অবস্থার কারণে ম্যাচগুলোও হয়ে পড়েছে আগের চেয়ে আরও মানহীন।
তবে মাঠের এমন অযোগ্যতার ‘দায়’ নিতে রাজি নয় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্রাউন্ডস কমিটি। তাদের দাবী, মাঠ খেলার ‘অযোগ্য’- এমন নোটিশ জানানোর পরও এক রকম জোড় করেই লিগ চালিয়ে যাচ্ছে বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটি।
কাঁদায় মাখামাখি হয়ে এমন ‘ছন্দহীন’ ফুটবলে কার মন ভরছে এমন প্রশ্নে উত্তর দিতে গিয়ে বাফুফের গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বাবুল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, স্বীকার করছি আমি এখন গরুর হাটের মতো অবস্থা, এই মাঠে কোনভাবেই ফুটবল হতে পারে না, যা হচ্ছে তার হাস্যকর।
কিন্তু আপনি নিজেই গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান, তাই সব দায় তো আপনার নিজের ওপড় এসে পড়ে।
এমন প্রশ্নে ফজলুর রহমান বাবুল বলেন, এর দায় আমি নিবো না। কারণ, মাঠ খেলার অযোগ্য এই নোটিশ আমরা পাঠিয়েছি। কিন্তু তাতে কোন লাভ নেই। আমার কথা না শুনে কোন বিশেষ ক্লাবের ইচ্ছা পূরণ করছে প্রফেশনাল লিগ কমিটি। একরকম জোড় করেই লিগ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সুতরাং এই দায় আমি এবং গ্রাউন্ডস কমিটি আমরা নিবো না।
‘বলতে পারেন গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি শুধু নামেই আছি, সব সিদ্ধান্ত পেশাদার লিগ কমিটিই নিয়ে থাকে। এমন মাঠে ক্লাবগুলোকে খেলতে হচ্ছে বলে আমি নিজে সত্যি লজ্জিত।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রাউন্ডস কমিটির অন্য এক সদস্য চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, আগামী মাসের ১৫ তারিখ কিরগিস্তানে একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাবে ঢাকা লিগের সবচে প্রভাবশালী দল লেফটেনেন্ট শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। তার আগেই লিগের সব ঝামেলা শেষ করতে চায় ধানমন্ডির এই ক্লাবটি। আর তাদের ইচ্ছাতেই তাড়াহুড়ো করে লিগ শেষ করতে চাইছে বাফুফের লিগ কমিটি।
কিন্তু কোনো ক্লাবের ইচ্ছাতে যদি এমন কাজ হয়েই থাকে তাতে ক্ষতি হচ্ছে দেশের। কারণ দেশের প্রধান ও একমাত্র আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফুটবল স্টেডিয়াম এটি।
ঘরোয়া আসরতো বাকি আছেই, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর এই মাঠেই বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে জর্ডানের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশকে, আপাতত সেসব শিডিউল কি ভুলে গেছে বাফুফে।