খসরু ভাইকে নিয়ে কী বলি? অনেক কথা। নব্বই দশকে আজিজ মার্কেটে প্রিসিলার সঙ্গে ঢোকার সময় শ্মশ্রুমণ্ডিত একটা লোককে দেখলাম খিস্তি দিয়ে উঠলো। প্রিসিলাকে বললাম, কে? বললো খসরু ভাইরে আপনি চেনেন না? সেই থেকে তাকে চেনার শুরু।
১৯৯৪ সালে কলকাতায় সুবিমল মিশ্রর সঙ্গে ব্যাপক আড্ডা দিয়ে এলাম। কিন্তু এরপর আর যোগাযোগ রাখতে পারিনি। তবু বাংলাদেশে সুবিমল চর্চা অচর্চা থেমে থাকেনি। এ বাহ্য। খসরু ভাইকে নিয়েও একদা অনেক আড্ডা দিয়েছি। মনে মনে যে কতো ইচ্ছাকে প্রতিদিন হত্যা করতে হয়। সেরকম তাকে নিয়েও অনেক ইচ্ছে আমার নিহত হয়েছে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনে তার অবদান নিয়ে অনেকে লিখবে। সে জন্য বিদগ্ধ বোদ্ধারা আছেন। আমি শুধু তার সঙ্গে যে উত্তুঙ্গ সময় পার করেছি তার জাবর কেটে যাচ্ছি একা একা। আমি তার বাঁশির মুগ্ধ ভক্ত ছিলাম। আমার ‘বাকুশাহ ও যুবকগন’ গল্পে খসরু ভাইয়ের কথা এক লাইনেও লিখেতে পেরে শ্লাঘা বোধ করছি। আমরা যখন বাকুশাহ মার্কেটে বোতল বোতল ইউরিয়া পান করতাম তখন তিনি বাঁশি বাজিয়ে আমাদের মুগ্ধ করে রাখতেন। অসংখ্য স্মৃতি। হয়তো একদিন লিখতে পারবো। আজ বলি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠান বিরোধি ধারার সবচেয়ে বড় অংশ মুহম্মদ খসরু। তিনি তার যাপনে কথনে লেখনে আগাগোড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক মানসের ছিলেন। শিল্প সাহিত্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধি চর্চা যারা করেন তারা খসরু ভাই থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন।
খসরু ভাই প্রকৃতই ডিক্লাশড একজন যোদ্ধা ছিলেন। কাউকে ছাড় দিতেন না বলে তিনি আজ আদর্শের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। যাপিত জীবনে গত তিন দশক আমরা অনেক উত্থান পতন দেখেছি। দেখেছি কত হাস্যকর স্থূলজ্ঞান সম্পন্ন লোকদের উত্থান। এসব কিছুই তাকে স্পর্শ করেনি। করতে পারে না। তিনি খসরু ভাই। এই বঙ্গে কত বিচিত্র ছলাকলার নাম শিল্পকলা হতে পারে তা বলাই বাহুল্য।
খসরু ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুণ আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে সেটা হলো-তীব্রতার সঙ্গে বাতিল করার ক্ষমতা। সে যত বড় কিছুই হোক না কেনো? এটাই একজন মহৎ শিল্পীর দুর্লভ যোগ্যতা। এই যোগ্যতা সকলের থাকে না। আর কিছু না হোক সব বাতিল করার স্পর্ধায় খসরু ভাই এই বামন শিল্পবাদীদের ছাড়িয়ে গেছেন অনেক উঁচুতে। খ্যাতি লোভ মোহ যশ কোনো কিছুই তাকে বিচলিত করতে পারেনি। এখন তো পারার প্রশ্নই ওঠে না। তার প্রতি আনত শ্রদ্ধা যেনো তার স্পর্ধার বিন্দুমাত্র কুড়িয়ে নিতে পারি। ‘বাইনচোদ’ অর্থ আমি জানি খসরু ভাই। আপনার কাছে হাতে কলমে শিখেছিলাম। প্রত্যহ তাদের সঙ্গে যাপন করি এই হাস্যকর বেঁচে থাকা।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)