চেহারা বদলের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয় অ্যাপ ফেসঅ্যাপের দখলে এখন বিশ্বের ১৫ কোটিরও বেশি মানুষের ছবি। আর এসব ছবি আমরা নিজেরাই তুলে দিয়েছি তাদের হাতে।
এমনকি এসব ছবি যে কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অনুমতিও দিয়ে রেখেছি। অথচ জানিও না সেই ছবি দিয়ে আসলে কী করা হবে।
ফেসঅ্যাপের কল্যাণে ব্যবহারকারীরা তাদের চেহারার অভিব্যক্তি, ধরন ও বয়স বদলে ফেলতে পারে। এমনকি ছেলে থেকে মেয়ে বা মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে যাওয়াটাও কোনো ব্যাপার না এই অ্যাপ দিয়ে।
সম্প্রতি অ্যাপটির নতুন ওল্ড মাস্ক সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে গেছে। ছবিতে এমনই অদ্ভুত সব পরিবর্তন আনার ক্ষমতা ফেসঅ্যাপ দিয়েছে।
কিন্তু তার বিনিময়ে ব্যবহারকারীরা ফেসঅ্যাপকে তার চেয়েও বড় ক্ষমতা দিয়ে ফেলেছেন। আর তা হলো যে কোনো উদ্দেশ্যে, যতদিন খুশি নিজেদের ছবি ও নাম ব্যবহারের ক্ষমতা।
গুগল প্লে স্টোর থেকে এ পর্যন্ত ১০ কোটিরও বেশি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী ফেসঅ্যাপ ডাউনলোড করেছেন। এখন তো অ্যাপল অ্যাপ স্টোরেও ১২১টি দেশের মধ্যে এটি শীর্ষ র্যাংক পাওয়া অ্যাপ বলে জানিয়েছে অ্যাপ বিষয়ক জরিপ সংস্থা অ্যাপ অ্যানি।
২০১৭ সাল থেকেই বহুল ব্যবহৃত ও ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও বুড়ো হওয়ার নতুন ফিল্টারটি যোগ করার পর থেকে ফেসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা আরেক দফা বেড়ে গেছে ভার্চুয়াল জগতে। আর তখন থেকেই কেউ কেউ এর ‘টার্মস অব সার্ভিস’ বা ‘সেবাদানের শর্তাবলী’ নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছে।
তাদের অভিযোগ, ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাত্ত সংগ্রহ করছে ফেসঅ্যাপ।
ফেসঅ্যাপের টার্মস অব সার্ভিস অনুসারে, অ্যাপ দিয়ে তোলা বা এডিট করা নিজের ছবির মালিকানা ব্যবহারকারীরই থাকবে। কিন্তু সেই ছবিটি দিয়ে যা খুশি করার, যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করার বাতিলের অযোগ্য লাইসেন্স থাকবে ফেসঅ্যাপ কোম্পানির কাছে।
ছবিটি চাইলে কোম্পানি যেখানে সেখানে প্রকাশ করতে পারবে, সেটিতে পরিবর্তন আনতে পারবে। এমনকি ব্যবহারকারীর ইউজারনেমসহ ছবি অন্য পক্ষের কাছে দিয়ে দিতে পারবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি ব্যবহারকারী শেয়ার করলে সেই অ্যাকাউন্টের লিংক, এমনকি প্রোফাইল পিকচারও যে কোনো ব্যক্তির কাছে প্রকাশ করতে পারবে ফেসঅ্যাপ।
আর সেজন্য যার ছবি তাকে একটি পয়সাও দিতে হবে না তাদের।
আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টিকে খুব একটা বিপজ্জনক মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া ফেসঅ্যাপ এক বিবৃতিতে বলেছে, আপলোড করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নিজেদের সার্ভার থেকে ছবি ডিলিট করে দেয় তারা। আর ব্যবহারকারীরা যে সব ছবি এডিটিং করার জন্য নির্ধারণ করেন শুধু সেসব ছবিই আপলোড করে থাকে অ্যাপটি। অন্য কোনো ছবি নয়।
কিন্তু ভবিষ্যতে যে ছবিটি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার বা বিক্রি করে দেয়া হবে না, সেটা কে বলতে পারে? ফেসঅ্যাপের নির্মাতা রুশ কোম্পানি ওয়্যারলেস ল্যাব হয়তো কোনো বিজ্ঞাপনের জন্য আপনার ছবি ব্যবহার করল।
অথবা কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে তারা আপনার ছবিটি বিক্রি করে দিলো, যারা আপনার ছবি ব্যবহার করল গবেষণার অ্যালগরিদমে।
আর একদিন আপনি দেখলেন, একটি রুশ এআই সিমুলেশনের চেহারা ঠিক আপনার মতো!
এ সবই ধারণা বা আশঙ্কা। ফোনএরিনা’র লেখক পিটার কস্তাদিনোভের মতে, একজন ব্যবহারকারীই সিদ্ধান্ত নেবেন এসব ভবিষ্যৎ ব্যবহার বা অপব্যবহারের বিষয়গুলো তার জন্য দুশ্চিন্তার কিনা। দুশ্চিন্তার হলে ফেসঅ্যাপকে ছবি দেয়া যাবে না। নইলে ইচ্ছেমতো ছবি আপলোড করুন আর নিজের চেহারা পাল্টে মজা নিতে থাকুন।