খুব প্রবীণ একজন রাজনীতিবিদের ছোট্ট গল্প দিয়ে শুরু করি। সৎ ও সততার ফেরিওয়ালাও তাকে বলা যায়! ঢাকা শহরে নিজের ৫ তলা বাড়িতে বসবাস করেন, গ্যারেজে পাজেরো, প্রাডো মিলিয়ে বিলাসবহুল শুল্কমুক্ত কয়েকটি গাড়ি, সঙ্গে ৯০ দশকের একটি মাইক্রোও আছে। এরপরও উনি খুব সৎ! টাকা পয়সা কিছু কামাই করছে কি না করছে, সেটা আর বিস্তারিত না বলি। তবে উনি নিজের নির্বাচনী এলাকার দলীয় লোকের কাছে সারাজীবন অভাবী। দল ক্ষমতায় থাকলে চিত্র এক; এলাকায় যায় পাজেরো প্রাডো দিয়া, দল ক্ষমতার বাইরে গেলে চিত্র আরেক এলাকায় যায় ভাঙা মাইক্রো দিয়ে। এখন পর্যন্ত সকল নির্বাচনে দলীয় লোকেরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচা করেই তার নির্বাচন করেছে! অথচ তার ছেলের নামে আছে বেশ কয়েকটা পোশাক কারখানা!
তাই বলছি, শিক্ষামন্ত্রী সৎ কিংবা অসৎ সেই বিতর্কে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম, উনি খুব সৎ। কিন্তু ওনার সততা ধুয়ে কে পানি খাবে? উনি নির্ভেজাল, উনি নিরীহ, সাদাসিধে। তাহলে এমন নিরীহ লোক মন্ত্রীসভায় কেন? তার তো গ্রামে কৃষকের কাজ করার কথা। জামাত-শিবিরের সাবেক কর্মীকে পিও রেখে মন্ত্রীগিরি করার মতো ভেজাল কাজে এখনও উনি কেন?
যাহোক, কেউ কেউ অবশ্য ভিন্নমত প্রকাশ করতেই পারে, যদিও এতে কোন সমস্যা নাই। কথা হলো, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা বিষয়ে মোটা দাগের অর্জন কী? অবশ্যই বছরের প্রথম দিন ৩৫ থেকে ৩৭ কোটি নতুন বই বিতরণ, সারাদেশের সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নত সহ আধুনিক শিক্ষা দান, শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা নিশ্চিত, শিক্ষার্থীদের টাকা দিয়ে স্কুলে পড়ানো সহ আরো বেশ কিছু পদক্ষেপ। যেখানে গত ৯ বছর ধরেই, উক্ত সকল বিষয়ের সফলতার ক্রেডিট ২৫ শতাংশ যাচ্ছে সরকারের নামে আর বাকী ৭৫ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রীর নামে। এই যদি হয় বাস্তবতা তাহলে গত ৫-৬ বছর ধরে প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার ৭৫ শতাংশ ব্যর্থতা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে বিদায় নিয়ে চলে যেতে শিক্ষা মন্ত্রীর এত কষ্ট লাগে কেন ? উনি কী জানেন না, তার এই ৭৫ শতাংশ ব্যর্থতা এবং বাকী ২৫ ভাগসহ সবটুকুর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
অথচ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত ৯ বছর ধরে পুরো শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তিলে তিলে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নিরাপদ খামারে পরিণত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজের পিও থেকে অফিস সহকারী, বিজি প্রেসের পিওন থেকে কর্মকর্তা, সব জায়গায় জামাত-শিবির-বিএনপির সেটআপ! সব জায়গায় ছিল এবং এখনও আছে। নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পথ চলা একটি সরকারের নীতি নির্ধারককে উনি কি অবহিত করেছেন এগুলো? করেননি। তাহলে এখনও তিনি মন্ত্রণালয়ে থাকেন কী করে? কী এমন যাদুর বলে তিনি এখনও মন্ত্রীর চেয়ারে আছেন?
জানি, এসব প্রশ্নের উত্তর নেই। তবে একটা কথা বলি, মাঠের কর্মীরা নুরুল ইসলাম নাহিদের এই দায় বহন করবে না। আমার ধারণা, সারাদেশের এমন অনেক আওয়ামীলীগ কর্মী পাওয়া যাবে যাদের পদ পদবী নাই, তারা শিক্ষা মন্ত্রীর দায় বহন করতে সরাসরি অস্বীকার করবে।
শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত নয়, একথা ১০০ থেকে ১১০ শতাংশ সত্যি। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে যেদিন থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস শুরু হয়েছে, সেই থেকে উনি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বারবার নীরিহ মার্কা কথা বলে ছলনাময়ী আচরণ করেছেন। তারপরেও উনি এই চেয়ারে বসে থাকার মতো যোগ্যতা রাখেন কিনা, সেটা ভেবে দেখার অনুরোধ করবো।
সরকারের শেষ বছর এটা, প্রশ্নপত্র ফাঁস যা হওয়ার তা হয়ে গেছে, অন্তত কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক। শিক্ষামন্ত্রী থেকে বিজি প্রেসের পিওন পর্যন্ত সবাইকে বরখাস্ত কিংবা অন্যত্র বদলি করে পুরো সিস্টেমকে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক দিয়ে ঢেলে সাজানো হোক। শিক্ষামন্ত্রীর রসালো আলাপ কিংবা নিরীহ সততা দিয়ে তার একটি আসন হাতে আসলেও সারাদেশে কিন্তু এর প্রভাব থেকে যাবে। তখন না থাকবে নুরুল ইসলাম নাহিদ কিংবা প্রশ্নপত্র ফাঁসের চোরাকারবারিদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)