চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ শিগগিরই উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়ার কথা বললেও লালদিয়ার চরের বাসিন্দারা পুনর্বাসন ছাড়া কোথাও যাবেন না বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে তারা বলছেন: এই ১৪ হাজার মানুষ পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ হলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় পতেঙ্গার লালদিয়ার চর থেকে বেশ কয়েকটি বাসে করে হাজার খানেক নারী-পুরুষ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হন। সেখানে এসে তারা বলেছেন: সরকার বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা না করলে তারা তাদের বর্তমান আবাসস্থল ছাড়বেন না।
লালদিয়ার চর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন: নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, এখানে ভাড়াটিয়ারা থাকে। যৌথ সার্ভে করলে সেটার উত্তর বের হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি এবং প্রয়োজনে আদালতের প্রতিনিধিসহ থেকে সার্ভে করা হোক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন এই ১৪ হাজার মানুষ পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ হলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনি মানববন্ধন চলাকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বলেন: জাতির জনক একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বিমান ঘাটি সম্প্রসারণের জন্য তিনি অত্র এলাকার বাসিন্দাদের লালদিয়ার চরে স্থানান্তর করেছিলেন। এমন সময়ে উচ্ছেদের কথা বলা হচ্ছে যখন সারাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ ছাড়া তাদের উচ্ছেদের কথা বলা হচ্ছে। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে উস্কানি হিসেবে আখ্যায়িত করে আন্দোলটিকে এবং ক্ষতিপূরণের মানবিক আবেদনকে নস্যাৎ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একটি মানবিক আবেদনকে উস্কানিমূলক বলে যে বক্তব্য এসেছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
“চট্টগ্রামের মানুষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চট্টগ্রামবাসীর অধিকার হরণ করা যাবে না। ব্রিটিশরা পারেনি, একাত্তরে সোয়াত জাহাজ বন্দরের আশেপাশের মানুষ রক্ত দিয়ে ফিরিয়েছিল। এই বন্দরের উন্নয়ন হয়েছে। বন্দরের টাকায় পায়রা বন্দর, গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। তখন বন্দরের আশপাশ থেকে অসহায় মানুষকে উচ্ছেদের কথা বলা হচ্ছে। কোনো ভাড়াটিয়ার জন্য আন্দোলনে নামিনি, আন্দোলনে নেমেছি যারা পৈত্রিক ভূমি হারিয়েছে তাদেরকে পুনর্বাসন করার দাবিতে। পুনর্বাসন না হলে এ আন্দোলন এক দফা এক দাবিতে যাবে। অন্যথায় চট্টগ্রামবাসীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি বা আইনের কথা বলে ন্যায্য অধিকার থেকে দূরে রাখতে চাইলে তার দাঁতভাঙা জবাব চট্টগ্রামের মানুষ দেবে”, বলেন নুরুল আজিম রনি।
নৌ প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াহিদুল আলম বলেন: রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন আমাদের নেত্রী। তাহলে আমাদের কেন ঠাঁই হবে না? ১০ দিন ধরে বিদ্যুৎ-পানিহীন মানবেতর জীবনযাপন করছি। আজ যদি মহিউদ্দিন চৌধুরী বেঁচে থাকতেন এ কথা আপনি বলতে পারতেন না। মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা আজও বেঁচে আছে। এ জমি বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছিলেন। ২০০৫ সালের রায় কেন বাস্তবায়ন করছেন না? আমরা বেঁচে থাকতে উচ্ছেদ হবে না। আমাদের গায়ের উপর বুলডোজার চালাতে পারলে উচ্ছেদ করুন। ২০০৫ সালে এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের এক রায়ে লালদিয়ার চরবাসীকে পুনর্বাসন করতে বন্দরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে এসে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী লালদিয়ার চরে উচ্ছেদে অনড় অবস্থানের কথা জানান। সেখানে পুনর্বাসনের মতো কেউ নেই জানিয়ে তিনি বলেন: লালদিয়ার চরে জমি ‘দখলে রেখে’ যারা আর্থিক ‘ফায়দা লুটেছে’ তাদের তালিকা করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন এবং সমাবেশ করে লালদিয়ার চরের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ চরবাসীর পক্ষে তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনও পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদের বিরোধিতা করেছেন। এমনকি নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় বুধবার চরের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনও একই দাবি জানান।
১৯৭২ সালে বিমান ঘাঁটি সম্প্রসারণের সময় স্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়ার আশ্বাসের ভিত্তিতে নিজেদের ভিটামাটি ছেড়ে লালদিয়ার চরে বসতি শুরু করে স্থানীয় কয়েকশ পরিবার। এখন ওই এলাকায় ২৩০০ পরিবারের ১৪ হাজার মানুষ বসবাস করছেন।