তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো: মুরাদ হাসান ১৯৭৪ সালের ১০ অক্টোবর জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে এক ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার আর মাতা মনোয়ারা বেগম। তার পিতা ছিলেন একজন বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত আইনজীবী। তিনি রণাঙ্গনে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জামালপু-শেরপুর ও মুজিব নগর সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি ১৯৮৬-২০০৩ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি জামালপুর ল’ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, জাতীয় আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি এবং জামালপুর জেলা বার এর ছয় বার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। আর মুরাদ হাসান এর মহিয়সী মা ছিলেন স্বামীর রাজনৈতিক পরিক্রমার একনিষ্ঠ সহচর।
ডা. মো: মুরাদ হাসান শৈশবে জামালপুর শহরের কিশলয় আদর্শ বিদ্যা নিকেতনে তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপরে তিনি ১৯৯০ সালে জামালপুর জেলা স্কুল হতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ স্টার মার্ক পেয়ে এসএসসি পাশ করেন এবং ১৯৯২ সালে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে স্টার মার্ক পেয়ে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ২০০১ সালে ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হতে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস পাশ করেন। পরে তিনি ২০০৪-২০০৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্লাষ্টিক এন্ড রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারির উপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ট্রেনিং সম্পন্ন করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউ থেকে ২০১১ সালে রেডিয়েশন অনকোলজী’র উপর এম.ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ শাখার কার্যকরী সদস্য, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক, ২০০০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ শাখার সভাপতি, ২০০৩ সালে ৫ম কংগ্রেস এ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জামালপুর জেলা শাখার কার্যকরী সদস্য, ২০১৪ সালে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য, ২০১৫ সালে জামালপুর জেলার স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছেন।
তিনি ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে জামালপুর ৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদীয় আসন থেকে বিপুল ভোটে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে মহান জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দেশ সফর করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর ৪ সংসদীয় আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হন।
তিনি ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তারপর ১৯ মে ২০১৯ সাল থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ স্বাচিপ এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বিএমএ এর আজীবন সদস্য। এছাড়া তিনি জাতীয় ও সামাজিক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিয়মিত আলোচক হিসাবে টেলিভিশনে টকশো, বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাছাড়া, তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় ২০০১ সাল থেকে লক্ষাধিক দুঃস্থ অসুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ডা. মো: মুরাদ হাসান এমপি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসানও পেশায় একজন ডাক্তার।
সম্প্রতি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর জাহিদ নেওয়াজ খানের পরিকল্পনা, রাজু আলীমের প্রযোজনা এবং সোমা ইসলামের উপস্থানায় চ্যানেল আই টু দ্য পয়েন্ট অনুষ্ঠানে নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি।
প্রশ্ন: ৩০ পার্সন্টের নিচে ভোট পড়েছে ঢাকা সিটি নির্বাচনে। সরকারতো অনেক উন্নয়ন করেছে। তাহলে তো ভোটারদের ঝাপিয়ে পড়া উচিৎ ছিল? কেন ভোটার টার্ন আউট এতো কম হলো?
ডা. মো. মুরাদ হাসান: এই বিষয়টি খুব বড় করে দেখার অবকাশ কতোটা আছে তা হলো আমার প্রথম কথা। নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে কিনা- দ্যাট ইউ দ্যা ফার্স্ট কোয়েশ্চেন শুড বি আসকড? সেটা হলো- একটা ধুম্রজাল, একটা ঝড়ের মধ্যে এক ধরনের নির্বাচনী প্রহসনের মতো। আমাদের এই দলটি বিএনপি যেভাবে প্রচার এবং প্রপাগান্ডা চালিয়েছে সেটা হলো যে, নির্বাচনটি কোনভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। প্রথমেই যখন এই বিএনপি’র মতো একটা দলের প্রার্থী বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে শুরু করে যে, এই সরকারের অধীন কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। ভোটের কারচুপি হবে। আর সবচেয়ে বড় কারচুপি নাকি ইভিএম? এই যে হাস্যকর প্রপাগান্ডা প্রচার যার মধ্য দিয়ে ভোটারদেরকে নিরুৎসাহিত করার নীলনক্সা এবং ষড়যন্ত্র আর রাজনৈতিক যে অপকৌশলটি তারা এই নির্বাচনে প্রয়োগ করলেন আর ভোটার উপস্থিতি কমার যে আশঙ্কাজনক চিত্র আমরা দেখলাম তা খুবই দুঃখজনক। পাশাপাশি আমি বলবো- দুই দলই প্রচার প্রচারণার তুঙ্গে ছিলো । এতো প্রচার প্রচারণা আমরা ঢাকা শহরে যারা সাময়িকভাবে থাকি বা অস্থায়ীভাবে থাকি তারা বলবো যে, আমরা তো ঘুমাতে পারতাম না রাতে।
প্রশ্ন: অনেক বছর পরে এই রকম উৎসবমুখর নির্বাচন?
