চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বঞ্চনা থেকে জঙ্গি: নতুন করে ভাবতে হবে

বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গি দমনে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। জঙ্গি বিষয়ে সেই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেছেন, সহিংস উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়ার একক কোনো কারণ নেই। বিভিন্ন কারণে তরুণরা এতে জড়িয়ে যায়।

শনিবার রাজধানীতে ‘সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী যুব সংলাপ’ অনুষ্ঠানে তিনি এমন মত প্রকাশ করেন। এখানেই থেমে থাকেননি, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণের কথাও উল্লেখ করে বলেছেন, এর অন্যতম কারণ বঞ্চনাবোধ।

এই সংলাপ থেকে জঙ্গিবাদের জড়ানোর আরো কিছু কারণ উঠে এসেছে। যার মধ্যে রয়েছে; পারিবারিক বন্ধন কমে যাওয়া, সন্তানদের সময় না দেওয়া, তাদের প্রতি খেয়াল না রাখা, ভিডিও গেমস ও মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট সম্পৃক্ততা, কারাগারে জঙ্গিদের সাথে থেকে সাধারণ অপরাধীরাও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়।

আমরা জানি, যে কোনো বঞ্চনাই মানুষকে ভিন্নপথে নিতে প্রভাবিত করে। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর মনের মধ্যে পুষে রাখা বঞ্চনাবোধ যে কাউকে ভয়ংকর অপরাধী করে তুলতে পারে। অপরাধ বিজ্ঞানও বলছে, অনেক মানুষকে বড় বড় অপরাধীতে পরিণত করার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে বঞ্চনাবোধ। সেটা হতে পারে সামাজিক, পারিবারিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে।

ইন্টারনেট ভিক্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক উৎকর্ষের এই সময়ে মানুষ আসলে খুব ব্যস্ত। বেশির ভাগ মানুষের ব্যস্ততা তার হাতে থাকা স্মার্টফোনকে কেন্দ্র করে। সেখানেই যেন সে ডুব দিয়ে থাকতে চায়। আশেপাশে কী ঘটছে, কী বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে- সেসবে তার কোনো আগ্রহ নেই। এখন এমনও দেখা যাচ্ছে, একটি প্রাইভেট কারে একাধিক ব্যক্তি যাচ্ছেন, খুব কাছাকাছি বসেও তারা অন্যর সাথে কথা না বলে ব্যস্ত আছেন মোবাইল ফোন নিয়ে।

এটা শুধু গাড়িতেই না, বাসা-বাড়িতেও একই চিত্র। মা-বাবা আলাদা ফোন নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন, অন্যদিকে তাদের সন্তানরাও সেই ফোনকে অাপন করে নিচ্ছে। এসব কারণ পারিবারিক বন্ধনের পাশাপাশি সমাজের প্রতিও দায়িত্ব কমে যাচ্ছে। মূলত মানুষ একা হয়ে যাচ্ছে। আর এই সব কারণেই তার ভিন্ন পথে চলে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

তাহলে এই পরিস্থিতিতে করণীয় কি? সমাজ কি এভাবেই চলতে থাকবে? নাকি নতুন কিছু ভাবার সময় এসেছে?

হ্যাঁ, আমরা মনে করি, এ নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া নিঃসন্দেহে বড় এক সমস্যা। কিন্তু এর বাইরে থাকা অসংখ্য সব সমস্যার সমাধানও আমাদেরকে ভাবতে হবে। মানুষ স্বাভাবিক হয়েই বেড়ে উঠার সুযোগ দিতে হবে। আর এ কাজে প্রতিটি মানুষকেই ভূমিকা রাখতে হবে।