কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর, জন্মের পর পারিবারিকভাবে এমন নামই ছিলো। চলচ্চিত্রে পা রেখে সেই নাম পরিবর্তন করে সকলের কাছে তিনি হয়ে উঠেন শাবনূর। বাংলা চলচ্চিত্রে শাবানা, ববিতাদের পর যাদেরকে উত্তরসূরি মনে করা হতো তাদের মধ্যে সর্বগ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পুরো ফিল্ম ক্যারিয়ারে তার মতো সফল অভিনেত্রীর সংখ্যা হাতে গোনা!
চলচ্চিত্র ছেড়ে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ খুঁজে নিয়েছিলেন শাবনূর। সংসার জীবন শুরু করেছিলেন অনিক মাহমুদ হৃদয়ের সঙ্গে! জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসেও ভেবেছিলেন সফল হবেন। কিন্তু অদৃষ্টের লিখন নাকি খণ্ডানো দায়! ফিল্ম ক্যারিয়ারে সফল হলেও সংসার জীবনে ব্যর্থতার মুখে ‘এ বাধন যাবেনা ছিঁড়ে’র এই অভিনেত্রী!
নব্বইয়ের শুরুতে ‘চাঁদনি রাতে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন শাবনূর। প্রথম ছবিটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। তবে ভেঙে পড়েননি তিনি। এরপর তিন বছরের মধ্যে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র সঙ্গে জুটি বেধে এক ডজনের বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। প্রতেক্যকেটি ছবিই তুমুল ব্যবসায়িক সফলতা এনে দেয়। সালমানের মৃত্যুর পরও সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন শাবনূর। তার ছবি মানেই হিট!
শূন্যের দশকে চলচ্চিত্রের প্রচণ্ড খারাপ সময়ের মধ্যেও দারুণ সফল ছিলেন শাবনূর। সেই দশকের শেষ দিক থেকেই চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়েন।
২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে শাবনূরের আংটি বদল হয় এবং ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাকে বিয়ে করেন। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি প্রথম ছেলে সন্তানের মা হন। বাস্তবের স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে ঘর বেধে চলে গিয়েছিলেন সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়।
কিন্তু যে জীবনের আশায় সংসার জীবন শুরু করেছিলেন শাবনূর, সেই সংসারই বিলীন হওয়ার পথে। ‘হৃদয়ের বন্ধন’-ছবির এই নায়িকা জানিয়েছেন, ক্যারিয়ারে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সবার গ্রহণযোগ্য অভিনেত্রী হিসেবে মানুষের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। সংসারজীবন শুরু করেছিলাম ভালো থাকার আশায়। চলচ্চিত্রে সবার ভালোবাসা পেলেও সংসারজীবনের ভালোবাসা আমার ভাগ্যে লেখা ছিল না।
কেন সংসারের ইতি টানছেন ‘প্রেমের তাজমহল’-এর এই নায়িকা? জানালেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই স্বামী অনিকের সঙ্গে অনেক বিষয়ের অমিল হচ্ছিলো শাবনূরের। আর পেরে না উঠে আলাদাও থাকছিলেন তারা। কিন্তু এরমধ্যেও নিজেকে শুধরাতে পারেনি অনিক। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই ডিভোর্স এর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘নারীর মন’ ছবির নায়িকা।
তিনি জানিয়েছেন, ‘পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল ছিলো না অনিক। বিশেষ করে সন্তান জন্মের পর তার আচরণে মোটেও একজন দায়িত্বশীল মানুষের চিহ্ন ছিলো না। অনেকবার বলার পরও তার দায়িত্ব আর আচরণগত পরিবর্তন আসেনি। তাই ভাবলাম, এভাবে থাকার চেয়ে না থাকাটাই ভালো।’
বদনাম, দোষারোপ বা কাদা ছোঁড়াছুড়ি করে নয়, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই নিজের মতো করে আলাদা থাকতে চান অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলার ছবির এই নায়িকা।
শাবনূরের ডিভোর্স-এর মামলাটি দেখাশোনা করছেন অ্যাডভোকেট কাওসার আহমেদ। চ্যানেল আই অনলাইনকে বুধবার দুপুরে তিনি জানিয়েছেন, গত ২৬ জানুয়ারি অনিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করেছেন শাবনূর। গত ৪ ফেব্রুয়ারি অনিকের উত্তরা এবং গাজীপুরের বাসার ঠিকানায় সেই নোটিশ পাঠানো হয়। উত্তরার বাসা পরিবর্তন করায় সেই নোটিশটি ফেরত এসেছে। তবে স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো নোটিশটি হয়তো শাবনূরের স্বামী হাতে পেয়েছেন।
শাবনূরের স্বামী কি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, যদি তিনি নোটিশটি এখনও হাতে না পেয়ে থাকেন? এমন প্রশ্নে শাবনূরের আইনজীবী বলেন, উনাকে ব্যক্তিগতভাবে জানানোর কোনো সুযোগ আমাদের নেই।
এদিকে শাবনূরের স্বামী অনিকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।