ডা. মো. মুরাদ হাসান: সব দলের অংশগ্রহণে এতো উৎসবমুখর নির্বাচন আমার মনে পড়ে না বিগত অনেক দিন আমরা দেখিনি। এইরকম উৎসবমুখর প্রচার প্রচারণা এবং প্রার্থীদের চারজনই খুবই তরুণ। আমরা খুবই আশাবাদী হই যারা তরুণ বা মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম আমরা খুব আশা নিয়ে এদেশের মানুষ এবং ঢাকার সবাই দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু এক প্রার্থী উন্নয়নের কথা বলে ভোট চায়। আরেক প্রার্থী বলে এই নির্বাচন কোনভাবেই স্বচ্ছ হবে না। আর বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হচ্ছে তাদের এই নির্বাচন। তাহলে তারা কোনটা চায় ভোটাররা এটা বুঝতে পারে না। তারা কি ভোট চায় নাকি বেগম জিয়ার মুক্তি চায়? বেগম জিয়ার মুক্তির সাথে নির্বাচনের কোন সম্পর্ক আছে তা জনগণ খুঁজে পায় না। কারণ বেগম জিয়া এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করে আদালতের রায়ে দণ্ডিত সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি। তার মুক্তির সাথে ভোটারের ভোট দেওয়ার সম্পর্ক কী? এটা মানুষ বোঝে না। তাদের মেনিফেস্টো কি তা তারা বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা কী করতে চায় এবং তাদের কি উন্নয়নের ইতিহাস আছে বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে চায়? শেষবার ২০০১-২০০৬ আল্লাহর রহমতে যে উন্নয়ন তারা করেছে আর দুর্নীতি ও লুটপাটে চ্যাম্পিয়ান পরপর পাঁচবার এইগুলো যদি বলতে থাকি। আমার মনে হয় জনগণ সব জানে এবং বোঝে। আমাদের জনগণকে হতাশ করেছে এবং তিন দিনের একটা বন্ধও পড়েছিল। এটা একটা কারণ বলে মনে হয়। আর ইভিএমের কথা এতো অপপ্রচার করেছে যে, এইখানে নাকি বিরাট কারচুপি হবে। ভোট আগেই ছিনতাই হয়ে যাবে সব। ইভিএমে যে ভোট কারচুপি হয় না তা বোঝাতে নির্বাচন কমিশনও তাদেরকে পারলো না। আমরাও পারলাম না। কেউ পারলাম না।
প্রশ্ন: বিএনপি বলছে ডিজিটাল কারচুপি হয়েছে?
ডা. মো. মুরাদ হাসান: বিএনপির কথাবার্তা শুনে মনে হয় জিতলে সব ঠিক হারলে সব কারচুপি। এই যে তাদের মানসিকতা- যখনই তারা ভোটে হারে তখন কারচুপি, স্থূল, সুক্ষ্ণ নানাবিধ শব্দ সংজ্ঞা ইংরেজি বাংলা মিলিয়ে বলে। ভোটে হারলে বিএনপি’র মাথা ঠিক থাকে না। যেমন, ভোটে হারার পরদিনই হরতাল। এটার মানে কী? আমরা জনগণ, সরকার, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি যে যতো দলই করুক এই দেশটা তো আমাদের সবার। হরতাল কার জন্যে দিলেন? ভোটে হারলেন আপনারা। হরতাল দিয়ে ভোগান্তি করছেন জনগণের। এই রাজনীতি মানুষ বোঝে। এখন ডিজিটাল কারচুপি ইভিএম বুঝি না। আবার ভোট করলে বলে যে, আগের রাতে সব ভোট ছিনতাই হয়ে গেছে। ব্যালট বাক্স ভরে গেছে। আসলে তারা হলো বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। আর এই নালিশ পার্টির কাজ হলো নালিশ করা। এখন তাদের একমাত্র সম্বল মিডিয়া।
