চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বিএনপির দাবির সত্যতা প্রমাণে মরিয়া আওয়ামী লীগ!

সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলার ডিসিদেরকে উড়ো চিঠি দিয়ে শাসানো হচ্ছে৷ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে; মাদারীপুর, বরগুনা, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাটের ডিসিদের চিঠি দিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে৷ চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিরপেক্ষ না করলে তার ও তার পরিবারের ভয়াবহ পরিণতি হবে৷ কেউ আবার অপেক্ষায় রয়েছে সেনাবাহিনী আগমনের৷ কেউ বলছে নির্বাচনকে ঘিরে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে৷ আবার কেউ ব্যস্ত রয়েছে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারকাজে বাধাদান নিয়ে৷ গণতন্ত্রকে গণতন্ত্রের মতো চলতে না দিলেই বিপদের ঘণ্টা দরোজায় কড়া নাড়ে৷ কিন্তু দুঃখের বিষয় হল সেটা বিপদে না পড়লে কেউ বুঝতে চায় না৷

কিছু অতি উৎসাহী প্রশাসনিক লোককেও প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সরকার দলের মার্কায় ভোট চাইতে দেখা যাচ্ছে৷ আবার বিএনপি একটি উচ্ছন্নে যাওয়া ব্যর্থ, অথর্ব ও বিশৃংখল দলে পরিণত হয়েছে৷ দলটির চেয়ারপার্সন জেলে৷ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরেকজন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি৷ দলটি ২০ দলেও আছে, ঐক্যফ্রন্টেও আছে৷ ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীর বিচার অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে৷ আবার ২০ দলের ইশতেহারে তা নেই৷ কেন নেই? যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত, নির্বাচন কমিশন যার নিবন্ধন বাতিল করেছে, সে দলটি সে জোটে আছে বলে?

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোট সরকারের ১০ বছরের শাসনামলের অনেক অর্জন রয়েছে৷ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীর বিচারসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দাবিদার এ সরকার৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উজ্জ্বল ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছে৷ এত অর্জনেও এই জোটের ১৫১ জন এমপি জয়লাভ করতে পারবে না এটা কি কোন যুক্তির কথা হলো? ক্ষমতায় যেতে হলে কি ৩০০ জন এমপিই লাগবে? তাহলে বিরোধী দল হবে কে? গণতন্ত্রে সরকারি দল ও বিরোধী দলের এমপির পার্থক্য কী?

নির্বাচনের প্রার্থীদের টার্গেট থাকা উচিত এমপি হওয়া, সরকার গঠন করা নয়৷ কেন, বিরোধী দলের এমপি হয়ে কি জনসেবা করা যায় না? দেশে কি অনেক বিএনপি নেতা মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে না? তারা তা পারলে সংসদ সদস্যরা পারবে না কেন? আর সুযোগ-সুবিধা ও বেতন-ভাতার প্রশ্নে বিরোধী দলের এমপিরা কি কম বেতন ভাতা পায়? তবে কেন কেউই বিরোধী দলের এমপি হতে চাইছে না? প্রতিবেশী দেশ ভারতে কংগ্রেস বিরোধী দল হয়ে কিভাবে বিজেপিকে মেনে নেয় আর বিজেপি বিরোধীদল হয়ে কিভাবে সরকার দল কংগ্রেসকে মেনে নেয় এটা কি আমাদের নেতানেত্রীরা দেখেন না?আওয়ামী লীগ-বিএনপি-নির্বাচন-বিএনপির দাবি

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার দল হয়৷ এতে কি বিএনপির বিজয়ী এমপিদের এমপিত্ব চলে গিয়েছিল? তারা কি এমপির বেতন ভাতা ও এমপির মর্যাদা পায়নি? তবে কেন তারা বিরোধী দলের ভূমিকায় থেকে সংসদকে ও গণতন্ত্রকে প্রাণবন্ত করে সরকার দলে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারলো না? কেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে সে সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে পরে আবার তাদের বলা অবৈধ সরকারের অধীনেই এবার নির্বাচনে যেতে রাজি হলো? এটা কি বিএনপির রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়?

