টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের আওতায় বিনামূল্যে বরাদ্দকৃত খাম্বা থেকে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রাঘব-বোয়ালদের বাণিজ্যের রশি টানা-টানির খেসারতে বন্ধ রয়েছে প্রকল্পের মালামাল সরবরাহের কাজ। এ কারণে বর্তমান সরকারের সাফল্যের সুফলে অংশীদার হওয়ার স্বপ্নটা অধরাই থেকে যাচ্ছে আলো বঞ্চিত হাজারো সাধারণ জনগণের।
এই সকল অনয়িমের প্রতিবাদে গত ২৬ জানুয়ারী ভূঞাপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতারিত গ্রাহকগণ।
সংবাদ সম্মেলন ও সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে জাইকার অনুমোদিত প্রকল্প সেন্ট্রাল জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন প্রজেক্ট ঘরে ঘরে বিদুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে কাজ শুরু করে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রর আওতায় কার্যাদেশ প্রাপ্ত হয় জেড, এফ এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে জেড, এফ এন্টারপ্রাইজ নিজে কাজ না করে তা বিউবো’র টাঙ্গাইল শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফের স্ত্রীর মালিকানাধীন শামীম এন্টারপ্রাইজ নামক অন্য আরেকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সার্বিক দায়-দায়িত্ব দিয়ে সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেন।
এই হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার চক্র, স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ও বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি এক হয়ে শুরু হয় খাম্বা বাণিজ্য। খাম্বা, তার, ট্রান্সফরমার ও মিটার লাগিয়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসে ২৬টি গ্রাম থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই চক্রের বিরুদ্ধে। সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন ওইসব এলাকার প্রতারিত গ্রাহকগণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিতরণ অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কাজ ও জব অর্ডার মোতাবেক মালামাল সরবারহ বন্ধ থাকায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে বিদ্যুৎ-এর চাহিদা থাকায় অসাধু চক্র দুর্নীতি করে থাকতে পারে। তিন জেলার প্রজেক্ট দেখভালের জন্য কর্মকর্তা আছেন মাত্র ২-৩ জন। এই লোকবল দিয়ে সঠিকভাবে তদারকি সম্ভব নয়।
টাঙ্গাইল শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফের স্ত্রীর মালিকানাধীন শামীম এন্টারপ্রাইজের সাথে যোগাযোগ করা হলে আব্দুল লতিফ চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, ‘আমি বা আমার স্ত্রী এই ধরণের অনিয়মের সাথে জড়িত নই। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য এক শ্রেণীর লোক মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করছে। যারা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করছে, তারাই সমস্ত খাম্বা জোর পূর্বক বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করছে। আর এ কারণেই প্রকল্প কর্মকর্তা ভূঞাপুর সাইটের মালামাল সরবারহ বন্ধ রেখেছেন।’
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেড,এফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী খন্দকার জাহিদ মাহমুদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের প্রভাবে ও চাহিদা মোতাবেক কিছু স্থানে জব অর্ডার ব্যতিত খাম্বা স্থাপন হয়ে থাকতে পারে। এই প্রকল্পে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো প্রকার টাকা নেওয়া সুযোগ নেই। তা যদি হয়ে থাকে তাহলে প্রমাণ সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রকল্প অফিস সঠিকভাবে তদারকি না করার কারণে কাজে কিছুটা গাফিলাতি হয়ে থাকতে পারে। তারা ২৬টি জবের মধ্যে ১৩টি জব পাশ করলেও মালামাল দিয়েছে মাত্র ২-৩টির। আর এ কারণেই জনগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।’
এলেঙ্গা প্রজেক্ট অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আবুল কালাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। লোকবল কম থাকলেও অধিক শ্রম দিয়ে আমরা তার ঘাটতি পূরণ করছি। জব অর্ডার ব্যাতীত কিছু স্থানে খাম্বা স্থাপন করায় মালামাল সরবারহ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও ওই এলাকায় গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ থাকায় বিভাগীয় তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত কাজ শেষ হলে সে মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’