জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক। তথ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপে দেখা যায়, দেশে মোট ফেসবুক ব্যবহারকারী ৩ কোটি ৫৭ লাখ, প্রতি ১২ সেকেন্ডে খোলা হচ্ছে নতুন অ্যাকাউন্ট। গত এক বছরে যে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে কোনো সন্দেহ নেই।
জনপ্রিয় এই সামাজিক মাধ্যমটির নিত্যনতুন ফিচারের কিছু খুঁটিনাটি সুবিধাও রয়েছে, যে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। অথবা জানলেও পরীক্ষা করে দেখিনি। চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য রইল ফেসবুকের এমনই কিছু ফিচার ও অপশন সম্পর্কে তথ্য।
প্রোফাইল পিকচারে লাইক-কমেন্ট চাই না
ফেসবুক ব্যবহারকারীরা জানেন, তাদের নিজের প্রোফাইল পিকচার এবং কাভার ফটো সবসময় ‘পাবলিক’ থাকে। অর্থাৎ যে কেউ তা দেখতে পারবে এবং লাইক-কমেন্টও করতে পারবে। ছবিটি ক্লিক করলেই যে কেউ অন্যদের দেয়া লাইক বা কমেন্টগুলো দেখতে পারবে। কিন্তু আপনি হয়তো চাইছেন, ছবি দু’টো মানুষ দেখুক, কিন্তু লাইক-কমেন্ট যেন দিতে বা অন্যদেরটা দেখতে না পারে।
কাভার ফটোর ক্ষেত্রে এটা সম্ভব না হলেও প্রোফাইল পিকচারের ক্ষেত্রে তা করা যায়। এজন্য প্রোফাইল পিকচারের ডানদিকে ‘প্রাইভেসি’ আইকনটিতে ক্লিক করে সেখানে ‘পাবলিক’র বদলে ‘অনলি মি’ সিলেক্ট করলেই সবাই আপনার প্রোফাইল পিকচারটি দেখতে পারবে। কিন্তু লাইক-কমেন্ট করতে ও আগের দেয়া লাইক-কমেন্ট দেখতে পারবে না। আর শুধু বন্ধুদের সেই সুযোগ দিতে চাইলে ‘অনলি মি’র বদলে ‘ফ্রেন্ডস’ অথবা কাস্টোমাইজ করতে পারবেন।
মেসেজের জবাব দেয়ার জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না!
ইনবক্সে কারও মেসেজ ওপেন করে পড়তে পারলেও জবাব দিতে পারছেন না। কারণ রিপ্লাই লেখার জায়গাটাই নেই সেখানে! এর পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। হতে পারে ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মালিক আপনাকে ব্লক করেছে, অথবা আপনিই তাকে ব্লক করেছেন। এছাড়া মেসেজ প্রদানকারী ব্যক্তি যদি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে রাখেন, সেক্ষেত্রে তার মেসেজের জবাব দেয়া যাবে না।
রঙিন ইনবক্স!
আপনি চাইলে অন্তত ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে মেসেজের থ্রেডগুলোর রঙ পাল্টে দিতে পারেন। এজন্য মেসেঞ্জার অ্যাপে গিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কনভার্সেশনে ঢুকে ‘ডিটেইলস’ মেন্যুতে গিয়ে ‘কালার’ ট্যাবে ঢুকলেই দেখতে পাবেন বেশ কিছু রঙের সিলেকশন, যেখান থেকে আপনি বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের রঙটি।
কম্পিউটার ব্রাউজার থেকেও চ্যাটবক্সের রঙ পাল্টানো সম্ভব। এজন্য চ্যাটবক্সের ডান কোণে গিয়ার আইকনটি থেকে ‘চেঞ্জ কালার’ অপশনে গিয়ে অন্য রঙ নির্বাচন করা যাবে।
কাছের মানুষের সঙ্গে আলাপে ভিন্ন আয়োজন: নিকনেম, ইমোজি
বন্ধু, ভাইবোন আর কাছের মানুষকে ফেসবুক চ্যাটেও ভিন্ন নামে ডাকার সুযোগ রয়েছে। যা জানবেন শুধু যিনি নাম দিলেন, আর যাকে নাম দিলেন। এজন্য মেসেঞ্জারের ‘ডিটেইলস’ মেন্যু থেকে ‘নিকনেমস’ অপশনে গেলে চ্যাটবক্সে কথা বলা দু’জনেরই নিকনেম বদলানোর অপশন আসবে। একবার নিকনেম দেয়ার পর চাইলে যে কোনো সময় তা মুছে ফেলা যাবে।
একইভাবে অন্য কোনো ইমোজিও যোগ করতে পারেন, যা শুধু ওই কনভার্সেশনের জন্য লাইক বাটনটির পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে। এজন্য ‘ডিটেইলস’ থেকে ‘ইমোজি’ অপশনে গিয়ে পছন্দমতো ইমোজিটি বেছে নিন।
তবে ব্রাউজার থেকে নিকনেম বা ইমোজি দেয়া অথবা বদলানোর সুযোগ নেই।
বিরক্তিকর মেসেজের নোটিফিকেশন বন্ধ
মেসেঞ্জারে বিরক্তিকর নোটিফিকেশন বন্ধ রাখতে মেসেঞ্জারে ওই ব্যক্তির চ্যাটবক্স থেকে আবার ‘ডিটেইলস’ মেন্যুতে গিয়ে ‘নোটিফিকেশনস’ অপশন থেকে কতক্ষণের জন্য ওই ব্যক্তির কাছ থেকে আসা মেসেজের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখবেন তা সিলেক্ট করে ‘ওকে’ চাপুন।
লুকানো ইনবক্স!
