স্নায়ুক্ষয়ী ফাইনাল। উত্তেজনা থাকাই স্বাভাবিক। সেটির মাত্রা ছাড়ালে কীর্তিতে খানিকটা কালিমা লাগে বৈকি! অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে বাংলাদেশ-ভারতের দুই অধিনায়ককেই যেমন একই কাদা সরাতে হচ্ছে দলের গা থেকে। যাকে ভারত অধিনায়ক বললেন ‘নোংরা’, বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন ‘দুঃখিত’!
ক্রিকেট ইতিহাসে চিরন্তন দ্বৈরথ বলতে সবাই ভারত-পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়াই বুঝত। যুগে যুগে কত ইতিহাস জন্ম দিয়েছে দুদলের লড়াই। সময় পাল্টেছে। ভারত-পাকিস্তান লড়াই তেজ হারিয়েছে। ভারতের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজের জায়গাটা এখন নিয়েছে বাংলাদেশ। পচেফস্ট্রুমের ফাইনালেও যার দেখা মিলেছে।
রোববার ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল উত্তেজনা। ভারতীয় ওপেনার দিব্যনাশ সাক্সেনার দিকে বল ছুঁড়ে আগুন জ্বালিয়েছিলেন বাংলাদেশি পেসার সাকিব। পরে দুজনের উত্তপ্ত আলাপে শেষপর্যন্ত এগিয়ে আসতে হয়েছে আম্পায়ারকে। তারপর যতবারই আউট হয়েছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা, ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বাংলাদেশের বোলার ও ফিল্ডাররা বুঝিয়ে দিয়েছেন চুপ থাকতে হচ্ছে।
ভারতীয় খেলোয়াড়রা কী চুপ করে ছিলেন? একদমই না! বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় ক্রমান্বয়ে স্লেজিং করে গেছেন তারা। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যখন ব্যাট করছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন, তার দিকে অখেলোয়াড়সুলভ কথা ছুঁড়ে দিতে দেখা গেছে ভারতের লেগস্পিনার রবি বিষ্ণোইকে। টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দলটির যুবাদের ক্রমাগত উত্তেজক-আস্ফালন।
এমন উত্তেজনার ম্যাচ ম্যাড়ম্যাড়ে ভাবে শেষ হলে বোধহয় মানাত না! সেটা দেখেই হয়ত জেতার মুহূর্তে ভারতের খেলোয়াড়দের সঙ্গে খানিকটা চোখেচোখ রেখে ফিরিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের যুবারা। একটা পর্যায়ে কিছুটা ধাক্কাধাক্কিও করেছে দুদল। দোষটা জয়ী দল বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ঘাড়েই আসছে বেশি। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ থেকে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন, সবখানেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হল আকবরকে। টাইগার অধিনায়ক, দুঃখ প্রকাশও করেছেন।
‘যা হয়েছে, তা হওয়া উচিত হয়নি। তবে ফাইনালে আবেগ চলে আসবেই। ছেলেরাও একটু বেশি আবেগি ছিল। তরুণ হিসেবে বলবো, এটা হওয়া উচিত হয়নি। যে অবস্থাতেই থাকি না কেনো, প্রতিপক্ষকে আমাদের সম্মান জানানো উচিত, খেলার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা উচিত। সবাই জানে ক্রিকেট হল ভদ্রলোকের খেলা। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে দুঃখিত।’
ভারত অধিনায়ক প্রিয়ম গার্গ অবশ্য বিষয়টাকে সরাসরি লজ্জাকরই বলেছেন, ‘আমরা স্বাভাবিকই ছিলাম। আমরা জানি এটা খেলারই অংশ। কোনো ম্যাচে জিতবো, কোনো ম্যাচে হারবো। তবে তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল নোংরা। আমি বলবো এটা হওয়া উচিত হয়নি। তবে এখন সব ঠিক আছে।’
কেন এত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ম্যাচে? ভারতের বিপক্ষে কী কোন প্রতিশোধ নেয়ার কিছু ছিল বাংলাদেশের? উত্তরটা হচ্ছে, হ্যাঁ। আকবর নিজেই স্বীকার করেছেন ২০১৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হারের ক্ষোভটা ঝাড়তে গিয়েই হয়ত তৈরি হয়েছে বাড়তি উত্তেজনা। এছাড়া বড়দের ক্রিকেটে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টারে, ২০১৬ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ১ রানে হার, এশিয়া কাপ ও নিধাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের কাছে হারের একটা জ্বালা এমনই সংক্রমিত বাংলাদেশের দর্শকদের মাঝেও।
‘আমি বলবো বাংলাদেশ-ভারতের দ্বৈরথটা সামনে চলে এসেছে। বিশ্বকাপের কয়েকমাস আগে আমরা এশিয়া কাপের ফাইনালে হেরেছিলাম। এ কারণেই বোধহয় ছেলেরা তেঁতে ছিল, আর চেয়েছে প্রতিশোধ নিতে। আমি বলবো এটা উচিত হয়নি, আমার দলের পক্ষ থেকে আমি দুঃখিত।’
উত্তেজনায় যে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে যুবারা, সেটা আইসিসির কড়াকড়ি দেখেই টের পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের টিম ম্যানেজার জানাচ্ছেন, ঘটনার পর ম্যাচ রেফারি এসে ক্ষমা চেয়েছেন তাদের কাছে, ‘রেফারি আমাদের কাছে এসেছিলেন। বলেছেন, তারা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন এবং ঘটনার ফুটেজ সংগ্রহ করে সোমবার সকালের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন।’