আন্তর্জাতিক ফুটবলে সম্প্রতি বাজে পারফরম্যান্সের জন্য ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে আবারো অবনমন হয়েছে বাংলাদেশের। বৃহস্পতিবার বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঘোষিত সর্বশেষ র্যাঙ্কিংয়ে ১৮৫ থেকে তিন ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৮৮।
দেশের ফুটবলের মান যদি পরিবর্তন না হয় তবে একদিন ডাবল সেঞ্চুরি স্পর্শ করবে বাংলাদেশের ফুটবল। এর উত্তরণের পথ হিসেবে সাবেক খেলোয়াড়, ফুটবল বিশেষজ্ঞ ও সংগঠকরা বলছেন জেলা পর্যায়ের মাধ্যমে সারা দেশে ফুটবল ছড়িয়ে দিতে হবে। ফুটবলের অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। অপরদিকে বাফুফের কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা। ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে সকলের সহযোগিতা নিয়ে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে চেয়েছে তারা।
গত ১০ অক্টোবর এএফসি এশিয়া কাপ প্লে-অফ-২-এর অ্যাওয়ে ম্যাচে ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায় বাংলাদেশ, যাকে দেশের ফুটবল ইতিহাসে চরমতম কলঙ্কের দিন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এরপর ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২১১ খেলুড়ে দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৮তম।
দেশের ফুটবল উত্তরণের পথ কি এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় শামসুল আলম মঞ্জু চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ফুটবল কখনোই বাৎসরিক ফলাফলের গ্রাফ হতে পারে না। আমাদের দেশের ফুটবলের অবকাঠামো রয়েছে, তবে তা বর্তমান বাফুফে কমিটির দ্বারা ভেঙ্গে পড়েছে। সবার আগে আমাদের এর থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন: সারা দেশব্যাপী ফুটবল জাগরণ তৈরী করতে হবে। ক্লাব পর্যায়ে ডিভিশন ফুটবলে দেশী কোচদের সঙ্গে বিদেশী কোচের সংমিশ্রণ তৈরি করতে হবে। ১০জন বিদেশী কোচ থাকলে ৩০জন দেশী কোচ থাকতে হবে।
ফুটবলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক মাঠ কাঁপানো তারকা ও সংগঠক শামনুল আলম মঞ্জু বলেন: যে কোনো খেলার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার, এবং সঠিক বাস্তবায়ন দরকার। আপনি যদি আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন আজ পরীক্ষিত। অজপাড়া থেকে উঠে আসা মোস্তাফিজের পেস জাদুতে কাবু বিশ্বের তারকা ক্রিকেটাররা। কিংবা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের অভিষেকেই মেহেদি হাসান মিরাজের ৬ উইকেট। এগুলো হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনার জন্য। বাফুফে’র উচিত দেশের স্বার্থে, ফুটবলের স্বার্থে সারা দেশের জেলা পর্যায়ের কোচ, জাতীয় পর্যায়ের কোচ, সাবেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে বসে দশ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে ফুটবলের জন্য ভালো কিছু করা।
তবে বাফুফে’কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মঞ্জু বলেন, অদক্ষ, অশিক্ষিত সালাউদ্দিন কমিটি কখনোই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে পারবে না।
বাংলাদেশের ফুটবলেরে উত্তরণ আর হারিয়ে যাওয়া সুদিন ফেরাতে হলে কী করণীয় এমন প্রশ্নের উত্তরে মঞ্জুর কথার প্রতিধ্বনিত হয়েছে বাংলাদেশের সেরা ফুটবল বিশ্লেষক ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এসবের উত্তর দিবেন সালাউদ্দিন। উনি চমকপ্রদ কথা দিয়ে তিন বছরের মধ্যে ফুটবলের পরিবর্তন আনবেন। যে গত আট বছরে কিছুই করতে পারল না সে কিভাবে তিন বছরে ফুটবলের উন্নয়ন করবে।
আক্ষেপের সুরে ফুটবল বিশ্লেষক টিপু বলেন: দেশের ফুটবল ও ভবিষ্যত খেলোয়াড়রা জিম্মি। বাফুফে সভাপতির সঙ্গে কমিটির কেউ ফুটবল উন্নয়ন নিয়ে কথা বলার সাহস পায় না। সে কারো কথা শোনে না। কারণ সে ছাড়াতো কেউ আর ফুটবল বুঝে না।
বাংলাদেশের সেরা কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু বলেন: বাফুফের কমিটিতে আট থেকে দশ জন সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় রয়েছে। কিন্তু সভাপতি সালাউদ্দিন তাদের সঙ্গে ফুটবল নিয়ে কেনো মত বিনিময় করে না সেটা একমাত্র সালাউদ্দিন নিজেই জানেন। দেশের ৬৪টা জেলায় কোনো জেলা পর্যায়ে খেলা হয় না। জেলা পর্যায়ে ফুটবলের উন্নয়ন না হলে সার্বিকভাবে ফুটবলের উন্নতি হবে না। উন্নত খেলোয়াড় তৈরী করতে হলে খেলোয়াড়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আর জেলা পর্যায়ে ফুটবল না হলে খেলোয়াড়ের পরিমাণ বাড়বে না। এর ফলতো আমরা দেখতে পারছি, এমিলি সারা বছর ৪৫ মিনিট ফুটবল খেলে জাতীয় দলে চান্স পায়।
দেশের ফুটবলে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অবনমন ও বর্তমান ফুটবলের অবস্থার উন্নয়নের জন্য কি বলছে বাফুফে’র কর্তাব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সত্যিই সম্প্রতি দেশের ফুটবলের পারফরম্যান্স হতাশাজনক । আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা স্বত্ত্বেও আমরা খেলোয়াড়দের সার্বিক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু কোনো আউটপুট পাচ্ছি না।
জাতীয় দল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে জানিয়ে সালাম মুর্শেদী বলেন: সার্বিক ফুটবলে আমরা পরিবর্তন আনব। ঘরোয়া লিগ থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে সব কিছু নতুন ভাবে ঢেলে সাজানো হবে।আমাদের পাইপ লাইনে কোনো প্লেয়ার নেই, তাই ট্যালেন্ট হান্ট খুঁজে ফুটবলের জন্য বয়সভিত্তিক ক্যাম্প চালু করব। আমরা ফুটবল উন্নয়নের জন্য দু্ই থেকে তিন বছর সময় নিবো।
ফুটবলের এমন হতাশাজনক পাফরম্যান্সের কথা তুলে ধরে বাফুফে’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন: যা হয়েছে তার থেকে দায় এড়ানো কিছু নেই। সরকার থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।