বর্তমানে কারাবন্দিদের মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশ (৩৫.৯৭) বন্দিই মাদকাসক্ত বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।
তিনি বলেন, একটি কারাগারে ৭-৮ হাজার বন্দির মধ্যে যদি তিনহাজার বন্দি সবসময়ই চেষ্টা করে মাদক প্রবেশ করানোর জন্য। আর বিভিন্ন শিফট মিলিয়ে যদি ১০০ কারারক্ষী তা ঠেকাতে দায়িত্ব পালন করেন তাহলে বিষয়টা কষ্টসাধ্য।
রোববার রাজধানীর বকশি বাজারের কারা সদর দপ্তরে ‘কারা সপ্তাহ- ২০১৮’ এবং বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জনের ঐতিহাসিক সাফল্য উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
‘সংশোধন ও প্রশিক্ষণ, বন্দির হবে পুনর্বাসন’ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে এবার কারা সপ্তাহ-২০১৮ উদযাপন করা হবে। আগামী ২০ মার্চ কাশিমপুর কারাগারে ‘কারা সপ্তাহ-২০১৮’ উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দেশের ৬৮টি কারাগারে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলেও জানান আইজি প্রিজন।
কারাগারে মাদক প্রবেশের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শরীরের অভ্যন্তরেসহ বিভিন্ন অভিনব পন্থায় মাদক প্রবেশ করে। এসব পন্থা ধরতেও আমাদের সময় লাগে। উন্নত দেশের কারাগারেও শতভাগ মাদক প্রবেশ বন্ধ সম্ভব হয়নি। তারপরেও এসব প্রতিরোধে বেশ কিছু কারাগারে লাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো বডি স্ক্যানারও বসানো হচ্ছে কারাগারে। মাদকের সঙ্গে কারারক্ষীদের সংশ্লিষ্টতার প্রমান পেলেই বরখাস্তসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ পর্যন্ত অন্তত ২০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলকোড আইন সংশোধন করা হচ্ছে জানিয়ে আইজি প্রিজন বলেন: নতুন আইনের পর কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পুরো প্রক্রিয়া চালু সম্ভব হবে। বর্তমানে ১৮৯৪ সালের প্রিজন অ্যাক্ট (কারাবিধি) কার্যকর রয়েছে আর প্রচলিত জেলকোড প্রবর্তন করা হয়েছিল ১৮৬৪ সালে। কিন্তু আমরা আগে প্রিজন অ্যাক্ট প্রণয়ন করছি। প্রিজন অ্যাক্টের আলোকে জেলকোড প্রণয়ন করা হবে।
চলতি বছরের মধ্যেই নতুন কারাবিধি কার্যকর হওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন: নতুন কারা বিধিতে ১৫৯ টি আইন রয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি আইনের পর্যালোচনা শেষ হয়েছে। সবগুলো আইনের পর্যালোচনা শেষ হলে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তারপর ক্যাবিনেট হয়ে আইনটি পাশের জন্য সংসদে পাঠানো হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখার উদ্দিন বলেন, বন্দিদের সংশোধন করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী বন্দিদের সংশোধনে তিনটি কাজ করা হয়। প্রথমত শৃঙ্খলা, দ্বিতীয়ত চারিত্রিক সংশোধন ও তৃতীয়ত বন্দিদের জীবিকা নির্বাহের দক্ষতা বাড়ানো ও তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলা। জনবলের স্বল্পতার কারণে অামরা কেবল তিন নম্বর কাজটা করতে পারছি। আর বাকি দুটি পারছি না। এর অন্যতম আর একটি কারণ হচ্ছে আমাদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। তবে অামরা প্রশিক্ষণ বাড়ানোর ব্যবস্থা করছি।