ভুটান ৩-১ বাংলাদেশ। গোলকিপার পেনাল্টিটা না ঠেকাতে পারলে ফলাফল ৪-১ হতো। এটাও দেখতে হলো। একটা জাতীয় দল যে এত বাজে ফুটবল খেলতে পারে, আজকের ম্যাচ না দেখলে বিশ্বাস হতো না। পাসিং না প্লেসিং, কি ফুটবল খেললো টম সেইন্টফিটই জানেন। রক্ষণভাগ বলে কিছু ছিলো না বাংলাদেশের। আটজন স্ট্রাইকার নিয়ে দল সাজানোতে কি যে লাভ হলো, তাও বুঝলাম না।
ভুটানের ডিবক্সে বলই তো গেলো হাতে গোনা কয়বার। আর ডিবক্সের আশেপাশে গিয়ে স্ট্রাইকাররা বুঝতেই পারছিলেন না, শট নেবেন নাকি ক্রস দেবেন কাউকে। আর যেসব শট নিয়েছেন, আহা! পা দিয়ে ছক্কা মারার মতো ব্যাপার।
দল ঘোষণার দিন আবু সাদত ভাইয়ের সাথে ফুটবল ফেডারেশনে গিয়েছিলাম। দলে মাত্র চারজন ডিফেন্ডার। তার মধ্যে আবার জামাল ভূঁইয়া বাদ। তার চেয়ে ভাল সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বাংলাদেশে আছে বলে আমার জানা নাই। ২৩ জনের দলে তিন গোলকিপার, আটজন স্ট্রাইকার!! আধুনিক ফুটবল মানে তো শুধু আক্রমণ না, রক্ষণটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কোচ সেদিকে কোন গুরুত্বই দেননি!
তার উপর আবার সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা, ফিটনেস, অ্যাটিটিউড এই তিনটা শব্দ বারবারই তিনি উচ্চারণ করছিলেন। এসব শর্তেও তো জামালের চেয়ে ভাল কাউকে দেখি না। গত কিংস কাপে শেখ জামালকে চ্যাম্পিয়ন করাতে তারই তো বড় ভূমিকা ছিলো।
প্রস্তুতি ম্যাচে মালদ্বীপের কাছে ৫-০ গোলে হারার পর জামাল কোচের কৌশলের সমালোচনা করেছিলেন। এই হলো জামালের বাদ পড়ার কারণ। সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে কোচকে প্রশ্ন করেছিলাম, “তুমি পর্যাপ্ত ডিফেন্ডার নাওনি, জামাল ভূঁইয়ার মতো একজন সিডিএম-ও রাখো নাই। ভুটানের আক্রমণভাগকে কি তুমি পাত্তা দিচ্ছো না?”
প্রশ্নটা শেষ না হতেই তেড়ে-ফুঁড়ে উঠেছিলেন কাজী নাবিল আহমেদ। যিনি বাফুফের জাতীয় ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান। ফুটবল খেলাটার সঙ্গে কোনদিন যার সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। বাফুফে এবং বাংলাদেশের ফুটবল এসব লোক দিয়েই চলছে। যারা টাকা আর ক্ষমতার জোরে চেয়ার দখল করে আছেন। সেদিন নাবিল সাহেব সেইন্টফিটকে আমার প্রশ্নটার উত্তর দিতে দেননি। আজ আমরা খেলার ফলাফলে প্রশ্নটার উত্তর পেয়ে গেছি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাদাত ভাইকে বলেছিলাম, “দেইখেন, মিনিমাম তিন গোল খাবে। ভুটান এখন আর আন্ডারএস্টিমেট করার মতো দল না। ওদের লিগের স্ট্যান্ডার্ড প্রতিনিয়ত বাড়ছে, গ্যালারিভর্তি দর্শক থাকে, স্পন্সর আছে, জাতীয় একাডেমি আছে, থিম্পুতেই দুটি টার্ফের মাঠ আছে। জিততে হলে খুব খুব ভালো খেলতে হবে।”
শঙ্কাটা সত্যি হলো। খারাপ লাগছে খুব। আগামী তিন বছর বাংলাদেশ ফিফা আর এএফসির কোন ম্যাচ পাবে না। এখন ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৮৫, সামনের তিন বছরে তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। অবস্থা যখন এতটাই খারাপ, বাফুফের এই কমিটি এবং জাতীয় দল বিলুপ্ত ঘোষণা করা হোক। অনূর্ধ্ব ১৭ এবং ১৯ দলটাকে গড়ে তোলা হোক, একাডেমিটা স্বল্প পরিসরে হলেও চালু রাখা হোক।
কমলাপুরে একটা একাডেমি চালানোর মতো ব্যবস্থা সহজেই করা যায়। বর্তমান ফেডারেশন দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলের কোন উন্নয়ন হবে না। কারণ, এরা ফুটবল নিয়ে সামান্যও ভাবে না।
উইমেন উইং ছাড়া বর্তমান ফেডারেশনের সবাইকে বাংলাদেশের ফুটবল থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হোক।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)