রাজউক ও পরিবেশ নীতিমালা উপেক্ষা করে রাজধানীর বেগুনবাড়ি খাল ও হাতিরঝিলের উপরে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন অবশেষে ভাঙতেই হচ্ছে। আপিল বিভাগ বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। বিজিএমইএ ভবন সরিয়ে নিতে সময় চেয়ে লিখিত আবেদনের শুনানির পর যেকোন সময় বেগুনবাড়ি খাল ও হাতিরঝিল থেকে ভবনটি উঠে যাবে। ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের পর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে রায় দেন। এরপর বিজিএমইএ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভবনটি ধরে রাখার দীর্ঘ চেষ্টার পর ‘ভবনটি ভাঙতেই হবে’ মর্মে রায় বহাল থাকে। ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তবে, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর স্থপতিদের সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভবনটিকে ‘হাতিরঝিলের বিষফোঁড়া’ বলে মন্তব্য করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজিএমইএ আইন বহির্ভূতভাবে ওই ভবনের প্রায় সবগুলো ফ্লোর ব্যাংকসহ কয়েকজন ব্যক্তি মালিকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। হাইকোর্টের দেয়া রায়ে ওইসব ক্রেতার টাকাও ফেরত দিতে সময় ঠিক করে দেয়া হয়েছে। দেশের আইন ও বিচারিক কাঠামোতে আপিল বিভাগ শেষ বিচারিক পর্ব বলেই অবৈধ বিজিএমইএ ভবনের থাকা না থাকা নিয়ে আর কোন সংশয় নেই। এই ভবন ভাঙা বা সরিয়ে নেওয়া হলে (যা সময়ের ব্যাপার মাত্র) তা দেশের আইনের শাসনের বিরাট দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ থাকবে। এ ঘটনা থেকে ‘আইন সবার জন্য সমান’ এই বার্তা প্রভাবশালী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছাবে বলে আমরা আশা করি।