রাত পোহালেই বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আপামর বাঙালি এই দিনটি উদযাপনে একাত্ম হন, রাস্তায় নামে। কিন্তু উদযাপনের আনন্দে কেউ যেন নুসরাত জাহান রাফিকে ভুলে না যান, সেই আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের মানুষেরা।
ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার প্রতিবাদে এফডিসিতে মানব বন্ধন করেছে চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এই মানব বন্ধনের আয়োজনে ছিলো পরিচালক সমিতি।
শনিবার সকাল সাড়ে এগারোটায় এফডিসির সামনে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে নুসরাতের খুনের প্রতিবাদে যোগ দেন এফডিসি কেন্দ্রীক বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো।
পরিচালক সমিতির আয়োজনে এই মানবন্ধনে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চিত্রনায়ক আলমগীর, আলী রাজ, চিত্রনায়ক রিয়াজ, অভিনেত্রী ও সংগঠক রোকেয়া প্রাচী, শহীদুল আলম সাচ্চু, চয়নিকা চৌধুরী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, প্রযোজক খসরুসহ চলচ্চিত্রের পরিচিত মুখ।
নুসরাত হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করে মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, নুসরাত হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে বাঁচাতে একটি শ্রেণি উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা চাই আগামি সাত দিনের মধ্যে যেন বিচার কার্য সম্পন্ন হয়। প্রধানমন্ত্রী যে আদেশ দিয়েছেন, সেটা যেন ভিন্ন খাতে কেউ প্রবাহিত না করেন।
বক্তারা আরো বলেন, সোনাগাজীতে অনেক প্রভাশালী নেতারা ধর্ষক ও খুনীদের পক্ষে কাজ করছেন। আমরা বলতে চাই, নুসরাত হত্যাকাণ্ড এবং তার বিচার দাবী জাতীয় দাবীতে পরিণত হয়েছে। এটি একটি মানবিক ব্যাপার। এখানে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যেন কেউ পার না পায়।
এই বৈশাখে যেন সবাই কালো ব্যাজ ধারণ করেন এবং নুসরাত হত্যার প্রতিবাদ জারি রাখেন সেই আহ্বানও জানানো হয় এফডিসিতে আয়োজিত নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে মানবন্ধনে।
বক্তারা বলেন, কেউ যেন বর্ষবরণের আনন্দে নুসরাত হত্যার বিষয়টি ভুলে না যান।
গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা।
এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানীর মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।
পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসায় গঠিত হয় নয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
এ ঘটনায় সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নত চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোরও পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু সবার প্রার্থনা-চেষ্টাকে বিফল করে বুধবার রাতে চলেই গেলো ‘প্রতিবাদী’ নুসরাত।
ওই ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। ওই ঘটনায় পর মামলা করায় নুসরাতকে আগুনে পোড়ানো হয়। ওই মামলার পর সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।