জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত নেতাকর্মীদের শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আবার ফিরে আসায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শাখা কমিটিতে তাদের ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে যেকোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে।
জানা যায়, গত ৩১ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে এক কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মী সভায় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু শাখা ছাত্রলীগ আয়োজিত ওই কর্মীসভায় ছাত্রলীগ থেকে আজীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কৃত এবং বিতর্কিত নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হলে সভাস্থলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সভাস্থলে উপস্থিত বিতর্কিত নেতাদের মধ্যে একজন মো. এ কে খায়রুজ্জামান সঞ্চয়। ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হল শাখা ছাত্রলীগেরর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় হল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং খায়রুজ্জামান সঞ্চয় সহ চার নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে আজীবন বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েও ওই কর্মীসভায় তাকে উপস্থিত থাকতে দেখে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে খায়রুজ্জামান সঞ্চয় বক্তৃতা দিতে মঞ্চে উঠলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। উত্তেজনার এক পর্যায়ে তাকে (সঞ্চয়কে) ওই কর্মীসভা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন নেতারা।
প্রায় ৮ ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত ওই কর্মী সভা শেষে বিভাগ ও অনুষদ ভিত্তিক কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে সেসময়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার নয় দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিভাগ ও অনুষদ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা খায়রুজ্জামান সঞ্চয়ের বক্তৃতা প্রদানের বিষয়টি নিজেদের অনিচ্ছাকৃত ভুল হিসেবে উল্লেখ করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক।
এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, ‘সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার বিষয়টি স্মরণ হলে সাথে সাথে নেতাকর্মীরা মিলে সভাস্থল থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়।’
কমিটি ঘোষণার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সকল প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করতে একটু সময় নিচ্ছে। তবে চার-পাঁচ দিনের ভিতরে কমিটি ঘোষণা করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাসে কোনো কুলাঙ্গার ও বহিষ্কৃত নেতা স্থান পায়নি। এরকম কাউকে কমিটিতে স্থান দেয়াও হবে না। যে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা জানাতে বলেছি।’
দলীয় এক সূত্রে জানা যায়, কলা ও মানবিক অনুষদের কমিটিতে খায়রুজ্জামান সঞ্চয়কে সাধারণ সম্পাদক করে একটি খসড়া কমিটি করা হয়। কিন্তু ২১ আগস্ট মওলানা ভাসানী হলে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কিৃত ওই নেতাকে অনুষদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হবে জানতে পেরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে কর্মীসভা চলাকালীন সময়ে মহিতোষ রায় টিটোসহ আরো বেশ কয়েকজন বিতর্কিত নেতা-কর্মীকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। গত আট জুন রাতে সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটোকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
শাখা ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কমিটি ঘোষণা না করার পেছনে প্রধান কারন বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের (খসড়া) কমিটিতে এমন কিছু ছাত্রলীগ কর্মীদের নাম এসেছে যারা বিতর্কিত ও বহিষ্কৃত। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগ ও অনুষদ কমিটি ঘোষণা স্থগিত করেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বিভাগ ও অনুষদ কমিটিকে ঘিরে কয়েকদিন আগে ক্যম্পাসে ছাত্র রাজনীতি ও কর্মীদের সক্রিয়তা বেড়ে গেলেও এখনো কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে গত ২১ আগষ্টে মওলানা ভাসানী হলে হামলার ঘটনায় বহিষ্কৃতদের ক্যাম্পাসে ফিরে আশাকে কেন্দ্র করেও যেকোন সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে মনে করছেন অনেকে।