‘মৃণাল সেনকে খুব কাছ থেকে পেয়েছি। তার সব নির্মাণই আমার দারুণ পছন্দের। ভীষণ ভাবায়। তিনি একটা কথা বলতেন প্রায়ই। পৃথিবীতে সব কিছুই রাজনৈতিক। শিশুর কান্না থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র- কোন কিছু রাজনীতির বাইরে নেই। আমিও তাই মনে করি।’ চলচ্চিত্র সমালোচক, নির্মাতা, আঞ্চলিক ভাষায় ভারতের সর্বপ্রথম স্যাটেলাইট টেলিভিশন ‘এশিয়ানেট’ এর প্রতিষ্ঠাতা, খ্যাতিমান সাংবাদিক যিনি মধ্য আশিতে বিখ্যাত ‘দি হিন্দু’ পত্রিকার পশ্চিম এশিয়ার প্রথম প্রতিনিধি এবং মিডিয়া ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ও এশিয়ান কলেজ অব জার্নালিজমের চেয়ারম্যান শশী কুমার নেপালের কাঠমান্ডু ললিতপুরে সম্প্রতি চ্যানেল আই অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল, রাজনৈতিক দর্শন, চলচ্চিত্রে রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি-
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সম্পর্কে ধারণা আছে?
প্রামাণ্য চিত্রের খোঁজ বেশি রাখি। ইয়াসমিন কবীরের কাজ বেশ ভালো লাগে। তবে ফুল লেংথ ফিল্ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেই। তারেক মাসুদের ছবি দেখার অভিজ্ঞতা আছে। তার ‘ক্লে বার্ড’ চলচ্চিত্রটি দেখেছি। সম্প্রতি শুনেছি দিল্লীতে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতার চলচ্চিত্র রিলিজ পেয়েছে। নামটা কি যেন? ওহো মনে পড়েছে। ‘ডুব’। ইরফান সেখানে অভিনয় করেছে জেনেছি। দিল্লী ফিল্ম ফেস্টিভালে ছবিটি প্রদর্শিত হওয়ার কথাও জানলাম। দেখার আশা রাখছি।
শুরুতেই বলছিলেন মৃণাল সেনের কথা!
আমার কাছে বাংলা চলচ্চিত্র মানে মৃণাল সেন। যদিও সত্যজিৎ রয় এর কাজ অসাধারণ। তবে মৃণাল সেনকে কাছ থেকে অনেকটা সময় পেয়েছি। তার সব নির্মাণই আমার পছন্দের। ভীষণ ভাবায়। তিনি একটা কথা বলতেন প্রায়ই। শিশুর কান্না থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র- কোন কিছু রাজনীতির বাইরে নেই। আমিও তাই মনে করি।’
তাহলে আপনার মতে চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্য রাজনৈতিক দর্শন জরুরী?
অবশ্যই। সেটা যে দর্শনই হোক। একজন নির্মাতার রাজনৈতিক দর্শণ জরুরী। তবে আমি মানবতাবাদী বা সমন্বয়বাদের পক্ষেই থাকব সবসময়। তবে যে দর্শন বিভদেরে জন্ম দেবে সেই দর্শনকে ঠেকাতে সব সময় লড়াই করব আমি। পেহলাজ নিহলানি তেমনটি চেষ্টা করছিলেন।
সচেতন রাজনৈতিক দর্শনের একজন নির্মাতা হিসেবে বর্তমান ভারত সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?
ভারতে ফ্যাসিস্ট শক্তির প্রবল উত্থান ঘটছে। আর এর অন্যতম কারণ প্রগতিশীল শক্তিগুলোর ক্রমশ ক্ষয়ে যাওয়া। বস্তুগত পরিপ্রেক্ষিতের সঙ্গে কৌশলের সমন্বয় ঘটাতে না পারাতেই গুরুত্ব হারাচ্ছে প্রগতিশীলদলগুলো। যার খেসারত দিচ্ছে আজকের ভারত। একজন জ্যেতি বসুর অভাব প্রকট মনে হয় আজকের ভারতে।
ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাব নিয়ে নিয়ে তার প্রতিবেশী দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরণের অসন্তোষ রয়েছে। আপনার মন্তব্য কি?
অনেকাংশে এটা সত্য। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রগতিশীল শক্তিগুলো আঞ্চলিক সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। যার ছাপ ভারতের বিদেশনীতিতে প্রতিফলিত হতে বাধ্য। একটা কথা বৃহৎ প্রতিবেশীর মাথায় রাখা উচিত যে ক্ষুদ্র প্রতিবেশীর প্রতি তার দায়িত্বই বেশি।
সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আর নিজে খ্যাতিমান সাংবাদিক। ইলেকট্রনিক বা প্রিন্ট মিডিয়া সব জায়গাতেই সিদ্ধহস্ত? বিশ্ব সাংবাদিকতার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার অভিমত বলবেন?
এক কথায় বলব, বর্তমানের সাংবাদিকতা বিশ্বাসহীনতার গর্তে খাবি খাচ্ছে। সমালোচকের ভূমিকা থেকে ধরি মাছ না ছুই পানির অবস্থায় চলে যাচ্ছে। বিশ্ব জুড়ে। বিজ্ঞাপনী চাপে বিনিয়োগকারীর দিকেই থাকছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। আর ফ্যাসিজমের আক্রমণে ক্রমশই সংকুচিত হচ্ছে সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতা। সেই একই কথা কথা আবার বলব এখানেও রাজনীতি আছে। একে মোকাবেলা করতে হবে রাজনীতি দিয়েই।
`কায়াতরণ’ সেই ২০০৪ সালে বানালেন। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরাগান্ধী হত্যা পরবর্তী ভারতের শিখ দাঙ্গা আর ২০০২ এর গোধরা পরবর্তী হিন্দু-মুসলিম রায়টকে কেন্দ্র করে। তারপর ১২ পেরিয়ে ১৩ বছর চলছে। নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেননা?
আমার কাছে চলচ্চিত্র মানে গবেষণা এবং রাজনীতি। একটা বিষয় নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ভাবছিলাম। স্ক্রিপ্টিং প্রায় শেষের দিকে। আগামী বছরের মাঝামাঝি কাজ শুরু করব আশা করছি। তবে এই সময়টিতে চলচ্চিত্র নিয়েই কিন্তু থেকেছি। কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য বানিয়েছি। ডকুমেন্টারিও করেছি। আর নিজের সাংবাদিকতাভিত্তিক একাধিক প্রতিষ্ঠানের এর চাপতো আছেই।
বাংলাদেশে গিয়েছিলেন?
একবার গিয়েছিলাম। তাও অনেক আগে। আবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে। ওখানকার নির্মাতাদের সঙ্গে ওখানে বসে ইলিশ ভাজি খেতে খেতে আড্ডা দেওয়ার ইচ্ছাও রয়েছে।