ব্রিটিশ আমলের একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর গিয়েছেন নাপিতের দোকানে। এক ফিরিঙ্গি সাহেব ও গিয়েছেন সেখানে চুল কাটাতে। তো চুল কাটার সময়ে কাচিতে একটু টান পড়ায় ফিরিঙ্গি সাহেব রেগে গিয়ে নাপিতকে বললেন ‘ড্যাম’।নাপিত গেলো মহা ক্ষেপে। বললো ড্যামের অর্থ না বললে সে চুলই আর কাটবেনা। বেশ শোরগোল পড়ে গেল। লোকজন ও জমে গেল অনেক।
ব্যাপারটা সামাল দিতে বিদ্যাসাগর মহোদয় বুদ্ধি করে বললেন, ইয়ে মানে ড্যাম মানে খুব ভালো।
নাপিত ও এতো সহজে ভুলবার পাত্র না। সে বিদ্যাসাগরকে বললো, দেখুন বাবু ড্যাম মানে যদি ভালো হয় ,তাহলে আমি ড্যাম ,আমার বাবা ড্যাম, আমার চৌদ্দ গুষ্টি ড্যাম। আর ড্যাম মানে যদি খারাপ হয়, তবে ও ড্যাম, ওর বাপ ড্যাম, ব্রিটিশের গুষ্টিশুদ্ধ ড্যাম। শুধু ড্যাম না ড্যামড্যামাড্যামড্যাম।
বাকিরা নিরুত্তর ……………
‘বাবু ইংলিশ’ আর ‘সাহেবী বাংলা’ নামের অদ্ভুত বাংলা আর ইংরেজী সংমিশ্রণের এক জগাখিচুড়ি ভাষা প্রচলিত ছিলো ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে। ইংরেজ সরকারের অধীনে চাকরি করা কিছু অর্ধশিক্ষিত বাঙালী মধ্যবিত্ত ছিলেন ‘বাবু ইংলিশ’ এর প্রবক্তা, আর কিছু ইংরেজ কর্মকর্তা নিজেদের বিদ্বান জাহির করতে গিয়ে হাস্যকর উচ্চারণে প্রচলন করেন ‘সাহেবী বাংলা’।
সাহেব ভজনাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য, বিদেশি প্রভুর সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র নির্ভরযোগ্য সোপান। জাগতিক প্রাপ্তির লক্ষ্যে সাহেব প্রশস্তি করে চাকরির দরখাস্ত পেশ করা, কোর্ট-কাছারিতে বক্তৃতা করা আর মানপত্র রচনায় বাবু-ইংলিশের এক নিজস্ব শৈলী গড়ে উঠেছিল। একে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপও অব্যাহত থেকেছে বিশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত। এই বিচিত্র ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হতো দরখাস্ত লেখা, কোর্ট-কাচারির আরজি বা সভা-সমিতির বক্তৃতায় কিংবা সংবর্ধনা সভায় এবং অবশ্যই ইংরেজ প্রভুদের ভূয়সী প্রশস্তি করা হতো তাতে। সে সময়ে অনেক বড় বড় ইংরেজ সাহেব ‘বাবু ইংলিশের রসে মজেছিলেন নিছক বিনোদনের জন্য, এমন কি লর্ড কার্জনের মতো প্রতাপশালী শাসকও। তিনি তার ‘এ্য ভাইসরয়’স ডায়েরী: লিভস ফ্রম এ্য ভাইসয়’স নোটবুক বইতে উল্লেখ করেছেন তার দপ্তরে যে সব বিপুল সংখ্যক ‘বাবু ইংলিশে’ লেখা চিঠিপত্র, আরজি ইত্যাদি জমা পরতো সেখান থেকে তিনি রীতিমত বাছাই করে ‘বাবু ইংলিশ’ সংকলন তৈরি করেছিলেন!
