টাঙ্গাইলে তৃতীয় দফার বন্যায় জেলার ১২ টি উপজেলার মধ্যে ১১টিই এখন বন্যাকবলিত। বন্যায় এসব অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষাধিক মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষাধিক। দীর্ঘ মাস ধরে বন্যা স্থায়ী হওয়ায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে সর্বত্রই।
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৩ সে.মি কমেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে জেলার অভ্যন্তরীণ সবকটি নদীতে। অভ্যন্তরীণ নদীগুলির প্রায় সবকটিই বিপৎসীমার একশ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্গত মানুষের সংখ্যা। পুরো জেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট।
জেলা প্রশাসন অফিসের তথ্যমতে, ১১ উপজেলার ৮৩টি ইউনিয়নের অন্তত ৬৫২ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে ৬টি পৌরসভা আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ৫ লাখ ১২ হাজার ৪২১ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৪৯ টি। আর পানিবন্দি লোক সংখ্যা ২ লাখ ২৮ হাজার ১৯৬ জন।
অপরদিকে ৭৬১টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এবং আরো আংশিক ৩০ হাজার ৫০৫ টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২ টি স্কুল নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরো ৮৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী ভাঙনে ১ টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৮৭ টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ৬৪১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ কি.মি. সম্পূর্ণ কাঁচা রাস্তা এবং আংশিক ৬৯৩ কি.মি. কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ১৬০ কি.মি. পাকা রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও সম্পূর্ণ ৭টি ব্রিজ এবং আংশিক ৪৯টি ব্রিজ ক্ষতি হয়েছে। টিউওবেল ৭৯৪১ টি এবং ৫.৩ কি.মি. আংশিক নদীর বাঁধ ক্ষতি হয়েছে।
দুর্গত মানুষের জেলায় মোট ৪৫ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। এই আশ্রয় কেন্দ্রে সংখ্যা ৩ হাজার ৪৬৫ জন আশ্রয় নিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা চলমান রাখতে ১১৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৯০০ মে.ট্রন চাল, নগদ ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শিশু খাদ্য ২ লাখ টাকা এবং গোখাদ্য ৯ লাখ টাকা এবং শুকনা প্যাকেট ১০ হাজার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ১০ হাজার ৭৪ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে বোনা আমন, রোপা আমনের বীজতলা, আউশ, সবজি, লেবু এবং আখসহ নানা ফসল রয়েছে।