চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বাসায় ঢুকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্টি ডা. সারওয়ারকে চাপাতি দিয়ে হত্যার চেষ্টা

ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীকে বাসায় ঢুকে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরিবারের লোকজন চিৎকার দিলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, ডা. সারওয়ার এখন সুস্থ রয়েছেন।

গত রোববার রাতে তার উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বাসায় ওই ঘটনা ঘটে। এর আগে একই ভবনে তার মেয়ের ফ্ল্যাটে ঢুকে দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাকে খুঁজতে থাকে।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গত রাতে তিনি ওই ঘটনায় উত্তরা-পশ্চিম থানায় মামলা করেছেন।

ওই রাতেই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’-এ ফোন পেয়ে পুলিশ তার বাসায় যায়। তল্লাশি চালিয়ে বাড়ির নিচতলায় গাড়ির গ্যারেজে দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া একটি ব্যাগ থেকে সাতটি নতুন চাপাতি, বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার একটি যন্ত্র, রশি, একটি আইপ্যাড ও ভিডিও ক্যামেরার স্ট্যান্ড উদ্ধার করে।

দুর্বৃত্তরা সারওয়ার আলীর স্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মাখদুমা নার্গিস, তাদের মেয়ে সায়মা আলী, জামাতা হুমায়ুন কবিরকেও হত্যার চেষ্টা চালায়। তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা দুই প্রতিবেশীকেও ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় সোমবার দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত-পরিচয়ের চার–পাঁচজনকে আসামি করে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন সারওয়ার আলী।

পুলিশ বলছে, পুরো ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাড়ির দারোয়ান হাসানকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় সারওয়ার আলী বাদী হয়ে বাড়ির দারোয়ান হাসান, তাদের সাবেক গাড়িচালক নাজমুলসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জানা যায়, গত রোববার রাতে অজ্ঞাতপরিচয়ের দুই দুর্বৃত্ত উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে ডা. সারওয়ার আলীর বাড়িতে ঢোকে। তারা ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় গিয়ে তার মেয়ে সায়মা আলীর বাসার দরজায় ধাক্কা দেয়। দরজা খুলে দেওয়া হলে দুর্বৃত্তরা ভেতরে গিয়ে সারওয়ার আলীর মেয়ে ও জামাতাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালায়।

পরে বাড়ির চতুর্থ তলায় গিয়ে সারওয়ার আলী ও তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের চিৎকারে ওই ভবনের এক বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ সময় প্রতিবেশীদের ওপরও ঝাপিয়ে পড়ে তারা।

সারওয়ার আলী বলেন, দরজা খুলতেই ছুরি হাতে দুর্বৃত্তরা আমাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। আমার স্ত্রী এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালায় তারা। তখন তিনতলা থেকে আমার মেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন করে। তারা বাঁচার জন্য চিৎকার করে। এরই মধ্যে দোতলার ভাড়াটে শাহাবুদ্দিন চাকলাদার ও তার ছেলে মোবাশ্বের চাকলাদার এগিয়ে আসেন। এরপর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ফোন করার মিনিট-চারেকের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। আমরা সন্দেহ করছি, ভবনের দারোয়ান হাসানের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।

ডা. সারওয়ার আলী বলেন, অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা বাসায় তছনছ করেনি। কোনো স্বর্ণালঙ্কারও নেয়নি বা চায়নি। তৃতীয় তলায় তাকে খুঁজছিল। না পেয়ে চতুর্থ তলায় আসে। তিনি ধারণা করছেন, কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী তাকে হত্যার জন্য এসেছিল। কিন্তু বাসার সদস্য এবং ভাড়াটেদের তৎপরতার কারণে তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। বিষয়টি তিনি কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকেও জানিয়েছেন।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, দুর্বৃত্তদের একজন সারওয়ার আলীর পুরোনো গাড়িচালক পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকেছিল। ওই ঘটনায় বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দুর্বৃত্তদের শনাক্তে তদন্তও শুরু হয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বাড়িটিতে সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা অকেজো ছিল। বাড়িটিতে কেউ ঢুকলে পরিচয় নথিভুক্ত করা হতো না। সম্ভবত নিরাপত্তাকর্মী ওই দুর্বৃত্তদের চিনতে পারে। সে তাদের বাড়িতে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। এজন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুরো বিষয়টিই তদন্ত চলছে।