বাবু-ইংলিশের বিচিত্র রসের দু-একটি উদাহরণ দিই।
সে আমলে চাকরি পাওয়া নিয়ে খুব কাড়াকাড়ি হতো। আগে ভালো দরখাস্ত পাঠাতে পারলে কিছুটা সুবিধার সম্ভাবনা থাকে। তাই অনেক চাকরিপ্রার্থী অগ্রিম খবরের সন্ধানে শ্মশানঘাটে গিয়ে সদ্যমৃত চাকরিজীবীদের নামধাম খুঁজে বের করত, মৃত ব্যক্তি কোন দপ্তরে, কী পদে চাকরি করেছিলেন- সব জেনে দরখাস্ত পাঠাত মৃতের চাকরিস্থলে। ইংরেজি ভাষায় লেখা সেই দরখাস্তের শুরুটি ছিল এ রকম- ‘লার্নিং ফ্রম বার্নিংঘাট (শ্মশানঘাট) দেট এ পোস্ট হেজ ফলেন ভ্যাকেন্ট, আই বেগ টু অ্যাপ্লাই ফর দি সেম।’
আরেকবার এক ইংরেজী শিক্ষিত বাঙালির গায়ে একটা ‘ফোড়াঁ’ হলো, ফোঁড়ার ব্যাথায় কাতর হয়ে বেচারার অফিস করাটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ালো। তখন সে বাধ্য হয়ে একটা ছুটির দরখাস্ত করেছিলেন। দরখাস্তটি ছিল এমন- ‘সিন্স লাস্ট টু ডেজ আর মোর আই এ্যম মাচ ট্রাবল উইথ দি লারজেস্টসাইজ বয়েল, এ্যজ পার মার্জিন’-উল্লেখ্য মার্জিনে একটা ফোঁড়ার ছবি আঁকা ছিল!
আরেকটা ঘটনার কথা না বললেই নয়। শিক্ষিত বাঙালির ইংরেজি ভাষা এবং তার অপপ্রয়োগ যে কি হাস্যকর অবস্থার সৃষ্টি করে সেটা এই ঘটনাটা পড়লে কিছুটা আঁচ করা যাবে।
জন বিমস নামের এক ভাষাবিদ জেলা অফিসার তার ‘মেময়ার্স অব এ্য বেঙ্গল সিভিলিয়ান’ বইতে লিখেছেন……”তিনি তখন চট্টগ্রামের কমিশনার হিসেবে কর্মরত, এই সময়ে ছোট লাট স্যার এসলি ইডেন আসবেন চট্টগ্রাম পরিদর্শনে। ছোট লাটের আগমন বলে কথা, সেই উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারী অফিস, আদালত, রাস্তার মোড়ে মোড়ে তোরণ বানিয়ে লাটকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন টানানো হয়েছে। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন চট্টগ্রাম সরকারী হাসপাতালের এক কর্মকর্তা। তিনি হাসপাতালের ঢোকার পথে মহাকবি দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’র কিছু লাইন লিখে টানিয়েছিলেন যা আক্ষরিক ভাবেই কমেডি হয়ে গিয়েছিল।
তিনি লিখেছিলেন.. ‘এ্যাবনডন হোপ, অল ইউ হু এন্টার হিয়ার’
মানে কি দাড়ালো বলুন তো? …..যারা এখানে প্রবেশ করবে, তাদের বেরুবার আশা ছেড়ে দিয়েই ঢুকতে হবে!!
