চট্টগ্রাম থেকে: সেমিফাইনালে যেতে আর কোনো ভুলের সুযোগ নেই। আরেকটা ভুলে মূল্য দিতে হবে গ্রুপপর্ব থেকেই ছিটকে যেয়ে। এমন কোণঠাসা অবস্থায় আগের মৌসুমের অপরাজেয় খেলার ধরনেই ফিরতে চায় বাংলাদেশ লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। প্রয়োজনে একাধিক তারকা ফুটবলারকে ডাগআউটে বসিয়ে রাখতে রাজী দলটির স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজেন।
শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ টুর্নামেন্টে সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে বৃহস্পতিবার ভারতের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটি এফসির বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই বসুন্ধরার। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে বিকেল চারটায় শুরু হবে মহারণ।
জাতীয় দলের আট খেলোয়াড় থাকলেও গোকুলম কেরালা এফসির বিপক্ষে বসুন্ধরার খেলা মন ভরায়নি দর্শকদের। মঙ্গলবারের ম্যাচে ৩-১ গোলে হেরে যায় প্রথম মৌসুমেই লিগসহ দুই শিরোপা জয়ী নতুন জায়ান্টরা। টুর্নামেন্টের মাত্র তিনদিন আগে পূর্ণ দল পাওয়াকে কারণ হিসেবে বললেও একে অজুহাত মানতে নারাজ অস্কার। জয়ের জন্য ফিরতে চান পুরনো কৌশলে।
গত মৌসুমে বসুন্ধরার আক্রমণই শুরু হয়েছে গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর পা থেকে। এরপর নিজেদের রক্ষণ সামলে মাঝমাঠে খেলা বানিয়ে দিতেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ইমন মাহমুদরা। আক্রমণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস, মতিন মিয়া, এলিটা কিংসলেরা। মঙ্গলবারের ম্যাচে অতি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে গিয়েই সর্বনাশ হয়েছে দলটির।
ওই ম্যাচে দলে ছিলেন মাত্র তিন প্রথাগত ডিফেন্ডার। ভারত ম্যাচে নজর কাড়া ইয়াসিন খান এদিন একদমই সুবিধা করে উঠতে পারেননি। সুশান্ত ত্রিপুরা ছিলেন যেন দর্শক হয়ে। মোটামুটি নজর কেড়েছেন আরেক ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ। লেবানন জাতীয় দলের খেলোয়াড় মোহাম্মদ জালালকে বলতে গেলে খেলায় খুঁজেই পাওয়া যায়নি।
জয় পেতে তাই আগের মৌসুমের সৈনিকদের উপরই ভরসা রাখছেন অস্কার। ফিরতে চান গত মৌসুমের খেলার ধরনে। তাই পরীক্ষিতদের দিয়েই লড়তে চান চেন্নাইয়ের বিপক্ষে। বুধবারের অনুশীলনে বিশ্রাম ছিলেন নয় ফুটবলার।
‘গত মৌসুমে আমরা প্রতিপক্ষের অর্ধেই বেশি খেলেছি। এটা শুরুই হতো আমাদের গোলরক্ষকের পা থেকে। আমরা আবারও এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি আগামী ম্যাচে এভাবেই খেলা শুরু করবো। গত ম্যাচে আমরা এমনটা করতে পারিনি। বসুন্ধরায় এবার অনেক নতুন খেলোয়াড় এসেছে। ওদের মানিয়ে নিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে, আমরাও সমস্যায় পড়েছি। তবে আমি খুশি, কারণ দেখেছি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে খেলায়। আরও কিছুটা সময় লাগবে মানিয়ে নিতে।’
‘গোকুলম কেরালা অনেকদিন ধরেই খেলার মাঝে ছিল। ওরা ডুরান্ড কাপ জিতেছে। আর আমার খেলোয়াড়রা এসেছেই তিনদিন আগে। তাই মানিয়ে নিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে একে অজুহাত হিসেবে দিতে চাই না। আমরা আগামী মৌসুমের মতো আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলবো। আমাদের সুযোগ একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি।’
চেন্নাইয়ের বিপক্ষে বড়রকম পরিবর্তনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ। এ মৌসুমে নতুন যারা এসেছেন তাদেরই মূলত জায়গা হতে পারে ডাগআউটে, ‘আগামী ম্যাচে অনেক পরিবর্তন আসবে। গত ম্যাচে অনেকের খেলা আমাকে খুশি করতে পারেনি।’
‘খেলোয়াড়রা আমাদের আগের মৌসুমের খেলার ধরনটা বুঝতে পেরেছে। এখন আমাদের জন্য খেলাটা বাঁচা-মরার। ম্যাচটায় গত মৌসুমের খেলোয়াড়দের দিয়েই খেলাতে চাই। তারা জানে আমরা গত মৌসুমে কীভাবে খেলেছি।’
প্রথম ম্যাচ হেরে খানিকটা কোণঠাসা বসুন্ধরা। কোচ চাপের বিষয়টা স্বীকার করলেও জানিয়ে দিলেন এতেই জ্বলে উঠবে তার শিষ্যরা। তবে চান না কোনো ভুল করতে, ‘আমি আগেই বলেছি যত বেশি চাপ আমাকে দেবেন আমি তত বেশিই খুশি। চাপ থাকবেই। তবে ভুল করা চলবে না। আরেকটা ভুল করলেই আমাদের টুর্নামেন্ট শেষ।’
কোচের কণ্ঠেই কণ্ঠ মিলিয়েছেন গোকুলমের বিপক্ষে একমাত্র গোলদাতা মতিন মিয়া। দল হারলেও এ ফরোয়ার্ডের বিশ্বাস চেন্নাইয়ের বিপক্ষে ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবেন তারা, ‘আমরা তিন-চারদিন অনুশীলন করতে পেরেছি। হয়তো এ কারণে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া কম। প্রতিপক্ষ যারা ছিল তারাও অনেক ভালো দল। আমরা ভালোটাই দেয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। আশা করি পরের ম্যাচেই সব ভালো হয়ে যাবে।’