তার মধ্যে আজকে একটা জিনিস প্রমাণ হলো- টু দ্য পয়েন্ট আজকের অনুষ্ঠানে যে, বিএনপির দুইটা মুখপাত্র আছে বাংলাদেশে। একটা হলো ডেইলি স্টার আরেকটা হলো প্রথম আলো। আজকে অফিসিয়ালি তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে ধরে নিতে পারি যে, এই দুইটি পেপার বিএনপির মুখপাত্রের ভুমিকা পালন করছে। তাদের বিস্তারিত অভিযোগগুলো আমি প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের সকল রিপোর্ট ইনশাল্লাহ যাচাই বাছাই করে ঠিক মতো দেখবো। আর কয়টার সময়ে কতো ভোটার ছিল তা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। আমাদের দুভার্গ্য যে, চ্যানেল আই সারাদিন ধরে যে নিউজ করলো তাদের নামটাও বলে না বিএনপি। বাংলাদেশে এখন ৩৫টি চ্যানেল চলে। ৩ হাজারের উপরে সংবাদপত্র আছে। কিন্তু তারা দুইটার মধ্যে গিয়ে ঠেকে যায়। তাই আমার দুঃখটা হলো- এই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে চর্চা অবাধ সংবাদ প্রবাহ গণমাধ্যম যে অবাধ নিরপেক্ষ এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার যে ভুমিকা তাতে কোথায় কে বাধা দিলো? সারা বাংলাদেশ নির্বাচন দেখলো আর তারা খুঁজে খুঁজে ডিজিটাল কারচুপি পেলো। এই যে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা। আর কী করলে ভাল হবে? সাধারণভাবে নির্বাচন করলে- ব্যালট বাক্স রাতে ভরি। ইভিএমে ভোট দিলে কোনভাবে কারচুপি করার কোন সুযোগ নাই। চিফ ইলেকশন কমিশনার নিজেই ঠিকমতো ভোট দিতে পারেননি। আর তারা বলছে এটা ডিজিটাল ঘোষ্ট ইলেকশন হয়েছে। কতো রকম শব্দ যে আমরা আর নতুন নতুন শুনবো? এর শেষ আর খুঁজে পাচ্ছি না।
প্রশ্ন: ব্যালট এবং মানুষের উপরে আস্থা হারিয়ে গেছে বলেই কি আপনারা মেশিনে চলে গিয়েছেন? এটা বিএনপির অভিযোগ।
ডা. মো. মুরাদ হাসান: প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম মাটি এবং মানুষ থেকে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে কোন সেনাবাহিনীর জেনারেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সারা জীবনের উত্তাপ, দর্শন, চেতনা এবং আদর্শ নিয়ে গড়া সংগঠন। মানুষের সংগঠন। বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানুষের সমর্থনের ইতিহাস। এই দেশ সৃষ্টি সাড়ে সাত কোটি বাঙালির। তাদের ম্যান্ডেট নিয়ে এই দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস রচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু।
আমি একটা কথা বলতে চাই। এই যে টকশোগুলোতে এসে তাদের নেতারা এতো সুন্দর করে কথা বলেন আর মাঠে যখন আমরা দেখি- আরে বাপরে! প্রচারণার সময় মনে হলো যে, ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে। বিএনপি এবার নির্বাচন করবে মানে মাটি কাঁপিয়ে ফেলবে। কেন্দ্র ছাড়বে না। এজেন্টের যে কথা তা তো প্রশ্নই আসে না। জীবন দিয়ে দেবে তারা। কিন্তু ভোট নিয়ে কোন কারচুপি এই বাংলার মাটিতে তারা আর হতে দেবে না। আমরা খুব আশান্বিত হলাম যে, যাক আগেই রণে ভঙ্গ দেবে না। আগে যেমন সকাল ১১ টার মধ্যে রণে ভঙ্গ দিতো। লাষ্ট নির্বাচনগুলোতে তাই করছে। শেষ সিটি কর্পোরেশনে একেবারে ঢাক ঢোল পিটিয়ে দেখেছি তাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতারা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মওদুদ আহমেদ থেকে শুরু করে একই চেহারা বারবার আমরা দেখেছি। এই সেম চেহারার মানুষদের একটা মাত্র জায়গায় এসে তাদের রাজনীতি ঠেকেছে। মানুষের শেষ পর্যায়ে এসে এমনটাই হয়। নির্বাচন হলো এক তারিখে।