তৃতীয় গল্পটি আরও মজার। একটি সদাগরি হাউসের বার্ষিক বাজেট তৈরি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কোম্পানির বড় সাহেব অনাবশ্যক বিবেচনায় কয়েকটি বরাদ্দ কেটে দিতে কলম তুলেছেন। এমন সময় অধস্তন কর্মচারী ছুটে এল সাহেবকে থামাতে। কর্মচারী বলতে চাইল যে বরাদ্দগুলো তিনি কেটে দিতে চাচ্ছেন, তা নানা কারণে অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু এত কথা বোঝানোর মতো ইংরেজি তার পেটে ছিল না। তাই সাহেবকে অনুনয় করে বললেন, ‘নো কাট, নো কাট। রিজন হ্যাজ (কারণ আছে), অর্থাৎ বরাদ্দগুলো কাটবেন না, এগুলো রাখার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। বলাবাহুল্য, সাহেব ব্যাপারটা বুঝে বরাদ্দগুলো রেখে দিলেন। এভাবেই পরস্পরের ভাষার অজ্ঞতায় একধরনের সহাবস্থানের জন্ম নিয়েছিল শাসক আর শাসিতের মধ্যে। তা না হলে ভাষাবিভ্রাটের ঠেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও কাজকর্ম শিকেয় উঠত। বাবু-ইংলিশ ছোট একটু ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য, অন্তত এই কারণে।
১৮৯১ সালের আগে উপমহাদেশে যে রেলগাড়ি গুলো চলতো তাতে কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল না। তো একবার এমনই এক গ্রীষ্মকালে এক বাঙালি বাবু ভরপেট কাঁঠাল খেয়ে ট্রেনে চাপলেন। একসময়ে এই কাঁঠাল তার পেটে গুরুচাপের সৃষ্টি করলো, কিন্তু ট্রেনের ভেতরে কোনো টয়লেট না থাকায় সে দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষায় রইলো কখন পরের স্টেশন আসে।
কিছু সময় পরে ট্রেন থামতেই উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ালো সে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে কিন্তু কপালে দুর্ভোগ থাকলে যা হয়…..আনুষাঙ্গিক কাজটা শেষ করার আগেই বদ গার্ড বাঁশি বাজিয়ে ট্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে দিল।
বেচারা চমকে গিয়ে ফিরে চেয়ে দেখে হায়রে ট্রেন তো চলে যাচ্ছে, তখন বদনা হাতে বাবু দৌড়ে ট্রেন ধরতে গিয়ে অশেষ নাকাল হয়ে রেগেমেগে ট্রেন কর্তৃপক্ষকে একটা চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিটা ছিল এমন…….
“I am arrive by passenger train at Ahmedpur Station and my belly is too much swelling with jackfruit. I am therefore went to privy. Just i doing the nuisance the guard making the whistle blow for the train to go-off and i am running with bodna in one hand and dhoti in the next when i am fell over and exposed all my shocking to man and female women in the platform. This is too much but if passenger go to make dung the dam guard not wait for five minutes for him.”
তবে তার এই এক সচিত্র চিঠিতেই কিন্তু কেল্লাফতে হয়েছিল। এই চিঠি পাবার পরই রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেনের কামরায় টয়লেটের শুভ সূচনা করে।
এবার শেষ গল্পটি। জনৈক ‘নেটিভ বয়’, তার বেতন কমানোর জন্য দুঃখ জানিয়ে ইংলিশম্যান কাগজে ইংরেজিতে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানাচ্ছেন,
…I am a poor native boy rite butiful English and rite good sirkulars for Mateland Sahib…very cheap, and gives one rupees eight annas per diem, but now a man say he makes better English, and put it all rong and gives me one rupes…
অথচ কী দুঃখের কথা। ছেলেটি যে শুধু ‘ভাল’ ইংরেজিই লিখতে পারে তা-ই নয়, তার অন্য গুণও আছে। সে লিখেছে—
`I make poetry (কবিতা) and country Korruspondanse.’
