চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বার্সেলোনার ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে?

সময়ের সাথে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার ডাক যত জোরাল হয়েছে, প্রশ্নটিও জোরাল হয়েছে সমানতালে- প্রদেশটি স্বাধীনতার চূড়ান্ত ধাপে পা বাড়ালে কী ঘটবে লা লিগার দল বার্সেলোনার ভাগ্যে? মেসি-রোনালদোদের এল ক্লাসিকো কি আর দেখা যাবে না? শুক্রবার কাতালোনিয়া যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই বসল, তখন প্রশ্নটি আরও বেশি করেই অনিশ্চিত উত্তরের পথে হেঁটেছে, বার্সাকে তবে কি লা লিগা থেকে বেরিয়ে যেতে হচ্ছে?

স্প্যানিশ গণমাধ্যমগুলোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী আপাতত প্রশ্নটির উত্তর- না! দেশটির ফুটবল সংবাদের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম মার্কা সেটা স্পষ্টভাবেই বলছে। কেবল বার্সা নয়, এস্পানিওল ও জিরোনার মত সুপরিচিত ক্লাবগুলোকেও আপাতত লা লিগা থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে না বলে তাদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে সেটি এই প্রশ্নের সমাধান টানছে না যে, ভবিষ্যতে মেসি-পিকেদের লা লিগা বিচ্ছেদ হচ্ছে না।

ভবিষ্যৎ আপাতত তোলা থাক। চলতি লা লিগাতেই মাত্র নয় রাউন্ড খেলা হয়েছে। এখনো ২৯টি ম্যাচ সামনে পড়ে আছে। তাতে লিগ টেবিলের শীর্ষ দলটির নাম বার্সেলোনা। তারা সামনের ম্যাচ খেলবে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে। লিগের আরেক জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদকে পরের রাউন্ড খেলতে হবে জিরোনার মাঠে এসে। জিরোনা দলটি কাতালোনিয়ার। এসবের মাঝে স্প্যানিশ কাপ, কোপা ডেল রের কথা তো থাকছেই। থাকছে উয়েফা সেরার লড়াই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ভাগ্য নিয়ে আলোচনাও। বার্সা তো স্প্যানিশ লিগের তিন দলের একটি হয়েই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রতিনিধিত্ব করছে।

স্পেন থেকে সরে এসে নিজস্ব মানচিত্র আঁকার স্বপ্ন বুনে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে কাতালোনিয়া তাহলে কোন পথে ঠেলল ইউরোপের শীর্ষ দলের একটি বার্সাকে? বার্সা বা লা লিগা নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি যখন এভাবে ঘোলাটে হচ্ছে, তখন কাতালানদের আঞ্চলিক ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি আন্দ্রেউ সুবিয়েজ এগিয়ে এসেছেন আশ্বস্ত করতে।

স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি পেলেও লা লিগায় বার্সেলোনার অবস্থান কোন শঙ্কার মুখে পড়বে না বলেই জানাচ্ছেন সুবিয়েজ, ‘লা লিগা থেকে বার্সার বেরিয়ে আসার মত ঘটনা ঘটতে পারে না। এটা ফুটবল, রাজনীতি না। কোন কিছুই পাল্টাবে না।’

স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের পরিচালনা পর্ষদের পদ থেকে সুবিয়েজ সরে এসেছিলেন অবশ্য কাতালোনিয়া প্রশ্নেই। এসে কাতালানদের ফুটবল ফেডারেশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। কাতালোনিয়া স্পেনের সঙ্গে থাকা অবস্থাতেই তাকে যখন সরে আসতে হয়েছে, স্বাধীনতার পর পরিস্থিতি তো সরে আসতে বাধ্য হওয়ার মতই হবে। তাই তিনি মুখে জোর দিয়ে বার্সার ভাগ্য বলে দিলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ তার বিপক্ষ মতও সামনে আনছে।

স্পেন ও কাতালোনিয়া যখন মুখোমুখি, তখন দুটি ফুটবল ফেডারেশনের মুখোমুখি অবস্থানও অযৌক্তিক কল্পনা নয়। জেরার্ড পিকের মত স্বাধীনতার প্রশ্নে সুউচ্চ কণ্ঠস্বর ফুটবলারকে স্পেন দল নিশ্চয় ফুলেরতোড়া নিয়ে স্বাগতম জানাতে বসে থাকবে না। নিকট ভবিষ্যতে হোক, আর অদূর ভবিষ্যতে; বার্সেলোনার ভাগ্যও নতুন করে লিখতে হতে পারে যেকোনো সময়।

সুবিয়েজ সেটা ভাল করেই বুঝছেন। মার্কার এক প্রশ্নে তাই এটিও বলে রাখলেন, ‘অন্তত চলতি মৌসুমে তেমন কিছু ঘটছে না। সামনে প্রয়োজন হলে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা হবে। প্রয়োজনে নতুন আইনও হতে পারে।’

সামনে তো নয়ই, অন্তত ছয় মাসে বার্সার ভাগ্য নতুন করে লেখার কোনও সুযোগ নেই বলে জানাচ্ছে স্প্যানিশ গণমাধ্যমগুলো। লা লিগা থেকে বার্সাকে তাড়াতে হলেও সেটা লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এগিয়ে নিতে হবে। তখন উঠে আসবে ফিফার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার বিষয়টিও। সেটি একটা সিদ্ধান্ত আসতে পরবর্তী ছয় বছরও লেগে যেতে পারে। পরের ছয় মাসে তো নয়ই।

এমন অবস্থায় স্বাধীনতার প্রশ্নে ক্লাব বার্সা সরাসরি কোন মন্তব্য করতে যাচ্ছে না। ক্লাবটি কেবল বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পরের রাউন্ডে খেলার দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে। এবং অ্যাথলেটিকের মাঠ থেকে জিতে ফিরতে প্রত্যয়ী।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী তাই বার্সাকে ঘিরে জমে ওঠা শঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হতে থাকলেও আপাতত অথৈ-সাগরে পড়ার মত অবস্থা তৈরি হয়নি। তবে স্প্যানিশ আইন বলছে, অ্যান্ডোরা ছাড়া অন্য কোন দেশের স্পেনের লিগে যুক্ত হয়ে খেলার অনুমতি নেই। ছয় মাস বা ছয় বছর, বার্সা ভাগ্যকে তাই ঝুলে থাকা পেন্ডুলামের সঙ্গে ছাড়া অন্যকিছুর সঙ্গেও তুলনা করা যাচ্ছে না।