অবশেষে সব ধরণের শঙ্কা কাটিয়ে আগামি ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর আবাহনী মাঠে পাঁচ দিনব্যাপী শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভাল‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব-২০১৭’। সুরে, গানে এই পাঁচদিন মাতোয়ার থাকবে রাজধানীবাসী। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলবে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত। এমন ঘোষণায় দিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু।
গেল ২২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে হঠাৎ ঘোষণা করা হয়, এবছর হচ্ছে না বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভাল‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব’। জানানো হয়, নির্ধারিত স্থান রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে জায়গা বরাদ্দ না পাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তবে নভেম্বরের মাঝামাঝিতেই আর্মি স্টেডিয়ামের পরিবর্তে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হওয়া খবর দেন আয়োজক আবুল খায়ের লিটু। আর এবার অনুষ্ঠানটির আয়োজন নিয়ে বিস্তারিত কথা বললেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনের বলরুমে রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। এদিন লুভা নাহিদের উপস্থাপনায় সাংবাদিকদের সামনে ‘বেঙ্গলশাস্ত্রীয় সংগীত উৎসব’ নিয়ে সমস্ত পরিকল্পনা শেয়ার করেন আবুল খায়ের।
গেল পাঁচ বছর ধরে উচ্চাঙ্গসংগীতের নিয়মিত এই অনুষ্ঠানটি রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে হয়ে আসছে। নিরাপত্তার অজুহাত কিংবা অন্য কোনো কারণে একবারও থমকে যায়নি সংগীতের এই বৃহৎ উৎসবটি। উচ্চাঙ্গসংগীতের এই উৎসবটি মানুষের মনে এতোটাই জায়গা করে নিয়েছে যে, প্রতি বছর এটার জন্য প্রতীক্ষায় থাকেন সবাই। আর এই উৎসবটি যখন আয়োজন করার অনুমতি পাননি, তখন আবুল খায়ের লিটুর মানসিক অবস্থা কেমন ছিল?-তাও সাংবাদিকদের সামনে বর্ণনা করেন তিনি।
উৎসবটি আয়োজনের অনুমতি না পাওয়ার বিষয়টি টেনে এনে আবুল খায়ের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যখন আমরা উৎসবটি আয়োজনের অনুমতি পায়নি, তখন কিন্তু খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। আর এই কষ্ট থেকেই আমরা এবার আর বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীতের উৎসবটি করছি না বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের ফেস্টিভালটা হচ্ছে এটাই এখন বড় কথা।
তবে মনে মনে আশায় ছিলাম, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা সমাধান করবেনই। কারণ এই সরকারের আমলে যদি সংস্কৃতির বিকাশ না হয় তাহলে আর কারো সময়ে সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত আমার ধারণাই সত্যি হল। আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী, মাননীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী এই ফেস্টিভালটার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে খুব বিশাল রুল প্লে করেছেন। এইজন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি একটু বেশী কৃতজ্ঞ যে তিনি একটা সুন্দর সমাধান করেছেন। সবার ডিমান্ড তিনি রেখেছেন।
আর্মি স্টেডিয়ামে জায়গা বরাদ্দ না পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও মন্তব্য করেন লিটু। তিনি জানান, এইবার কোনো কারণে আমাদেরকে হয়তো আর্মি স্টেডিয়ামে জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়নি, কিন্তু তারমানে এই না যে সামনে থেকে আমরা আর সেখানে জায়গা পাবো না। আমরা যে সাপোর্ট আর্মি স্টেডিয়ামে পেয়েছি তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা বিশ্বাস করি আগামিতেই হয়তো আমরা সেখানে আবার বেঙ্গল উৎসব নিয়ে ফিরে যেতে পারবো। তবে ধানমন্ডির ঐতিহ্যবাহী আবাহনী ক্রীড়াচক্রের মাঠে এ-বছর উৎসবটির আয়োজন করতে পেরে গর্ববোধ করছি। ইতিমধ্যে এখানে এতো বিশাল উৎসব আয়োজনের সব ধরনের নিরাপত্তা বাহিনী থেকে আশ্বাসও আমরা পেয়েছি। তারা আমাদের খুব সহযোগিতা করছেন।
বেঙ্গল শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসব শুরু হচ্ছে ২৬ ডিসেম্বর। চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অনুষ্ঠানে প্রবেশের টিকেট পাওয়া যাবে ১৮ তারিখ থেকে। আয়োজনটি উৎসর্গ করা হচ্ছে শিক্ষাবীদ ড. আনিসুজ্জামানকে। আর স্পন্সর হিসেবে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে এবারও যুক্ত থাকছে স্কয়ার গ্রুপ এবং ব্র্যাক। বেঙ্গল শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসবের সম্প্রচার সহযোগি হিসেবে এবার যোগ দিয়েছে চ্যানেল আই।
ছবি: জাকির সবুজ