দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে নানা রকম দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর কেলেংকারির ঘটনা বলতে গেলে গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত হোক কিংবা বেসরকারি, এ দুইখাতের বেশিরভাগ ব্যাংক সেই আলোচনার তালিকা ক্রমে উঠানামা করেছে মাত্র। কিন্তু অর্ধশতাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি বললেই চলে। সর্বশেষ গত সোমবার বেসরকারি খাতের ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকে বড় ধরনের অনিয়মের পর চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং ব্যাংকটির পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতী। ওই দিনই আবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একটি অনুষ্ঠানে আরও তিনটি নতুন ব্যাংক আসার কথা জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তির পরও নতুন এ তিনটি ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এরই মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এই মুহুর্তে যে ব্যাংকগুলো আছে, সেগুলোই চাহিদার তুলনায় বেশি। আবার অর্থনীতিবিদরাও নতুন ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলছেন, নতুন এ সিদ্ধান্তে ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা আরো বাড়িয়ে তুলবে। বর্তমান সরকার তার আগের মেয়াদে নয়টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। তখন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই বলেছিলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা তিনটির মধ্যে দুটির লাইসেন্সের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চায় সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি জানিয়ে দেয়, এই সময়ে আর কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। তারপরও ওই উদ্যোগ থেমে থাকেনি। ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খাতে অস্থিরতা দেখা দেয়ার পরও সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন এ খাতে অচিরেই বড় ধরনে ধস নামাতে পারে। যাতে বড় ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে দেশের অর্থনীতিও। নতুন একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় চারশো’ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের প্রয়োজন হয়। শুধু তাই নয়, নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় নানা ঝুঁকিও থাকে। সেই মূলধন পুরানো ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করা হলে তা আরো ভালো ফলাফল আনতে পারে বলে অামরা মনে করি। পাশাপাশি আরো যাচাই-বাছাই করে নতুন ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ।