নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে অক্টোবরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেদিক থেকে বিএনপি শিবিরে অনেকটাই নীরবতা। দলটি বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, সেনা মোতায়েনের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি।
তবে এসবকিছুর অন্তরালেও রাজনীতি আছে। সুস্পষ্টভাবে কিছু না বললেও অন্তরাল থেকে বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সম্প্রতি তৃণমূলের নেতাদের দেয়া মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই পরিকল্পনা সাজাচ্ছে ১০ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।
ঈদের কয়েকদিন আগে ৭৮ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের মতামত পর্যালোচনা করতে দুইদিন বৈঠক করেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। ওই বৈঠকে সাংগঠনিক জেলার ১৬০ নেতার বক্তব্য পর্যালোচনা করা হয়। যেখানে প্রায় সব নেতার বক্তব্যেই ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাব না এবং আন্দোলনের বিকল্প নেই’- এমন মত উঠে এসেছে। এই মতামতকে সামনে রেখেই আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করছে বিএনপি।
এ বিষয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে না। তবে শুরু থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে না- এধরনের কথা জোর গলায় বলে আসলেও সম্প্রতি সে জোর কিছুটা কমে এসেছে।
২০১৪ সালের মতো আর নির্বাচন বর্জনের পথে যাচ্ছে না বিএনপি। বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে এই বিষয়টি প্রায় স্পষ্ট। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী জানুয়ারিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দাবি আদায়ে আন্দোলনের কথা বলে গেলেও আগেরবার যেমন দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন হয়েছে, এবার তার কোনো নমুনা দেখা যাচ্ছে না।
কিন্তু আগের মতো আন্দোলন করছে না বিএনপি-এই বক্তব্য মানতে নারাজ দলটি। তাদের দাবি, আন্দোলন মানে জ্বালাও-পোড়াও নয়। দলীয় কারাবন্দী শীর্ষ নেত্রীর নির্দেশ আছে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন। তাই সকল প্রস্তুতি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নিতে যাচ্ছে বলছে বিএনপি নেতারা।
বিএনপির অনেক নেতা জানান, ২০১৩ সালে দাবি না মানলে ভোট বর্জন-এমন সরাসরি সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলন করলেও এবার দাবি পূরণ না হলেও ভোটে অংশ নেয়ার চিন্তা করতেই হচ্ছে। কেননা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন। এই আইন অনুযায়ী পরপর দুইবার ভোট বর্জনকারী দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে। তাছাড়া পরপর দুইবার নির্বাচনের বাইরে থাকলে একসময় মুসলিম লীগের অবস্থা দাঁড়ায় কিনা সেটা নিয়েও আছে শঙ্কা।
মূলত আন্দোলনের প্রস্তুতির পাশাপাশি দলের সাবেক ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও কাজ করছে দলটি। এ ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্ত ও নেতাকর্মীদের মতামত এবং স্থানীয় জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর ভিত্তিতে একটি সারসংক্ষেপও তৈরি করা হবে।
ইদানিং বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গুলশানে চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় মিলিত হচ্ছেন। বৈঠক করছেন, আলোাচনা করছেন। তবে এতে আগের মতো সংবাদকর্মীদের আমন্ত্রণ নেই।
সেই সব বৈঠকের সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। তবে তার আগে তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকার নিশ্চিত করতে চায়। এবিষয়ে তারা আন্দোলনের একটি ছকও কষছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমাদের লক্ষ্যের পথে আমরা আছি। আন্দোলনকে এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই। প্রতিটি আন্দোলনেরই একটি লক্ষ্য আছে। এখন সরকার সেই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া আমলে নেবে কি নেবে না, সেটা তাদের বিষয়।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আবারো একতরফা নির্বাচন জনগণ প্রতিহত করবে। শূন্য মাঠে আর খেলতে দেওয়া হবে না আওয়ামী লীগকে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ঠিক নির্বাচনের পূর্বে হবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবু যদি নির্বাচনের ঠিক আগে আগে তিনি মুক্তি পেয়েও যান সেক্ষেত্রে কিভাবে অল্প সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি- এমন প্রশ্নে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলটি বিএনপি। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।
‘নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিএনপি সবসময় প্রস্তুত। আলাদা করে প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না। আমি আগেও বলেছি, আমাদের প্রতিটি আসনের বিপরীতে ৩ থেকে ৪ জন করে প্রার্থী প্রস্তুত আছেন তারা যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য মাঠে নামতে পারেন।’
ফখরুল বলেন, বিএনপির জন্য জনগণ অপেক্ষায় আছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপির জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।