আজ বাদে কাল ঈদ-উল-আযহা। ঈদের আগে এখন চলছে কোরবানির জন্য পছন্দের পশুটি কেনার জন্য ছুটোছুটি। সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে পশু কিনে তার ছবি তুলেও সবার সঙ্গে শেয়ার করছেন অনেকেই।
তবে কোরবানির গরু-ছাগলের ছবি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেখা অনেকেই পছন্দ করছেন না। ছবিগুলো নিয়ে বিরক্তি প্রকাশের পাশাপাশি ট্রলও চলছে ব্যাপক। এই ইস্যু নিয়ে অতি-প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রতিবাদ করে ফেসবুকেই একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ব্লগার ও সাংবাদিক আরিফ জেবতিক। দীর্ঘ সেই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন:
‘আমার ফিডে নব্য ফেসবুক পুলিশদের আবির্ভাব হয়েছে যারা বড় বড় হুংকার দিচ্ছেন- ‘গরুর ছবি দিলে আনফ্রেন্ড করে ফেলব’, ‘আনফলো করে ফেলব’! কোরবানির গরু যে এতবড় নিষিদ্ধ বস্তু হয়ে গেছে – সেটা আমার জানা ছিল না! আমাদের সস্তা রসিকতা চলছে, ‘কোরবানির পশুর ছবি দিলে ট্যাগ করে দিয়েন – কোনটা আপনি কোনটা গরু।’ টিনএজ দুটো মেয়ে তাদের কোরবানির গরুর সাথে ছবি তুলে হয়তো নেহায়েতই নিজেদের ভাই-বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করেছে। সেই ছবি শেয়ার দিয়ে বানিয়ে ট্রল করা হচ্ছে! ‘একটি গরু আর দুইটি ছাগল’ – এটা হচ্ছে ট্রলকারির সর্বোচ্চ বুদ্ধিমান ক্যাপশন।
সবাই গরুর ছবির উপরে এত গোস্বা করেছে কেন কে জানে! ব্যক্তিগতভাবে আপনি গরুর ছবি দেখতে চাইতে না পারেন, কিন্তু ‘আমি কিন্তু আনফ্রেন্ড করে ফেলব’ জাতীয় হাস্যকর হুমকি দেয়ার মানে কী ভাই? আমার ফ্রেন্ডলিস্ট কি ভিকারুন্নেসা স্কুলের এডমিশনের সিট যে এটা হারিয়ে ফেলার ভয়ে লোকে কাচুমাচু হয়ে যাবে?
ঈদ একটা উৎসব। কোরবানির হাটে যাওয়া একটা উৎসব, গরুর গোবরে পাড়া দেয়া একটা উৎসব, গরু খেদিয়ে বাড়ি নিয়ে আনা, গরুকে দানাপানি খাওয়ানো, গোসল করানো-সবই একেকটা উৎসব। মানুষ আনন্দ করবে, ইচ্ছে হলে গরুর ছবি দেবে, ইচ্ছে হলে গোবরের ছবি দেবে – আপনি একটা বড় সামাজিক উৎসবে কে কী করবে সেটা বেঁধে দিচ্ছেন কেন? আপনি সেই উৎসবের অংশ না হতে না পারেন, অন্যের উপর পুলিশি করে হুমকি ধামকি দেয়ার দরকার কী?
একটা ফ্রেন্ডলিস্টে নানা ধরনের মানুষ থাকবে, তাদের নানা মত নানা রুচি থাকবে। যার সঙ্গে পোষাবে না তাকে বাদ দিন, কিন্তু ‘বাদ দিয়া দিমু’, ‘খাইছি তোরে’ জাতীয় হুমকি দিতে থাইকেন না, হাস্যকর দেখায়।
একজনের গরুর ছবি দেয়া না দেয়া যদি তার সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব রক্ষার নিয়ামক হয়, তাহলে আপনে আসলে বন্ধুত্বের একেবারে ন্যূনতম কিছুই জানেন না।
(আমি ভাবছিলাম আমার গরুর ছবি দেব, নেহায়েত বাজেটের তুলনায় গরুটি দেখতে ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক’ মনে হবে বিধায় দিচ্ছি না।)
এনজয় দ্য ফেস্ট।
গরুর ছবি কি গোবরের ছবি – দিতে থাকুন ইচ্ছে মতো।
ফেসবুক পুলিশিংকে না বলুন।’