জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব ম্যুরাল ও ভাস্কর্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি সাহেদ নুর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আদালতে এ সংক্রান্ত রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বশির আহমেদ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এর আগে গতকাল ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে করা আলাদা একটি রিট আবেদনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ দেশের সব ভাস্কর্যের নিরাপত্তা চাওয়া হয়। মঙ্গলবার সেই রিটের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
ওই রিটে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের নৈরাজ্য ও আইন শৃঙ্খলার অবনতি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ভাস্কর্য নিয়ে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়। এছাড়া রিটে রুলও চাওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উত্তম লাহেড়ীর পক্ষে করা ওই রিটের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও অ্যাডভোকেট এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।
সম্প্রতি ভাস্কর্য নিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর ক্রমাগত হুমকির মধ্যে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার দিবাগত রাতের আঁধারে কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে শহরের ব্যস্ততম পাঁচ রাস্তার মোড়ে ওই ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখমণ্ডল ও বাঁ হাতের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলে তারা।
কিছুদিন আগে রাজধানী ঢাকার দোলাইপাড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসলামপন্থী কয়েকটি দল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়।
তেমনই একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকায় খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরির তীব্র সমালোচনা করে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবে এবং ওই বুড়িগঙ্গায় ভাস্কর্য ছুঁড়ে ফেলবেন।’
একইদিন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম একটি অনুষ্ঠানে মামুনুল হকের সুরেই কথা বলেন।
কট্টর ইসলামপন্থীদের এমন বক্তব্যের সর্বপ্রথম তীব্র বিরোধীতা করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি ১৪ নভেম্বর বলেন, ‘যতটুকু বলেছেন ক্ষমা চেয়ে সাবধান হয়ে যান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করলে ঘাড় মটকে দেবো।’
কিন্তু এরপর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক ওয়াজ মাহফিলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী ভাস্কর্য নির্মাণের আবারও বিরোধীতা করে বলেন, ‘‘কোনো ভাস্কর্য তৈরি হলে তা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হবে।’’
ভাস্কর্য নিয়ে ওই ধর্মীয় নেতাদের এমন উগ্র বক্তব্যের পর তাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৮ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’।
তার দুইদিন পর ১ লা ডিসেম্বর মাঠে নামে দেশের ৬০টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের সংগঠন। নেতৃবৃন্দ দাবি তোলেন, বঙ্গবন্ধু ও সংবিধান অবমাননাকারী জুনাইদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের গ্রেপ্তার করতে হবে।
প্রথম দিকে অনেকটা নীরব থাকলেও পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়। পাশাপাশি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।