পুঁজিবাদী সভ্যতার অমানবিক প্রতিযোগিতায় পা দিয়ে আজ নির্মম অমানবিক সমাজ নির্মাণ করেছেন দেশের একটি মুনাফালোভী বণিক শ্রেণী। দুর্ঘটনা সর্বদা দুর্ঘটনা নয়। এই দেশে এগুলো ঘটানো হয়। রূপগঞ্জের বেভারেজ কারখানায় কী এমন জরুরি পণ্য তৈরি হতো যে এই করোনাকালের চরম দুঃসময়ে তা খোলা রাখতে হয়েছে। মুনাফার লোভ মানুষকে অমানুষে পরিণত করেছে।
গতকাল বিকেলে এই কারখানায় আগুন লাগে। আজ দুপুরের দিকে ফায়ার সার্ভিসের ১৯ টি ইউনিট সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও প্রাণ হারান প্রায় ৫২ জন শ্রমিক। যাদের অধিকাংশই কিশোর। সবচেয়ে মর্মান্তিক ও অমানবিক বিষয়টি হচ্ছে আগুনে দগ্ধ শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেনি মূল গেটটি বন্ধ ছিল বলে। একটি কারখানায় শত শত শ্রমিক কাজ করছে অথচ তাদের বের হওয়ার রাস্তাটি বন্ধ। এ যেন মধ্যযুগীয় দাস চিত্র।
কারখানার এক বেঁচে যাওয়া শ্রমিক ফিরোজা। তিনি কেঁদে কেঁদে জানলেন: কারখানায় আগুন লাগার পর জীবন বাঁচাতে কারখানার দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তখনই কারখানার চারতলায় আটকেপড়া মেয়ে তাসলিমার কথা মনে পড়ে। ছুটে যেতে চান কারখানার চারতলায়। কিন্তু কারখানার নিচের গেট বন্ধ পেয়ে হালিমার আর কারখানার ভেতরে যাওয়া হয় না। তাসলিমার চাচি আমিনা বেগম অভিযোগ করেন: আগুন লাগার সময় কারখানার নিচের ফটকটি বন্ধ ছিল। এ কারণে অনেক শ্রমিকই কারখানাটি থেকে বের হতে পারেননি। ফিরোজা বিলাপ করে তার মায়ের হাড্ডিগুলো খুঁজে দিতে বলছেন বারে বারে পুলিশকে। এ এক ভয়াবহ বিভৎস আর্তনাদের ছবি। আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওই ভবন থেকে অন্তত ৪৯ শ্রমিকের দগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে মোট লাশের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫২। তবে ভবনটির পাঁচতলা ও ছয়তলার আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এ দুটি ফ্লোর ও ভবনের ছাদে উদ্ধার তৎপরতা চালানো যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
করোনায় মৃত্যু যখন আমাদের প্রকৃত মহামারির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যখন আমরা মানুষকে ভাইরাস থেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। যখন দেশের দারুণ অর্থনৈতিক ক্রান্তিকালেও সরকার সব ধরণের অজরুরি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে লকডাউন ঘোষণা করেছে তখন এই ধরণের মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের বিস্ময়ে হতবাক করে দেয়। আমরা আশা করবো এই লকডাউনেও কেন এই কারখানাটি খোলা রাখা হয়েছিল তা জানতে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সত্য উদঘাটন করবে।
সাথে সাথে আমরা আশা করবো এই ধরণের একটি কারখানায় শ্রমিকরা যখন কাজ করে তখন কী কারণে কারখানার মূল গেট বন্ধ রাখা হয়। এর পেছনে কারা জড়িত তা বের করে এইসব মৃত্যুর বিচার করতে হবে। আমরা চাই সরকার সহসাই পদক্ষেপ নেবে এই মর্মন্তুদ মৃত্যুর জন্য কারা দায়ী। শ্রমিকদের পরিবারকেও ক্ষতি পূরণের নিশ্চয়তা দিতে হবে।