আর আওয়ামী লীগ এমন কী ‘অপকর্ম’ করেছে যে তাদের মনে হচ্ছে জনগণ তাদের ভোট দেবে না? দেশের অনেক সংসদীয় এলাকায় বিএনপি প্রার্থীরা ভোট চাইতে ভোটারদের কাছে যেতে পারছে না৷ এলাকায় পোস্টার লাগাতে পারছে না৷ মাইকিং করতে পারছে না৷ চলছে গ্রেপ্তার৷ নেত্রকোনা-৪ মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুরী আসনে নৌকা মার্কা নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বঙ্গবন্ধু আমলের খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল মমিনের স্ত্রী রেবেকা মমিন আর অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বিএনপি আমলের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী৷ এই আসনে আওয়ামী লীগের কোন বিদ্রোহী প্রার্থীও নেই৷

তবু কেন মনে হচ্ছে বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণীর অবস্থান ভালো? বাবর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার দণ্ডিত আসামি বলে কি তার স্ত্রীর নির্বাচন করতে কোন আইনি বাধা আছে? নির্বাচন কমিশন কি তাকে আইনিভাবেই প্রার্থিতার স্বীকৃতি দেয়নি? তবে কোন আইনে ও কোন নৈতিকতায় তাকে ভোটারদের কাছে যেতে দেয়া হচ্ছে না?

শুধু কি বিএনপি? প্রচার কাজে বাধাদানের অভিযোগ করছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীরাও৷ মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় এলাকার মোহনগঞ্জে কোন ধানের শীষের পোস্টার নেই৷ পথসভা, হাটসভা, উঠানসভা, গণসংযোগ কিছুই নেই৷ বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলছে৷ খালিয়াজুরীতেও অনুরূপ অবস্থা বিরাজমান৷ প্রার্থীর নিজের এলাকা মদনে সামান্য পোস্টার দেখা গেলেও প্রার্থী অথবা প্রার্থীর পক্ষে কোন প্রকাশ্য প্রচারণা নেই৷আওয়ামী লীগ-বিএনপি-নির্বাচন-বিএনপির দাবি

লক্ষ্মীপুরের আলোচিত পৌর মেয়র তাহের আবারও আবির্ভূত হয়েছেন৷ তিনি নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে অসুবিধা আছে বলে শাসাচ্ছেন৷ একজন ওসি নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করল প্রশাসনিক নিরপেক্ষতাকে৷ হুমকি, গ্রেপ্তার ও আতংকবাজী কোন গণতান্ত্রিক রীতি হতে পারে না৷ গণতন্ত্রের রীতি হলো সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতা৷ অসহনশীলতা অসহনশীলতাই বৃদ্ধি করে৷ নির্বাচনী প্রচারণার অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে আওয়ামী লীগ তার ১০ বছরের অর্জনগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরলে ১৫১ জন এমপি জিততে পারবে না এমন কথা একেবারেই অবান্তর৷ ক্ষমতার জন্য দরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন অবশ্যই ৩০০ আসন নয়৷ তার প্রতিপক্ষ দল বিএনপি এতদিন রাজপথেই উঠতে পারেনি৷ নাম স্বর্বস্ব ছোট দল গণফোরাম, জাসদ (রব) ও নাগরিক ঐক্যের মাধ্যমে তারা রাজপথে উঠতে সক্ষম হয়৷

এমন একটি ভঙ্গুর দলকে কেন এত ভয় আওয়ামী লীগের? কেন হুমকি ধমকি আতঙ্ক সৃষ্টি করে নির্বাচনী স্বাভাবিক প্রতিযোগিতাকে নষ্ট করা হলো? হামলা, হুমকি ও আতঙ্কবাজীর সাথে জড়িতরা গণতন্ত্র ও নির্বাচনী নীতি নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে নিজেকেও হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ যে কোন পন্থায় জেতার নাম নির্বাচনী জেতা নয়৷ নির্বাচন হওয়া উচিত নির্বাচনী অবাধ প্রচারণার নীতি মেনে৷ প্রচার কাজে বাধা দান, প্রার্থীকে বেরোতে না দেয়া ও অনুসারীদের গ্রেপ্তার প্রভৃতি নির্বাচনে থাকা উচিত নয়৷আওয়ামী লীগ-বিএনপি-নির্বাচন-বিএনপির দাবি

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট ও ১৯৭০ এর নির্বাচনে যে নৌকার জাগরণ এসেছিল তার মূলে এমন ভীতি ও হুমকি ছিল না৷ বিএনপি ও ২০ দল নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি করছিল৷ তারা বলে আসছিল দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না৷ এসব কর্মকাণ্ড কি তাদের এ দাবিকেই প্রমাণিত সত্যে রূপ দিচ্ছে না? বিএনপির দাবির সত্যতা প্রমাণে কেন ব্যস্ত হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ?

যেসব এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় বাধাদান করা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের উচিত সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া৷ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তারা প্রচারণার অধিকার পেলে তা কি দলীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের একটি চরম ব্যর্থতার উদাহরণ হবে না?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)