ফেসবুক ইনবক্সের আরেকটা অংশ হলো ‘মেসেজ রিকোয়েস্ট’। আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই এবং আপনি নিজে থেকে যোগাযোগ করেননি এমন ব্যক্তিদের মেসেজ জমা হয় সেখানে। কিন্তু এর বাইরেও ইনবক্সের আরেকটি অংশ আছে, যার নাম ‘ফিল্টার্ড রিকোয়েস্ট’। অপরিচিত ব্যক্তিদের পাঠানো যেসব মেসেজ ফেসবুক ‘স্প্যাম’ মনে করবে, সেগুলো ফিল্টার হয়ে চলে যায় সেই ইনবক্সে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফিল্টার্ড রিকোয়েস্টগুলো অদেখাই থেকে যায়।
মেসেজগুলো দেখতে মেসেঞ্জারের ‘অ্যাক্টিভিটি’ মেন্যু থেকে ‘মেসেজ রিকোয়েস্ট’ অপশনে যান। সেখানে নিচে কিছুটা নামলেই ‘ফিল্টার্ড রিকোয়েস্ট’ নামে আলাদা করে রাখা মেসেজগুলো দেখতে পাবেন। এছাড়াও কম্পিউটার ব্রাউজারে ফেসবুক হোমপেজ থেকে ‘মেসেজেস’ ট্যাবে গিয়ে ওপরে বামদিকে ‘মোর’ অপশন থেকে ‘ফিল্টার্ড’ ক্লিক করলে মেসেজগুলো পাওয়া যাবে।
গোপন মেসেজ হোক আরও গোপন
ফেসবুক ইনবক্সের গোপনীয়তার চেয়েও বেশি গোপনীয়তার জন্য ফেসবুকের ‘সিক্রেট কনভার্সেশন’ ফিচারটি। এজন্য মেসেঞ্জারের একেবারে ডানদিকের ‘প্রোফাইল মেন্যু’তে গিয়ে ‘সিক্রেট কনভার্সেশন’ অপশনটি চালু করুন। এতে আপনার ওই ডিভাইসটি থেকে অন্য কারও মেসেঞ্জারে গোপন মেসেজ পাঠাতে পারবেন, যা অন্য কোনো ডিভাইস থেকে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুকলে দেখা যাবে না। তারপর যাকে মেসেজ পাঠাতে চান তার চ্যাটবক্স খুলে ‘ডিটেইলস’ মেন্যু থেকে ‘সিক্রেট কনভার্সেশন’ সিলেক্ট করুন। এতে নতুন আরেকটি চ্যাটবক্স চালু হবে তার ছবিসহ।
এই গোপন চ্যাটবক্সকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে এর সবকিছুর রঙ কালো। এতে শেয়ার করা সবকিছু বিশেষ কোডে এনক্রিপ্টেড, যার তথ্য খোদ ফেসবুকও সংরক্ষণ করে না। চাইলে আপনি টাইমার অপশন থেকে গোপন মেসেজ অপর পক্ষ দেখার ঠিক কতক্ষণ পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাবে তাও ঠিক করে দিতে পারেন।
সিক্রেট কনভার্সেশন ব্যবহার করতে আপনার ডিভাইসে থাকতে হবে মেসেঞ্জারের সর্বশেষ সংস্করণ। ফেসবুকের ব্রাউজার ভার্সন বা মেসেঞ্জার ডট কম থেকে এই সুবিধাটি পাওয়া যাবে না।