সহিংস উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়ার একক কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তার মতে, বিভিন্ন কারণে বিশেষ করে তরুণরা এতে জড়িয়ে যায়।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী যুব সংলাপ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মত প্রকাশ করেন।
ইউএনডিপির সহায়তায় সিটিটিসি ইউনিট এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।
জঙ্গিবাদের অভিযোগে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মনিরুল ইসলাম বলেন, উগ্রবাদে জড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বঞ্চনাবোধ। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশে মুসলিমরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। সেই বোধ থেকে কিছু তরুণ উগ্রবাদে জড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও তারা ভুল ব্যাখ্যার কারণে ওইদিকে ধাবিত হয়। এসব বঞ্চনার প্রতিবাদ আইনগতভাবে আমরা অবশ্যই করব, কিন্তু এর কারণে কেন আমরা প্রতিবেশীকে হত্যা করব?
তিনি বলেন, এছাড়াও পারিবারিক বন্ধন অনেকাংশে দায়ী রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা সন্তানদের সময় না দেওয়া, সন্তানরা কোথায় কী করছে তার প্রতি খেয়াল না রাখার কারণে বিষয়টি টের পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা রয়েছে, যেন শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক চিন্তার জায়গাটা সমৃদ্ধ হয়।
‘‘এক্ষেত্রে দারিদ্র ও বেকার সমস্যার পাশপাশি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানসিকতাও দায়ী। সাইবার স্পেস উগ্রবাদের কারণ নয়, এটা বড় একটা প্ল্যাটফর্ম। সাইবার স্পেস থেকে কে কী গ্রহণ করবে কতটুকু গ্রহণ করবে এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। ’’
খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত করা গেলে তরুণরা মননশীল হয়ে উঠবে। মননশীলতা তরুণদের উগ্রবাদ থেকে দুরে রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।
কারাগারে গিয়েও অনেক সাধারণ অপরাধী উগ্রবাদে জড়িয়ে যেতে পারে মন্তব্য করেন দীর্ঘ দিন ধরে জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিদের নিয়ে কাজ করা এ পুলিশ কর্মকর্তা।
বলেন, ‘একজন সাধারণ অপরাধী যদি কোন জঙ্গির সঙ্গে কারাগারে পাশাপাশি থাকে তাহলে সেই সাধারণ অপরাধী উগ্রবাদে ডাইভার্ট হতে পারে। এজন্য কারাগারগুলোতে কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
ইসলামে জোর-জবরদস্তির জায়গা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের এই ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার দায়িত্ব রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে সাসপেক্ট উগ্রবাদী মাতবাদে যারা জড়িয়ে যেতে পারে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিভিন্ন অভিযানে যারা মারা গেছে তাদের পরিবারের সঙ্গেও বসেছি।
এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া, শিক্ষা, তথ্য, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
কাউন্টার টেররিজমের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সিটিটিসি প্রধান বলেন, যারা প্রাণভরে জাতীয় সঙ্গিত গায়, আমরা মনে করি বাঙালি সংস্কৃতি উগ্রবাদের থাবা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। যারা লালন-রবীন্দ্রনাথের গান শোনে তারা কখনোই জঙ্গিবাদে জড়াতে পারে না।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নবনীতা চৌধুরী বলেন, কতদিন আর অন্যের ঘাড়ে দোষ দিব? বাবা-মা সময় দিচ্ছেনা, আমরা কতোটা বাবা-মায়ের কাছে নিজেদের তুলে ধরছি? তাই নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ না রেখে আমাদের মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে।
সংলাপে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
উগ্রবাদে জড়ানোর কারণ সম্পর্কে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিরা সুলতানা চামেলী বলেন, আমরা সমসাময়িক ঘটনা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখিনা। বিভিন্ন বিষয়ে গুজব ছড়ানোর প্রভাব পড়ে আমাদের উপর। তাই আমাদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ভিডিও গেমস ও মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট সম্পৃক্ততা তরুণদের মেজাজ বিগড়ে দিচ্ছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে বলে মত দেন এ শিক্ষার্থী।
সংলাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শবনম আজিম, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা রহমান, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকরা অংশ নেন।