বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া অনৈতিক: সিপিডি
স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো করোনার সাথে সম্পর্কিত খাতগুলো অগ্রাধিকার পায়নি
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া অনৈতিক ও অলাভজনক। এই সুযোগ দিয়ে সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
এছাড়া সিপিডি মনে করে, বিদ্যামান করোনাভাইরাস সমস্যা মোকাবিলায় বাজেটে যে ধরনের কাঠামো থাকা দরকার ছিল, বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে শুক্রবার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেছে সিপিডি।
সিপিডির বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন: প্রতিবছর কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয় এবং একটা ডিসকাউন্ট রেটে। ১০ শতাংশ কর দিয়েই কালো টাকা সাদা করা যায়। কোভিড-১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে আরও কালো টাকা কীভাবে সিস্টেমের মধ্যে আসে, সেজন্য আরও কিছু খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে কালো টাকাকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন: তাদের প্রতি সুবিবেচিত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। কারণ যারা সৎ করদাতা তারা প্রচলিত হারে কর দিয়ে আসছেন। কিন্তু যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন বছরের পর বছর, তারা এই সুযোগে শুধুমাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকাটা সাদা করে ফেলতে পারছেন।
ফাহমিদা খাতুন বলেন: এই ধরনের সুবিধা দিয়ে আসলে কোনো লাভ হয় না। স্বাধীনতার পর প্রায় প্রতিবছর কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে কোনো লাভ হয়নি। প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার মতো এসেছে। যেটা খুবই নগণ্য।
কালো টাকার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন: ঘোষণা দেয়ার পরও যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া হয় এবং একটি ম্যাসিভ ড্রাইভ না দেয়া হয়, তাহলে ঘোষণা দেয়ার পরও কেউ কালো টাকা সাদা করবে না। কারণ এটা সহজাত বিষয়। তারা যদি এতদিন কর ফাঁকি দিয়ে আসতে পারে, তাহলে কেন আবার ঘোষণা দিয়ে কর জালের মধ্যে আসবে? এটার জন্য আসলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
সিপিডি বলছে: বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো কোভিডের সাথে সম্পর্কিত খাতগুলো অগ্রাধিকার পায়নি।
প্রতিষ্ঠানটির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন: কোভিড-১৯ নিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক, মানবিক এবং অর্থনীতি খাতে যে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বাজেটে তা মোকাবেলায় সে ধরনের কোনো সামাজিক কাঠামো নেই।
তিনি বলেন: চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং কমিশন গঠন, দুদককে শক্তিশালী করা, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, প্রবাসী ও সরকারী কর্মচারী এবং শস্য ও পবাদিপশু বীমার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। আগামী বাজেটেও এইসব বিষয়ে সংস্কারের কোনো জোরালো বক্তব্য নেই।
এছাড়া করোনার কারণে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে তা আরও বাড়ানোর দরকার ছিল বলে মনে করেন তিনি।