বিচারাধীন মামলার বন্দীদের নিয়ে দেশের কারাগারগুলো প্রচণ্ডরকম গাদাগাদি পূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটি ও জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন বাংলাদেশ আয়োজিত দেশের বিচার ব্যবস্থা সংক্রান্ত এক নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শনিবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বিচার ব্যবস্থার বিদ্যমান অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি মামলাজট ও এর সমস্যা থেকে উত্তরণের বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন।
এসময় বিচারাধীন মামলার তুলনায় বিচারকের অপর্যাপ্ততা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রতিদিন মামলাজট বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে প্রতি দশ লাখ লোককে মাত্র ১০ জন বিচারক বিচারিক সেবা দিচ্ছেন।’
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির একটি নীরিক্ষা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মামলা পারস্পরিক বোঝাপড়া বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। এবং সেখানে বড়জোড় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মামলা নিষ্পত্তি হয় আদালতে।
আর আমাদের দেশে চিত্র ঠিক এর বিপরীত। এদেশে কেবল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়ে থাকে বোঝাপড়া বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে। আর ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয় আদালতে।’
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘বিচারাধীন মামলার বন্দীদের দিয়েই মূলত দেশের কারাগারগুলো প্রচণ্ডরকম গাদাগাদি পূর্ণ। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষ এই বন্দীদের বিষয়টি সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।’
এ অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পাদিত ন্যাশনাল জাস্টিস অডিটের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়।
সেখানে বলা হয়, দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার পাবেন বলে বিশ্বাস করেন। কিন্তু বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল হওয়ার পরও তাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী। অর্থাৎ মাত্র ১৩ শতাংশ বিচারপ্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় দ্বারস্থ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে ৩৪ লক্ষ মামলার জট তৈরি হয়েছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে মামলা ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ তুলে ধরে নীরিক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচার ব্যবস্থাকে আরো গতিশীল এবং জনমুখী করতে আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট বৃদ্ধি, বন্টন ও মানব সস্পদ উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটির চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি)’র বাংলাদেশের প্রধান জুডিথ হারবার্টসন, জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মাইকেল শুলথহাইস ও জিআইজেড বাংলাদেশের রুল অব ল’র হেড অব প্রোগ্রাম প্রমিতা সেনগুপ্ত। আর জাস্টিস অডিটের ফলাফল উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ম্যাপিং সেন্টারের পরিচালক জোসেপ এরিক ক্যাডোরা।
এ ফলাফল উপস্থাপনের পর উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো.রেজাউল হাসান, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, বিচারপতি জে বি এম হাসান, বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার, বিচারপতি মো.জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি জাফর আহমেদ প্রমূখ।
এসময় উভয় বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।