“বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতা আমরা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দেই। বেশ কিছু সংখ্যক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের উৎপাদন ও সেবা খাতে নিযুক্ত রয়েছেন এবং তারা নিজ দেশ ভারতে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক এবং চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী ভারতে যাচ্ছে।”- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল সামিটে।
ভার্চুয়াল সামিটে ৫৫ বছর বন্ধ থাকা নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ী পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ ছিল। উদ্বোধনের ফলে এ রুটে বাংলাদেশ থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান পর্যন্ত যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ঢাকা থেকে ভারতের দার্জিলিং যাওয়ার জন্য এটি অন্যতম সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে।
স্বাধীনতার ৪৯ বছর আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুইদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে ভার্চুয়াল সামিট বেশ গুরুত্ব বহন করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সর্ম্পক ঐতিহাসিকভাবে জড়িত। ভৌগলিক ও নানা সামর্থ্যের বিচারে ভারত দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিচ্ছে নানাভাবে। ছোট দেশ বা বড় দেশের মাপকাঠিতে বিচার না করে প্রতিবেশী ও বন্ধুদেশ হিসেবেই বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতি সাজায় ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলোর জন্য। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং কোনো নির্দিষ্ট বলয়ে না থেকে সব দেশের সঙ্গে সুসর্ম্পকের ধারা বাংলাদেশকে দিয়েছে এক অন্যরকম পরিচয়।
প্রধানমন্ত্রী সামিটে বলেছেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে সহযোগিতামূলক ঐকমত্য রয়েছে, তার সুযোগ নিয়ে দুই দেশই নিজ নিজ অর্থনীতিকে আরও সংহত করতে পারে।” আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে বলেন, “দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বরাবরই প্রাধান্য দেয় ভারত। তার সরকার ‘প্রতিবেশীর অগ্রাধিকার’ নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে এবং সেই নীতির ‘এক নম্বর স্তম্ভ’ হচ্ছে বাংলাদেশ।”
উভয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য একটি পারস্পরিক সৌহার্দ্যের বার্তা থাকলেও তিস্তার পানি চুক্তির স্থবিরতা ও সীমান্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীদের হত্যার বিষয়টি অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া নরেন্দ্র মোদির ভাষায় ‘এক নম্বর স্তম্ভ’ বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের মিয়ানমার পক্ষ নেয়াও চিন্তার বিষয় বলে আমরা মনে করি। প্রতিবেশী দুই দেশের অনেক অভিন্ন সমস্যা রয়েছে তা একসাথে মোকাবিলা করা উচিত, তাহলেই বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক সর্ম্পক এক নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে বলে বিজয়ের মাসে আমাদের প্রত্যাশা।