চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ফিরে দেখা ২০২১: বাংলা সিনেমার হালচাল

বছর শেষে ঢালিউড

করোনা পরবর্তী নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর ছিল ২০২১। যদিও করোনার রেশ পুরোপুরি কাটেনি এ বছরেও। তারপরও মহামারীর ছোবল থেকে বেরিয়ে আসতে ২০২১ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা বেশ লক্ষণীয়! বছর শেষে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব থাকলো এই প্রতিবেদনে…

প্রেক্ষাগৃহে ১২ মাসে ৩২ সিনেমা
২০২১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে মাত্র মোট ৩২টি সিনেমা। যার মধ্যে ২টি ছিল আমদানি। একনজরে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার তালিকা: কেন সন্ত্রাসী ( ১ জানুয়ারি), রংবাজি দ্য লাফাঙ্গা (৫ ফেব্রুয়ারি), পাগলের মতো ভালোবাসি  (১৯ ফেব্রুয়ারি), তুমি আছো তুমি নেই (১২ মার্চ), গন্তব্য (১৯ মার্চ), অলাতচক্র  (১৯ মার্চ), স্ফুলিঙ্গ (২৬ মার্চ), প্রিয় কমলা (২৬ মার্চ), টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই (২ এপ্রিল), যৈবতী কন্যার মন (২ এপ্রিল), সৌভাগ্য (১৩ মে), নবাব এলএলবি (২৫ জুন), কসাই (১৬ জুলাই), আগস্ট ১৯৭৫ – (২২ আগস্ট), নারীর শক্তি (১০ সেপ্টেম্বর), চোখ (পহেলা অক্টোবর), মুজিব আমার পিতা (১ অক্টোবর), পদ্মাপুরাণ (৮ অক্টোবর), চন্দ্রাবতী কথা (১৫ অক্টোবর), ঢাকা ড্রিম (২২ অক্টোবর), এ দেশ তোমার আমার (৫ নভেম্বর), রেহানা মরিয়ম নূর (১২ নভেম্বর), হৃদয়ের আঙ্গিনায় (১৯ নভেম্বর), নোনা জলের কাব্য (২৬ নভেম্বর), মিশন এক্সট্রিম (৩ ডিসেম্বর),  লাল মোরগের ঝুঁটি (১০ ডিসেম্বর), কালবেলা (১০ ডিসেম্বর), মৃধা বনাম মৃধা (২৪ ডিসেম্বর)।

‘চিরঞ্জীব মুজিব’ ও ‘রাত জাগা ফুল’ মুক্তি পাচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। সাফটা চুক্তির আওতায় আমদানিকৃত চলচ্চিত্র ‘বাজী’ মুক্তি পায় ১৫ অক্টোবর এবং ‘গোলন্দাজ’ মুক্তি পায় ১৯ নভেম্বর।

যাচ্ছে তাই সিনেমা দিয়ে বছর শুরু
বছরের শুরুটাই হয়েছিল মানহীন সিনেমা দিয়ে। ১ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল রবিউল ইসলাম রাজ পরিচালিত ‘কেন সন্ত্রাসী’ সিনেমাটি। এরপর ‘রংবাজি-দ্যা লাফাঙ্গা’, ‘তুমি আছো তুমি নেই’, ‘নারীর শক্তি’, ‘হৃদয়ের আঙ্গিনায়’ সহ অনেকগুলো মানহীন সিনেমা মুক্তি পায়। বরাবরের মতো যেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শক।

ভিন্নধারার সিনেমা ‍মুক্তি বেশি
২০২১ সালে ভিন্নধারার সিনেমা মুক্তি বেড়েছে। অরণ্য পলাশের ‘গন্তব্য’, হাবিবুর রহমানের ‘অলাতচক্র’, তৌকীর আহমেদের ‘স্ফুলিঙ্গ’, রাশিদ পলাশের ‘পদ্মাপুরাণ’, এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’, প্রসূন রহমানের ‘ঢাকা ড্রিম’, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘নোনা জলের কাব্য’, সানী সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদের ‘মিশন এক্সট্রিম’, নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’, রনী ভৌমিকের ‘মৃধা বনাম মৃধা’ সিনেমাগুলো প্রসংশা কুড়িয়েছে দর্শক-সমালোচক মহলে। বছরের শেষ মুক্তি পেয়েছে বেশ কয়েকটি অনুদানের সিনেমা।

