একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দোসর হিসেবে শহীদ বুদ্ধিজীবী-সহ লাখ লাখ নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা এবং লাখো নারীর সম্ভ্রমহানীর সঙ্গে সরাসরি জড়িত দল জামায়াতে ইসলামীর বিচার নিয়ে আবার নতুন করে কথা উঠেছে।
গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হকের মন্তব্যে বিষয়টি আলোচনায় আসে। তিনি বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে সংগঠিত যুদ্ধাপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে প্রকাশ্য আদালতে জামায়াতে ইসলামীর বিচার হওয়া উচিৎ।’
সানাউল হক আরও বলেছেন, ‘সংগঠন হিসেবে জামায়াতের ইসলামীর বিচার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিচার শুরু করা উচিত। যখন সংগঠনের বিচার হয়, তখন ওই সংগঠনের অঙ্গ সংগঠন ও জড়িত ব্যক্তিদেরও বিচার হয়। সংগঠনের নেতৃত্বের দায় চলে আসে।’
এমন কথা আমরা বহু বছর ধরে শুনে আসছি। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দলটির শীর্ষ পাঁচ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং মীর কাশেম আলীর ফাঁসির পর দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের বিষয়টি আরও যৌক্তিকতা পায়। শক্তভাবে দাবি উঠে সংগঠনটির বিচারের। এমনকি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়েও দলটিকে ‘ক্রিমিনাল দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজও দলটির বিচার শুরু করা সম্ভব হয়নি।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছে। সেই স্বাধীন দেশের মাটিতে বসে যুগের পর যুগ প্রকাশ্যে নিজেদের অপতৎপরতা চালিয়ে গেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ বাহিনী গঠন করে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটায় তারা। তারপর বছরের পর বছর ধর্মকে পুঁজি করে উগ্রবাদের জন্ম দিয়েছে। অথচ তাদের বিচারে কেউ উদ্যোগ নেয়নি। দলটির স্বরূপ উন্মোচনে পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেউ।
এই ৫০বছরে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ছাড়া আর কোনো অর্জন নেই। তাও সেটা হয়েছে উচ্চ আদালতের রায়ে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। কিন্তু রায় কার্যকর হয় পাঁচ বছর পর। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর চূড়ান্তভাবে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপর জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
অথচ দলটির বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণিত। বাংলাদেশের মানুষ জানে, তাদের অপরাধের শেষ নেই। তাই আমরা মনে করি, আর কালক্ষেপণ না করে যতটা দ্রুত সম্ভব সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে হবে। ইতিহাসের দায় শোধ করার এখনই সময়।