রুমানা আহমেদ, জাহানারা আলম, সালমা খাতুন-লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। নারী ক্রিকেটের সূচনালগ্ন থেকেই খেলছেন তারা। ২০১১ সালে ওয়ানডে মর্যাদা অর্জনে এই ত্রয়ী-রত্নের ছিল অসামান্য অবদান। দীর্ঘদিন ধরে খেললেও নামমাত্র বেতন আর ম্যাচ ফি’র কারণে ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি তাদের। সাকিব-তামিমদের সঙ্গে বিসিবি প্রদত্ত বেতন ও ম্যাচ ফি’র যে পার্থক্য তা জানলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য।
ছেলেদের সর্বোচ্চ মাসিক বেতন ৪ লাখ, সর্বনিম্ন ১ লাখ ২৫ হাজার। আর মেয়েদের সর্ব্বোচ বেতন ৩০ হাজার! ছেলেদের ওয়ানডে ম্যাচ ফি ২ লাখ, টি-টুয়েন্টিতে ১ লাখ ২৫ হাজার। আর মেয়েদের ওয়ানডে ম্যাচ ফি আট হাজার তিনশ, টি-টুয়েন্টিতে ৬ হাজার দুইশত পঁচিশ টাকা!
বিসিবি আয়োজিত মেয়েদের ঘরোয়া ক্রিকেট বলতে কেবল জাতীয় লিগ। যেখানে নেই ম্যাচ ফি। ভ্রমণ ভাতা বাবদ প্রত্যেক খেলোয়াড় পান ১ হাজার টাকা। ছেলেরা জাতীয় লিগে (লংগার ভার্সন) ম্যাচ প্রতি পান ৩৫ হাজার টাকা। ভ্রমণ ভাতা আড়াই হাজার টাকা।
গত বছর ওমেন্স উইংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ আউয়াল চৌধুরী ভুলু একটি ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন জাতীয় লিগে মেয়েদের ম্যাচ ফি ৬০০ টাকা। যেটি নিয়ে খুব হইচই হয়েছিল। আদতে মেয়েদের জাতীয় লিগে ম্যাচ ফি বলতে কিছু নেই! ৬০০ টাকা ছিল ভ্রমণ ভাতা। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার।
নারী ক্রিকেটাররা খুব সচেনতনভাবেই আর্থিক ব্যাপার নিয়ে চুপ থাকেন। কারও মুখ থেকে কখনও শোনা যায় না বেতন, ম্যাচ ফি নিয়ে অনুযোগের কথা। যা বলেন তার সবটাই ‘অফ দ্য রেকর্ডে’। বোর্ডের জেরার ভয় আর সমাজে সম্মান হারানোর ভয়ে রেকর্ডার কিংবা ক্যামেরার সমানে মুখ খোলার সাহস করেন না কেউ। নীরবেই বয়ে বেড়াচ্ছেন আর্থিক অস্বচ্ছলতা।
ছেলেদের ক্রিকেটে ম্যাচ ফির বাইরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদেরও মাসিক বেতন আছে। ১২০ জন দিয়ে শুরু হয়ে এখন প্রথম শ্রেণির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার ৮৫ জন। তিনটি ক্যাটাগরিতে বেতন দেওয়া হয় তাদের। মেয়েদের কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরের ক্রিকেটারদের কোনো বেতন নেই। মেয়েদের তিনটি গ্রেডে দেওয়া হয় ৩০, ২০ ও ১০ হাজার টাকা। অনেক পুরুষ ক্রিকেটার জাতীয় দলে না খেলেও গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়ে গেছেন। আর সেখানে এক দশক ধরে জাতীয় দলে খেলেও নারী ক্রিকেটারদের কেউ গাড়ি কিংবা বাড়ি করতে পেরেছেন; এমন উদাহরণ নেই।
নারী ক্রিকেটে বেতন-ভাতা যে অপ্রতুল সেটি স্বীকার করেছেন বিসিবি পরিচালক ও নারী উইংয়ের নতুন চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। যতটুকু সম্ভব বাড়ানোর ভাবনার কথা বলেছেন তিনি।
‘মেয়েদের যে সুযোগ-সুবিধা, আসলেই কিন্তু তা অনেক অপ্রতুল। সেটা আমরাও জানি। আপনারাও জানেন। পেশাগতভাবে আসার জন্য যে সুযোগ সেটা অনেক কম। অনেক পরিবার থেকেই তাদের মেয়েদেরকে দিতে চান না, কারণ এখানে ওরকম কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। আমরা আশা করছি যতটুকু সম্ভব সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে পারব। সামনের বোর্ড মিটিংয়ে না হলেও অচিরেই ম্যাচ ফি ও অন্যান্য ভাতা চূড়ান্ত করতে পারব বলে আশা করছি।’
নারী ক্রিকেটে পৃষ্ঠপোষকতার ব্যাপারে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অনাগ্রহ গোটা ক্রিকেট বিশ্বেরই বাস্তবতা। বোর্ডের অন্যান্য সব খাতের আয় থেকে ভর্তুকি দিয়েই মেয়েদের ক্রিকেটকে অনুপ্রাণিত করে অনেক দেশ। ছেলেদের ক্রিকেটের সমান গুরুত্ব মেয়েদের ক্রিকেটকে দিচ্ছে ভারত। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলির বোর্ড এভাবে প্রণোদনা দিয়েই মেয়েদের ক্রিকেটকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে।
বাংলাদেশ কবে সেই পথ অনুসরণ করবে?