সারাদেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে সরকারকে হাইকোর্টের নির্দেশ দেওয়ার পর অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। অনেক গাড়ির কাগজে ফিটনেস থাকলে বাস্তবে নেই, ওইসব গাড়ি আটক করে ডাম্পিংয়ে পাঠাচ্ছে বিআরটিএ। রাস্তায় গণপরিবহন কম থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়লেও এ অভিযানের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।
বিআরটিএ এর জোর অভিযানের ফলে পুরাতন ফিটনেসবিহীন যানবাহনে রং করে নতুন সাজিয়ে রাস্তায় নামানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক গাড়িতে নতুন লাগানো রং ঠিকমতো শুকানোর আগেই রাস্তায় বের করা হয়েছে।
মতিঝিল থেকে ফার্মগেট রুটে চলাচল করা যাত্রী সবুজ মিয়া জানান, চকচকে একটি গাড়িতে ফার্মগেটের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলেও রাস্তায় তিনবার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের ভয়ে শুধু রং করে এই ধরণের অনেক গাড়ি রাস্তায় নামানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর টাউনহল, মিরপুর এবং ফার্মগেট এলাকায় যাত্রীরা গণপরিবহনের জন্য দাড়িয়ে আছেন। গাড়ি কম থাকায় অনেককে রিক্সা-ভ্যানে বা বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে যেতে ভোগান্তি পড়তে হয়েছে তাদের।
ফার্মগেট থেকে উত্তরামুখি যাত্রী রাকিব বলেন, সকাল দশটা থেকে দাড়িয়ে আছি, প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেলেও বাসের দেখা পাইনি। যে কয়েকটি আসছে সেগুলোতে চড়ার জায়গা নেই। লক্করঝক্কর মার্কা বাস ধরা হচ্ছে বলে এরকম হচ্ছে, আমাদের কষ্ট হলেও সরকারের এ কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত।
ফার্মগেট চত্বরে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক সার্জেন্ট জয় বলেন, ফিটনেস না থাকার কারণে গতকাল তিনটি গাড়িকে ড্যাম্পিংয়ে পাঠিয়েছি। আর যাদের কাগজপত্র ঠিক নেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছি। তবে বিশেষ পরিবহন যেমন, রোগীর নিয়ে আসলে সেক্ষেত্রে সেগুলো ডাম্পিংয়ে না নিয়ে মামলা দিয়েছি।
বিআরটিএ সুত্রে জানা গেছে, ফিটনেসবিহীন অবৈধ গাড়ি গাড়ি বন্ধ করতে তাদের অভিযান চলছে। হাইকোর্টের আদেশের পর অভিযান জোরদার হয়েছে।
বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান চ্যানেল আই অনলা্ইনকে বলেন, আমরা অভিযানে নামার পর এ পথে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ পযর্ন্ত আমরা তিনটি গাড়িকে জব্দ করেছি। ওই গাড়িগুলোর কাগজে কলমে ফিটনেস আছে কিন্ত বাস্তবে ফিটনেস নেই।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের আগে থেকেই আমাদের এ অভিযান ছিল। তবে হাইকোর্টের আদেশের পর আমাদের কার্যক্রম আরো জোরদার করা হয়েছে। পুরো ঢাকা শহরে চারজন নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন।
গত জুলাই মাসের বিআরটিএ এর কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, জুলাই মাসে মামলা হয়েছে ১ হাজার ১২ টি, ১৩ লক্ষ ১৭ হাজার ছয়শত ৫০ টাকার অর্থদণ্ড হয়েছে, কারাদণ্ড হয়েছে ২৭ জনের এছাড়া ৫৩ টি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশের পর ৪ ও ৫ আগষ্ট মামলা হয়েছে ৯৫টি, এক লক্ষ ২২ হাজার দুইশত টাকার অর্থদণ্ড হয়েছে, কারাদণ্ড হয়েছে ১৩ জনের এছাড়া ১৪টি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে ‘সড়ক দুর্ঘটনাঃ প্রায় ১৯ লাখ ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের দখলে মহাসড়ক’ শিরোনামে একটি ইংরেজী পত্রিকায় ২ আগষ্ট প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, চলতি বছরের ১৫ থেকে ২১ জুলাই সারা দেশে ১৫৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯১ জন মারা যান। ৬০ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য চালকরা দায়ী। এমনকি পরীক্ষা ছাড়াই ১ লাখ ৯৮ হাজার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আর সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ৮ জন।
প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের বিষয়ে আদেশ দেন হাইকোর্ট। ৩ আগষ্ট ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঐ নির্দেশে ৪ সপ্তাহের মধ্যে যোগাযোগ ও স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি এবং বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।