চিঠিটি পড়ে ‘নেটিভ বয়ে’র মনিব মেটল্যান্ড সাহেবের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল জানা যায়নি।
বাঙালির বাবু-ইংলিশ যদি কৌতুকের বশে জারিত হয়, তবে সাহেবের কষ্ট করে পরীক্ষায় পাস করা বাংলা ভাষা ছিল ভয়াবহ। তখনকার ইংরেজ সিভিলিয়ানদের দেশীয় ভাষা শেখা ছিল বাধ্যতামূলক। পাস করলে চাকরিতে জুটত অতিরিক্ত মোটা ভাতা। এত সব আকর্ষণীয় সুবিধা থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ সাহেব আমলার বাংলা জ্ঞান ছিল জোড়াতালি দেওয়া। সে সময়ের ইংরেজি শিক্ষিতবাঙালি সমাজে সাহেবদের কারও কারও বাংলায় পারদর্শিতা নিয়ে মুখোমুখি কয়েকটি গল্প চালু ছিল। এমন একটি গল্প কৃষ্ণনগর কলেজের ইংরেজ অধ্যক্ষ ই লেথব্রিজকে নিয়ে। সাহেব নাকি বাংলা পরীক্ষায় পাস করে অনেক টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার বাংলা পরীক্ষায় ইংরেজিতে অনুবাদের জন্য একটি বাক্য ছিল, ‘রাজা বিক্রমাদিত্যের দুই মহিষী ছিল।’ সাহেব এর যে ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন, raja bikramaditya had two sea buffaloes তার অর্থ দাঁড়ায়, ‘রাজা বিক্রমাদিত্যের দুটি মাদী মহিষ ছিল।
আর একজন বাংলা ভাষায় পারদর্শী সাহেব ‘দ্যাট রিমার্কএবল লেডি’র বাংলা অনুবাদ করেছিলেন, ‘ঐ মন্তব্যা মহিলা’; এমনকি যে বিদূষী ইংরেজ মহিলা বঙ্কিমের বিষবৃক্ষের ইংরেজি অনুবাদ করে প্রচুর সুনাম কিনেছিলেন, তিনিও গোপালউড়ের যাত্রার অনুবাদ করেছিলেন, ‘জার্নি অব ফ্লাইং গোপাল’।
সে আমলের অধিকাংশ সাহেব প্রশাসকের পরিশ্রম করে শেখা বাংলা উচ্চারণ, শব্দচয়ন সাধারণ মানুষের জন্য তো দূরের কথা, শিক্ষিতজনেরও বোধগম্য হতে সময় লাগত। বক্তা ও শ্রোতা উভয়ের জন্য প্রায়ই তা হতো বিভ্রান্তিকর। বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা থেকে বাংলা ভাষায় দক্ষ প্রজাহিতৈষী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিনওয়েল সাহেবের দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক।
সাহেবের জেলায় দুর্ভিক্ষ দেখা গেছে। তিনি সরেজমিনে দুর্ভিক্ষের অবস্থা দেখতে বেরিয়ে ঘোড়ায় চড়ে গ্রামের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। পথে এক কৃষকের সঙ্গে দেখা। সাহেব বাংলা পরীক্ষায় পাস করে পুরস্কার পেয়েছেন। সুতরাং সেই কৃষকের সঙ্গে বাংলা ভাষাতেই কথাবার্তা শুরু করবেন।
সাহেবের প্রথম প্রশ্ন ‘টোমাডিগের গুড়ামে ডুড়বেক্কা কেমন আছে?’ (তোমাদের গ্রামে দুর্ভিক্ষ কেমন?)
‘ডুড়বেক্কা’ কী কৃষকটির অজানা। ভাবল হয়তো বা কোনো ব্যক্তিবিশেষের নাম হবে। কিন্তু কেমন আছে? এর উত্তর কী দেবে?
যদি বলে যে ডুরবেক্কাকে চেনে না, তবে সাহেবের এক ঘা চাবুকের মার পিঠে পড়বে। যদি বলে যে ভালো আছে, তবে তাকে হয়তো ডেকে আনতে হুকুম হবে। তখন কী হবে?
কৃষকটি অনেক ভেবেচিন্তে উত্তর দিল, ‘বেমার আছে।’
সাহেব বুঝে উঠতে পারলেন না। দুর্ভিক্ষ কী করে অসুস্থ হয়। নিশ্চয়ই কৃষকটি তার কথার অর্থ পুরোপুরি বুঝতে পারেনি। একটু ঘুরিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘ডুড়বেক্কা কেমন আছে? অধিক আছে কি কম আছে?’
এবার কৃষকটির চোখ খুলে গেল। তার মাথায় ঢুকল এ যখন সাহেব, তখন হাকিম না হয়ে যায় না। হাকিম যখন জানতে চাচ্ছে ডুড়বেক্কা অধিক আছে না অল্প আছে—তখন ডুড়বেক্কা অবশ্যই একটা নতুন ট্যাক্সের নাম। এখন যদি বলি, ‘আমাদের গ্রামে সে ট্যাক্স নাই, তবে বেটা এখনই ট্যাক্স বসাইয়া যাইবে।’ অতএব মিছা কথা বলাই ভালো।
সাহেব আবার একই প্রশ্নটা করলে কৃষক উত্তর দিল, ‘হুজুর, আমাদের গায়ে ভারী ডুড়বেক্কো আছে?’
