সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি ডক্টর শাহদীন মালিক বলেছেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৪৬ কোটি টাকা। আর মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। বিচার বিভাগ ও আইনজীবীদের চেয়ে মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বেশি।
আজ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডক্টর শাহদীন মালিক বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের কথাবার্তা নিয়ে এখন সব জায়গাতেই আলোচনা হচ্ছে যা সাধারণ মানুষের উদ্বেগ-উৎকন্ঠাকে বাড়িয়ে তুলছে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সব সময় সরকারকে জেতাতে ব্যস্ত থাকে। দুদক আছে, কিন্তু তা সরকারি লোকদের দুর্নীতি খুঁজে পায় না। এটাই হল বাস্তবতা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথকীকরণ না হলে দেশের উন্নয়ন হবে না, সরকারকে মনে রাখতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন না হলে জনগণের কল্যাণও বয়ে আনা যাবে না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্টজনরা বলেন, যারা ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতাধর তারাই বর্তমান বিচার ব্যবস্থা থেকে সবচেয়ে বেশী লাভবান হচ্ছেন।
ডক্টর কামাল হোসেন বলেন, ‘বিচার বিভাগ না থাকলে আমরা কেউ নিরাপদ থাকব না, আমাদের ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনিরাও নিরাপদ থাকবে না। তারা কিসের মধ্যে বাস করবে। সুন্দর বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। আসুন আমরা সবাই মিলে যদি বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে পারি, তারা বাকিটা দেখে নেবে। সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলছে কিনা।’
সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ব্যাপারে একটি আইন করার কথা বলা হয়েছে। আজ পর্যন্ত সেই আইন করা হয়নি। যদিও গত নির্বাচন কমিশন আইনের একটি খসড়া পর্যন্ত দিয়ে গিয়েছিল। সেটাও গ্রহন করা হয়নি কিংবা পরিবর্তন করে আইন করা হয়নি। আমরা এই ভাবেই সংবিধানকে উপেক্ষা করছি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, যেখানে ন্যায় বিচার থাকবে, আইনের শাসন থাকবে এই ধরণের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। যদি আইনের শাসন না থাকে বিচার ব্যবস্থা যদি স্বাধীন না হয় তাহলে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা খুবই কঠিন।বিচার বিভাগের শুধু স্বাধীনতা নয়, দরকার ক্ষমতা বান্ধব বিচার ব্যবস্থা নয়, দুর্বল বান্ধব বিচার ব্যবস্থা দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, একটি আইনের যথেষ্ট ও বৈষম্যমূলক প্রয়োগ গত কয়েক বছরে প্রকট হয়ে উঠেছে। দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকারের স্বার্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্তম্ভ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর নাহলে দেশ পেছাতে থাকবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম শাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে বিচার বিভাগ গুরুত্বপূর্ণভাবে জড়িত। বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন না থাকে তাহলে প্রত্যেকটা নাগরিকের রক্ষা করার ব্যবস্থা থাকে না।
বিচার বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করার পাশাপাশি এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয় গোলটেবিল আলোচনা থেকে।