রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডে প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকালে এক ডাকাত আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে ক্যাশ থেকে প্রায় ২৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে বলে বাড্ডায় থানায় অভিযোগ করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ব্যাংকে লেনদেনের সময় হঠাৎ করে এক ব্যক্তি ভেতরে ঢুকে ম্যানেজারকে পিস্তল ঠেকায়। এরপর ব্যাংকের সব স্টাফকে ভল্ট রুমে ঢুকিয়ে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১৬ আগস্ট ও ২০ আগস্ট পর পর দুইটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সতর্ক করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সতর্কতা জারির পরই প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখায় এই ডাকাতির ঘটনা ঘটলো।
এ বিষয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আশরাফুল করিম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘প্রিমিয়াম ব্যাংকের বাড্ডা লিংক রোড শাখায় এক ব্যক্তি প্রবেশ করে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা লুট করেছে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের লোকজন বলছে, ঘটনাটি নাকি একজন ব্যক্তি ঘটিয়েছে। সেটি তদন্ত করতে আমরা ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করে দেখছি।’
আশরাফুল করিম বলেন, ওই ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ব্যাংকের স্টাফদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও মামলা করা হয়নি। এই ঘটনাটি কোনও ডাকাতি বা লুটের ঘটনা কিনা অথবা কোনও পূর্বশত্রুতার জেরে হয়েছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেলে প্রিমিয়ার ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারবো না। তাছাড়া আমি এখন জনসংযোগ বিভাগে নেই। অন্য বিভাগে। তবে ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নওস আলীকে ফোন দিতে পারেন। তিনি হয়তো এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেন।
পরে সৈয়দ নওস আলীকে ফোন দিলে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমি এখন ঢাকা থেকে দূরে। রাস্তায় গাড়িতে তাই এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে সাধারণত সব ব্যাংক বন্ধ থাকে। সেজন্য ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা জোরদার ও বিভিন্ন সাইবার হামলার ঝুঁকি মোকাবেলায় সব ব্যাংককে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও এই ঘটনা ঘটলো।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যাংকটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ কোনো একটি ব্যাংকে দূর্ঘটনা ঘটলে পুরো ব্যাংকিং খাতে এর প্রভাব পড়ে।
এর আগে ১৬ আগস্ট জারি করা সতর্কবার্তায় বলা হয়েছিল, সম্প্রতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এক্ষেত্রে সাইবার অপরাধীরা পেমেন্ট সিস্টেমস হ্যাক করে দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে থেকে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এ ধরনের সাইবার সিকিউরিটি এবং হ্যাকিং সংক্রান্ত নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংকের তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবস্থার নিরাপত্তা বাড়াতে হবে।
এরপর সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক আরো একটি প্রজ্ঞাপনে বলে, ‘আসন্ন ঈদ উল আযহা উপলক্ষে ঘোষিত ছুটির দিনসহ পরবর্তী সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে (২১-২৫ আগস্ট) ব্যাংকের সব ব্যবসা কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সাইবার নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে।’
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘ছুটির দিনসহ ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর রাতেও আকস্মিকভাবে শাখা পরিদর্শনের ব্যবস্থা, ঈদ উল আযহা উপলক্ষে ঘোষিত ছুটির দিন ছাড়াও পরবর্তী সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ব্যাংকের আইটি সিস্টেম, বিভিন্ন স্থাপনা এবং ভল্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পালাক্রমে তদারকির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যাংকের সব ব্যবসা কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিকটবর্তী থানা, র্যাব অফিস ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।