২০১০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়েছিলেন, কারণ ফিটনেস মোটেও ক্রিকেটারের মতো ছিল না। হতাশায় ক্রিকেটার হওয়ার রাস্তা থেকেই সরে দাঁড়ালেন। ক্ষোভে কিছুদিন মাঠমুখো হননি। কিন্তু ট্রেনিংটা মনের কোণে জমিয়ে রেখেছিলেন ঠিকই। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ইরফান শুক্কুরের কব্জিতে জমা সেই ট্রেনিংয়ের সঙ্গে যোগ হয় জেদ, ইচ্ছাশক্তি ও সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবালের অনুপ্রেরণা। সাথে উপযুক্ত সমর্থন পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে ইরফান এখন অপেক্ষায় জাতীয় দলের দুয়ার খোলার।
ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ ইরফান শুক্কুর। নতুন করে জাত চিনিয়েছেন গত অক্টোবরে হয়ে যাওয়া বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে। করোনা মহামারীর পর খেলতে নেমে জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটাররা যেখানে ধুঁকেছেন, সেখানে নির্বাচকদের সামনে সামর্থ্যের জানা ভালোভাবেই দিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
ইরফান মূলত টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। কিন্তু প্রেসিডেন্টস কাপে নাজমুল একাদশের হয়ে খেলেছেন লোয়ার অর্ডারে (সাত নম্বরে)। তাতেও নিজের ব্যাটিং বৈচিত্র্যের কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন হাড়েহাড়ে। মিরপুরের ঘাসের উইকেটে যেখানে খাবি খেয়েছেন অন্যরা, একই উইকেটে পাঁচ ম্যাচে এক সেঞ্চুরি আর দুই হাফ-সেঞ্চুরিতে তুলেছেন ২১৪ রান। যা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২১৯ নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন একই দলের মুশফিকুর রহিম, আর সেরা ব্যাটসম্যান হয়েছেন ইরফান। দুজনের বাইরে দুইশ পেরোতে পারেননি আর কেউ।
তারকা ব্যাটসম্যানদের নিষ্প্রভতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ারকে আন্তর্জাতিক মুখী করার মঞ্চ গড়েছেন ইরফান। অথচ একটা সময় ক্রিকেটই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দল বাদ পড়ে যাওয়ার হতাশায়। চ্যানেল আই অনলাইনের জন্য জাওয়াদ হোসাইনের সঙ্গে আলাপে সেসব গল্পই শুনিয়েছেন তিনি।
‘যখন বিশ্বকাপ খেলতে পারিনি, একটা বড় দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পুরোপুরি রাস্তা থেকে সরে গিয়েছিলাম। পরে নাফিস ভাইয়ের (নাফিস ইকবাল) সুবাদে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সুযোগ পাই। এরপর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেললাম। বোর্ড আমাকে এইচপি ক্যাম্পে সুযোগ করে দিলো।’
১৫ বছর ধরে পেশাদার ক্রিকেট খেলছেন ইরফান। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যখন আস্তে আস্তে খেলাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবেন বলে ভেবেছেন, তখনই ফিটনেসের কারণে বাদ পড়েন যুব বিশ্বকাপের দল থেকে। ২০১৭ সালে আবার হানা দেয় চোট, বাইরে থাকতে হয় ৮ মাসের মতো। তখন থেকে চেপে বসে জেদ, ফিটনেসের চ্যালেঞ্জ করতে হবে জয়!
‘বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ার কারণ ছিল ফিটনেস নিয়ে তেমন সচেতন ছিলাম না। অতটা ফিট প্লেয়ারও ছিলাম না। তারপর থেকেই একটা জেদ কাজ করেছে যে, ফিটনেস নিয়ে কাজ করবো।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ হলেও গতানুগতিক শট সিলেকশন আর ৭০-৮০ স্ট্রাইকরেটে আটকে ছিল ইরফানের ক্রিকেট। লিটন দাসের এক পরামর্শে গত দুবছর ধরে শটে বৈচিত্র্য এনেছেন, বাড়িয়েছেন স্ট্রাইকরেটও।
‘মোহামেডানে আমার ওপেনিং পার্টনার ছিল লিটন দাশ। আমাকে বললো ভাই, আপনার ডিকশনারিতে যেন শট আরেকটু বৈচিত্র্যপূর্ণ হলে ভালো হয়। তাহলে স্ট্রাইকরেট একটু বাড়বে। আমারও মাথায় ছিল স্টাইকরেট বাড়াতে। তাই দুবছর এ নিয়ে কাজ করেছি। বিপিএলে তার প্রয়োগ করেছি।’
অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা অনেক সতীর্থ এখন জাতীয় দলে খেলছেন। বিশেষ করে সৌম্য সরকার তো জাতীয় দলের অন্যতম মারকুটে ব্যাটসম্যান। তাদের সাফল্য ইরফানের মুখে হাসি ফোটালেও ইরফান আক্ষেপে পোড়েন নিজেকে নিয়ে। সেই আক্ষেপ নিয়েই নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রস্তুত করে চলেছেন। যাতে সুযোগ পেলে ফের দশ বছর আগের কষ্টে পুড়তে না হয়!