সাহেব ভাবলেন, ‘হুম! আই থট অ্যাজ মাচ।’ তদন্তে সন্তুষ্ট হয়ে সাহেব ফিরে গেলেন। বুদ্ধিমান কৃষকের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? চাষা আসিয়া গ্রামে রটাইল, ‘একটা সাহেব টাকায় আট আনা হিসাবে ট্যাক্স বসাইতে আসিয়াছিল, চাষা মহাশয়ের বুদ্ধি-কৌশলে বিমুখ হইয়াছে।
বাবু-ইংলিশ নিয়ে ঠাট্টা মশকরার প্রত্যুত্তরে বাঙালি লেখকেরাও ইংরেজের বিকৃত উচ্চারণ নিয়ে ঠাট্টা করতে ছাড়েননি। রঙ্গ পত্রিকা বসন্তক এ বিষয় নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল। ব্রিটিশ রাজের অধীনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি করা বঙ্কিমচন্দ্রের মুচিরামগুড়ের কাহিনীই তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
এই দেশে ইংরেজী শিক্ষা বিস্তারের জন্য যে মানুষটির অবদান সব চাইতে বেশি তিনি হলেন ডেভিড হেয়ার। শোনা যায় সে সময়ে ইংরেজি শেখার জন্য মানুষের এত আগ্রহ জন্মছিল তিনি যখন রাস্তায় পালকি করে বের হতেন তখন দলে দলে ছেলেপিলে পাল্কী ধরে ধরে দৌড়াতো আর বলতো……..”Me poor boy, me take in your school”!! উল্লেখ্য হেয়ার সাহেব স্কুলে গরিব মেধাবী ছাত্রদের বিনা বেতনে পড়াতেন।
রাজানারায়ণ বসু বলেছেন, সে সময়ে ইংরেজী শিখতে মানুষ এত আগ্রহী ছিল যে রীতিমত ডিকশনারি মুখস্ত করে ফেলতো। এ প্রসঙ্গে শিবনাথ শাস্ত্রী লিখেছিলেন-যে যত অধিক সংখ্যক ইংরেজি শব্দ ও তাহার অর্থ কণ্ঠস্থ করিত, ইংরেজি ভাষায় সুশিক্ষিত বলিয়া তাহার তত খ্যাতি প্রতিপত্তি হইতো। এরূপ শোনা যায় শ্রীরামপুরের মিশানরীফন সে সময়ে এই বলিয়া তাহাদের আশ্রিত ব্যক্তিদিগকে সার্টিফিকেট দিতেন যে, এই ব্যক্তি দুইশত বা তিনশত ইংরেজি শিখিয়াছে।
ভাবছেন, এখনতো আর ব্রিটিশ নেই। তাই এসব নিয়ে আর কথা বলারই বা দরকার কি? আসলেই কি নেই? তাহলে একবার কষ্ট করে রেডিওটা অন করে দেখুনতো, ‘হ্যালো ভিউয়ার্স’ আর ‘হাই ফ্রেন্ডস’ এর ঠেলায় কতক্ষণ বসে থাকতে পারেন, সেটা নিজেই একবার পরীক্ষা করে দেখার অনুরোধ রইলো। হালে বাংলা ভাষা আরো দুর্বিপাকে পড়েছে। ইদানীং ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বাংলা ভাষা যে যেমন পারছে লিখে যাচ্ছে। ব্যাকরণ মানার কথা পরে আসছে, ভাষার বিকৃতি চরম এক পর্যায়ে পৌছেছে। ইচ্ছা করে হোক আর না জেনে হোক কিংবা স্যাটায়ারজনিত কারণে হোক বাংলা ভাষা এখন জগাখিচুরি মতো একটা ইচ্ছে ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে। হালের এই বাংলা উনবিংশ শতাব্দীর বাংরেজি ভাষার কথা মনে করিয়ে দেয়।
সারাংশ হিসেবে এটিই বলা যায়, ময়ূরপুচ্ছ ধারণ করলেই কাক কখনো ময়ূর হতে পারেনা। কাজেই সে চেষ্টা না করাই মঙ্গলজনক।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)