ক্লাব ক্রিকেট, বিপিএল, একাডেমি, দেশের ক্রিকেট; লম্বা সময় ধরে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা তার। সেটাই দেখিয়েছে জাতীয় দলের সঙ্গে কাজের স্বপ্ন। হাথুরুসিংহের হঠাত চলে যাওয়া আর নতুন কোচ নিয়োগে বিলম্ব ব্যাটে-বলে মিলিয়ে দেয় সুযোগ! টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের ছায়ায় আদতে তাই টাইগারদের হেড কোচের দায়িত্বই সামলাচ্ছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। কিন্তু ত্রিদেশীয় ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে ‘বিপর্যস্ত অভিজ্ঞতার’ সিরিজের পর সুজনের মনে হচ্ছে, ‘নোংরা’ হয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিবেশ!
সুজন জানালেন, জাতীয় দলের সঙ্গে সামনে আর কাজ করতে চান না। টি-টুয়েন্টি সিরিজের জন্য দলের সবাই যখন অনুশীলনে নামছেন, মিরপুরে তখন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আবেগী-ঝড় তুললেন সাবেক এ অধিনায়ক।
‘ব্যক্তিগতভাবে আমি আর আগ্রহী না। আমার আসলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গেই কাজ করতে ইচ্ছে করছে না। নোংরা লাগছে সবকিছু। এতবছর বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে কাজ করছি, বাংলাদেশের উন্নতির জন্যই কাজ করছি। এখানে আমার কোন স্বার্থ নাই। সত্যি কথা বললে, আমি আর আগ্রহী না।’
ত্রিদেশীয় সিরিজ হার। মিরপুরে আড়াই দিনে টেস্ট হার। সেই ম্যাচের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের আবার দিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগে খেলার অনুমতি। পরে মোসাদ্দেক, রাব্বি ও নাঈমের জায়গায় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের আমিনুল ও শাকিলকে রাখা হয় সাইডবেঞ্চে, দ্বাদশ খেলোয়াড়ের দায়িত্ব সামলাতে। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সুজন আবাহনীর কোচ। অভিযোগ উঠেছে আবাহনীতে নাম লেখানো ক্রিকেটারদের ছেড়ে দিয়ে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগে মনক্ষেণ্ণ সুজন দুষছেন দেশের সংবাদমাধ্যমকেও।
‘আমি যখন শুরু করছি তখন আপনারা হয়ত খুব ছোট। জানেন না বা হয়ত জানার কথাও না। যখন শুরু করি, ১২-১৩ বছর বয়সে। অন্যকিছু নিয়ে কথা বলায় আমার মেজাজ খারাপ হতে পারে, টেকনিক্যাল হয়ত খারাপ হতে পারি। কিন্তু কিছু বিষয় আমাকে খুবই আহত করে। যখন আসে আমি আবাহনীর হেড কোচ, মোসাদ্দেককে খেলাই নাই আবাহনীতে খেলার জন্য। যখন ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট নিয়ে কথা আসে, খুবই আহত হই। মনে করি না বাংলাদেশের থেকে আবাহনী বা অন্যকিছু আমাকে টাচ করতে পারে।’
‘এসব আমাকে ছুঁতে পারেনি, জীবনেও পারবে না। এগুলো নিয়ে কথা বলা হয়, আহত হই খুব। মনে হয় এতবছর ক্রিকেটের সঙ্গে থেকে আসলে কি লাভটা হল। মোসাদ্দেক আর আবাহনী যদি বাংলাদেশের ম্যাচ হারার কারণ হয়ে যায়, তাহলে খুব কঠিন আসলে। ৫৩ বলে ৯ রান করছে, আমিও দেখেছি। আমারও ক্রিকেট নলেজ আছে। ৮৩ সালে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি। অনেক বছর, চুলও পেকা গেছে। কে পারে, কে পারে না, কখন কাকে দরকার; এটা আমরাও বুঝি। আপনারা হয়ত আরও ভাল বোঝেন।’ ঝাঁঝাল কণ্ঠে যোগ করেন সুজন।
‘যদি মনে হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভাল কিছু করছি না, তাহলে আমার এখানে থেকে লাভ কি। স্বার্থের জন্য আসিনি। আমি খুব খুশি এখানে চাকরি করি। যতটুকু পাই বা যেভাবেই চলি।’ -ভেতরের ক্ষোভটা উগড়ে দেন সুজন।
যে ক্ষোভের অনেকটা জুড়ে থাকে দেশের গণমাধ্যমও, ‘মিডিয়াতে যেভাবে লেখা হয়, আমাদের ক্রিকেটের বড় অন্তরায় এটি। মিডিয়াতে একটা ব্যাপার আছে যে, আমরা সন্দেহপ্রবণ হয়ে যাচ্ছি। মিডিয়াও সন্দেহপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে। মিডিয়ার কারণে আমাদের ক্রিকেট আটকে আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। এটা বেসিক ফিল আমার। ক্রিকেট আমরা এতবছর ধরে খেলছি, আর এখন এত গসিপিং। মিডিয়াতে ভাল খারাপ সবই হবে। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছে। যা ক্রিকেটের জন্য খুব কঠিন। একটা ছেলেকে তুলে নিয়ে আসা এত সহজ না, ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে তৈরি করে তোলা অনেক কঠিন। কোচরা কাজ করে, নাইনটিন দল, এইচপি, অনেককিছু। এ কথাগুলো যদি ঠিক হয়, মনে হয় না বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক দূর যাবে।’