সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের রেশ কাটতে না কাটতেই একই জেলার কয়ায় ভাঙচুর করা হলো স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে বাঘা যতীনের ভাস্কর্য। এই জঘন্য অপতৎপরতাকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান নিয়ে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার বিক্ষুব্ধ নাগরিকরা।
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্যকে লালন করা এই নাগরিকরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রগতিশীলতাকে নস্যাৎ করতে উদ্যত অপশক্তিকে এখনই প্রতিহত করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। এই কর্মসূচির প্রতি নিজেদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।
প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বাঙালীর সংগ্রামের ইতিহাস আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে মেলে ধরে। স্বাধীন জাতি হিসেবে আজ আমরা যে গর্ব করতে পারি তা এই ইতিহাসকে ধারণ করেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছরের প্রাক্কালে যে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান আমরা লক্ষ করছি তা কেবল উদ্বেগজনকই নয়; এই অপশক্তির দৌরাত্ম্য স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।’
বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমন স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতীক তেমনি বিপ্লবী বাঘা যতীন ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের এক কিংবদন্তির নাম। এই দুই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার অপচেষ্টা একাধারে ঘৃণিত ও কাপুরোষোচিত কাজ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মূর্তপ্রতীক এসব ভাষ্কর্যের সুরক্ষায় সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সঙ্গে দুষ্কৃতিকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া নাগরিকরা। একই সঙ্গে তারা জনমনে ভাস্কর্যের প্রতি বিরূপ ধারণা জন্ম দেওয়ার চলমান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধেও দেশের সাধারণ জনগণকে সজাগ হওয়ার আহ্বান জানান। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও এই অঞ্চলের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ধারণ করে সকল অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বতস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার তাগিদ দেন তারা।
নিউজপোর্টাল বহুমাত্রিক.কম এর প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মসুচিতে বক্তব্য রাখেন-বিশিষ্ট চিকিৎসক সুব্রত ঘোষ, লেখক ও সমাজকর্মী সাজিদ হাসান কামাল, ইতিহাসকর্মী জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি, সঞ্জীবন যুব সংস্থার সভাপতি ফাহিম আহমেদ মণ্ডল, সমাজকর্মী ফারজানা আফরোজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল আহাদ নাফিসসহ অন্যরা।
একের পর এক ভাস্কর্য ভাঙচুর ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আগ্রাসন বিরোধী এই প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচির প্রতি নিজেদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে সংহতি জানিয়েছেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্য আমির হোসেন আমু, এমপি।
সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, নেতাজি বিশেষজ্ঞ ও আলিপুর বার্তার সম্পাদক ড. জয়ন্ত চৌধুরী, চলচ্চিত্র পরিচালক দীপংকর সেনগুপ্ত দীপন, অনলাইন নিউজপোর্টাল ভিনিউজের সম্পাদক জয়ন্ত আচার্য প্রমূখ।