আপনি একটু দয়া করে খেয়াল করে দেখেন- ৩০, ৩১ তারিখ এই দুইদিন এদের নেতারা কোথায় ছিলেন? ভোটের দিন তাদের এই মহান নেতারা যারা এতো বড় বড় লেকচার দিলেন কোথায় ছিলেন তারা ভোটের দিন? তাদের নেতাদের চরিত্র কী? আমরা আসলে বুঝি না। বেগম জিয়াকে নিয়ে এতো কথা বলে এতো বড় বড় ব্যারিস্টার। কেন মুক্তির জন্যে তারা আইনি লড়াইয়ে জিততে না পেরে রাজপথ বেছে নেয় কেন? এটা যেমন একটা প্রশ্ন সারা বাংলার মানুষের কাছে। একইভাবে নির্বাচন নিয়ে এতো কথা, এতো নাটক, এতো অভিনয়! আরে বাপরে বাপ! যে হুংকার মনে হলো বাংলাদেশে এবার বিএনপি একেবারে উড়ায়ে ফেলবে। কিসের আওয়ামী লীগ, কিসের সরকার, কিসের নির্বাচন কমিশন? কোন কিছু তাদেরকে ঠেকাতে পারবে না। কিন্তু ভোটের দুইদিন আগে থেকে তারা আর নাই মাঠে। একটা নেতার চেহারা আমরা দেখলাম না ভোটের দিন। আপনি দেখতে পেয়েছেন কিনা আমরা জানি না? আসলে উনারা নির্বাচন করেন না। উনাদের এটা হলো প্রহসন। নির্বাচনে আমরা আছি। গলাবাজি, অনেক বক্তব্য, প্রহসন হবে, কারচুপি হবে কিন্তু ভোটের দিন তাদের মাঠে কেউ নাই। শুধু তাদের প্রার্থীরা পাগলের মত ঘুরতেছে। আপনি দেখছেন না? মায়া লাগছে দুইটা বাচ্চা ছেলের জন্যে।
প্রশ্ন: কেন?
ডা. মো. মুরাদ হাসান: প্রার্থীদের অবস্থা কী? এই যে, মই দিয়ে উপরে চাঙ্গে তুলে মইটা যখন আস্তে করে টান দেয় ওই প্রার্থীর তখন কি অবস্থা হয়? আমরা নির্বাচন করি তো। নির্বাচনের দিন প্রার্থীর অবস্থা কী থাকে আমরা জানি। আমরা নির্বাচন করে ভোট নিয়ে এখানে বসে কথা বলছি। ভোটের দিন প্রার্থীর যে ভয়ঙ্কর টেনশন থাকে। কি যে পেইন লোড থাকে ভার থাকে মাথার উপরে তা আমরা জানি।
প্রশ্ন: বিএনপির দুই প্রার্থী কি অসহায় হয়ে পড়েছিলেন?
ডা. মো. মুরাদ হাসান: একদম অসহায় হয়ে পড়েন। ভোটের দিন তাদের চেহারাটা দেখেন না। আগের দিন কতো সুন্দর। ভোটের দিন মনে হলো তাবিথ আউয়াল সাহেব আর দাঁড়ি কাটার সময় পান নাই।
প্রশ্ন: টেনশনে?
ডা. মো. মুরাদ হাসান: না। ওনার দোষ নাই। তিনি হার্ট এন্ড সোল চেষ্টা করেছেন। আই শুড সে। ইশরাকও হার্ট এন্ড সোল ট্রাই করেছে। তাদের নেতাকর্মীদেরও তো ভালই দেখলাম মাঠে। এরপরে দেখি নেতাকর্মীরা কক্সবাজারে ফূর্তি করছে। মানে উনাদের যে এজেন্টগুলো দিছে তারা সব কক্সবাজারে চলে গেছে। এই যে কক্সবাজারে যাওয়া পিকনিক করা এজেন্টদের দিয়ে নির্বাচন করবেন ওনারা। আর ওই যে কিছু সাজানো পেপার প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার। আর কিন্তু কোন নাম তারা বলতে পারছেন না। এই হলো সম্বল তাদের মাত্র দুইটা পেপার। বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে বিশেষ কোন ব্যবস্থা করতে হবে। বিএনপিকে পালকিতে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে হবে। মানে বেগম জিয়াকে পালকিতে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া আর কি!
প্রশ্ন: সেই দায়িত্ব কি তাহলে সরকার নেবে?
ডা. মো. মুরাদ হাসান: না-না-না। তারা বলে, ডিজিটাল ঘোস্ট- এই রকম ডিজিটাল পালকি নাই? পালকিতে তুলে ঘোড়ায় চড়ে মর্দ সিংহাসনে বসিল। বেগম জিয়াকে পালকিতে তুলে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে দিতে হবে। তাহলে বিএনপির আত্মা শান্তি পাবে। অন্য কোনভাবে তাদের ক্ষমতায় আনা সম্ভব নয়।