যুগোপযোগী পরিবর্তনের অঙ্গীকারে ৫৩ বছরে পা রাখলো জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন-বিটিভি। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠানটি তার জন্মলগ্ন থেকে নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছে। বিটিভির শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯৬৪ সালে, ডিআইটি ভবনের নিচতলায়। জাপানের নিপ্পন ইলেকট্রিক কোম্পানির সার্বিক সহযোগিতায় এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশে টেলিভিশন একটি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে রূপান্তরিত হয়। বাংলা ভাষার প্রথম টেলিভিশন চ্যানেলটি ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত সাদাকালো পর্দায় সম্প্রচার হতো। ’৮০ সালের পর দর্শকদের সামনে রঙিন পর্দায় এসে নতুন এক যুগে পা রাখে বিটিভি। আমরা জানি, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সূচনা, বিস্তৃতি এবং বিকাশ এই বিটিভির মাধ্যমেই। তারপরও নানাক্ষেত্রে সেই বিটিভিকে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়েছে। তার দীর্ঘ পথচলায় বিনোদনের পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশসহ নানা বিষয়ে অনুষ্ঠান পরিবেশন করে দেশের টেলিভিশন দর্শকদের বড় একটা অংশের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে বর্তমানে শহর এলাকায় বিটিভির দর্শক অনেক কম। দেশের একমাত্র টেরেস্ট্রিয়াল চ্যানেল হওয়ায় তার নেটওয়ার্ক প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে। তাই গ্রামাঞ্চলে বিটিভির দর্শক এখনও প্রায় একচেটিয়া। কেননা বহু গ্রামে এখনও বেসরকারি চ্যানেলগুলো সেভাবে পৌঁছাতে পারেনি। অবশ্য বিটিভিকে নিয়ে সমালোচনাও কম নেই। ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিকদলগুলো বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানটির স্বায়ত্তশাসন এড়িয়ে গিয়ে সরকারের একক কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে আমলাদের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগপদ্ধতি এবং অযৌক্তিক পদোন্নতি নিয়েও বিটিভিকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বারবার। অনেকের অভিযোগ, বিটিভি বেশিরভাগ সময় দলীয় মুখপাত্র হয়ে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। তাই এর দর্শকসংখ্যা ক্রমাগতই কমছে। এই অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিকে সব শ্রেণীর দর্শকের কাছে নিয়ে যেতে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে। তবে, এ কথাও ঠিক যে, জনসচেতনতায় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম থাকাও জরুরি। গাঁটের পয়সা খরচ করে বেসরকারি প্রচার মাধ্যম যেটা করবে না সেটা করছে বিটিভি।