শাকিব খান-আরিফিন শুভ’র বাজিমাৎ
চলতি বছরের ২৫ জুন মুক্তি পায় শাকিব খানের আলোচিত সিনেমা ‘নবাব এলএল.বি’। ধর্ষণের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ হিসেবে এই সিনেমাটি অনেকটাই দলিল হয়ে থাকবে। এতে একজন আইনজীবীর চরিত্রে শাকিব তার ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা অভিনয় দেখিয়েছেন। মুক্তির পর সিনেমাটি নিয়ে দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সিনেমাটিতে ধর্ষিতা নারীর চরিত্রে স্পর্শিয়ার অভিনয় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। অন্যদিকে বছর শেষে আরিফিন শুভ অভিনীত ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবিটিও দারুণ সাড়া ফেলে। ৩ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি দেশের দর্শকের পাশাপাশি দেশের বাইরেও বেশ আলোচিত হয়।

সিনেমা মুক্তিতে এগিয়ে ডিপজল-নিরব
২০২১ সালে সিনেমা মুক্তির দিক থেকে এগিয়ে আছেন ডিপজল এবং নিরব। দুটি করে সিনেমা মুক্তি পেয়েছে তাদের। ডিপজলের সৌভাগ্য ও এদেশ তোমার আমার মুক্তি পায়। নিরবের কসাই ও চোখ সিনেমা দুটি মুক্তি পায়। এছাড়া পরীমনি, অপু বিশ্বাস, মাহি, আরিফিন শুভ অভিনীত একটি করে সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এ বছর।

আলোচনায় তারা
আড়াল ভেঙে বছরের শুরুতেই দেশে ফেরেন চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী। বছরের শুরুর আলোচনাটা তাকে দিয়েই। পরে সিনেমা মুক্তি নিয়ে দীঘি ও দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পাল্টাপাল্টি মন্তব্যে মেতে ছিল নেটিজনরা। পরে মাদককাণ্ডে নতুন আলোচনার জন্ম দেন পরীমনির দিকে। মামলা, জেল, আদালত ইস্যুতে বেশ আলোচনা সমালোচনায় ছিলেন তিনি। বছর শেষে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন মাহিয়া মাহি ও ইমন। ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁসের পরই আলোচনায় তারা। এছাড়া বছর জুড়ে আলোচনায় ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমার কারণেই আলোচনায় তিনি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ সফল এ অভিনেত্রী।

শাপলা মিডিয়ার ১০০ সিনেমার ঘোষণা
জাজ মাল্টিমিডিয়া ব্যাকফুটে চলে যাওয়ার পর শাপলা মিডিয়া ১০০ সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দেয় বছরের শুরুতে। যা চমকে দিয়েছে গোটা চলচ্চিত্র পাড়া! চলচ্চিত্রের অনেকেই বলছেন, পরিচালক সমিতির নির্বাচন এক পক্ষকে এমন সিদ্ধান্ত নেয় শাপলা মিডিয়া। যদিও এসব সিনেমার পরে আর কোনো হিসেব মেলেনি। তবে ১০০ সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা বেশ আলোচনার জন্ম দেয়।

 নতুন উদ্যোম
বছর শেষে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলছেন অনেকে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এ বছর সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা বেড়েছে। একক প্রযোজনা এবং অনুদানের সিনেমাও নির্মিত হয়েছে অনেকগুলো। এছাড়া বেশ কিছু নতুন নির্মাতারা সিনেমা নির্মাণে এসেছেন। তাদের মাধ্যমে নতুন বছরে নতুন উদ্যোমে ঘুরে দাঁড়াবে ঢালিউড এমনটাই প্রত্যাশা।