সম্প্রতি বরিশালে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে বর্তমানে সেখানে মুখোমুখি জনপ্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিগণ। মামলা ও পাল্টা মামলার মতো ঘটনা ঘটছে।
গত ১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা ইউএনও মুনিবুর রহমানের বাসভবনে সিটি মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থকদের হামলার ঘটনা সারা দেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত বুধবার রাতে ওই ঘটনার সূচনা হয় ইউএনওর কার্যালয়ের দেয়ালে ব্যানার–ফেস্টুন অপসারণকে কেন্দ্র করে। বুধবার রাতে মেয়র–সমর্থক ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সদর উপজেলা কমপ্লেক্সের মধ্যে ময়লা–বর্জ্য রাখার ঘটনা ঘটে। পরদিন দুটি মামলা হয়। একটি করেন ইউএনও মুনিবুর রহমান। সে মামলায় সিটি মেয়রকে প্রধান আসামি করা হয়। অন্য মামলাটি করেন বরিশাল কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জামাল। দুই মামলায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় ১২ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ওই ঘটনার পরপরই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একজন নির্বাহী অফিসার ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের’ দ্বারা হেনস্থা হয়েছেন বলে উল্লেখ করে আইনের মাধ্যমে বিষয়টি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেন। ওই বিজ্ঞপ্তির ঘটনা দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা তৈরি করে। জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের সর্ম্পকে এ রকম বিবৃতি দেয়াকে অনেকে রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বাড়াবাড়ি বলেও উল্লেখ করেছেন।
আজ (২২ আগস্ট) বরিশালের ওই ঘটনার জেরে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে দু’টি নালিশী মামলার আবেদন করা হয়েছে। বিচারক মামলা গ্রহণের আদেশ পরে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। এই দুই মামলার বাদী হলেন সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন।
এরআগে লালমনিরহাটে, ফরিদপুরে, দিনাজপুরে এধরণের কিছু ঘটনা আলোচিত হয়েছিল। সময়ের প্রবাহে সেগুলো সমাধান হলেও প্রায়ই এধরণের ঘটনা আবারও সামনে চলে আসছে। মাঠপর্যায়ে বড় ধরনের কোনো দ্বন্দ্ব জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মধ্যে নেই বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী গণমাধ্যমে জানালেও বিষয়গুলো খুবই উদ্বেগের বলে আমরা মনে করি।
জনগণের স্বার্থে জনপ্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কাজ করে থাকেন, এবং সংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় তারা শপথ নিয়েও তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মাঠ পর্যায়ের উন্নয়ন ও জননিরাপত্তায় থাকা ওই দুইপক্ষ যদি পাশাপাশি থেকে কাজ না করে কোনো ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থান নেয়, তাহলে তা তাদের শপথ ভঙ্গের কারণ হতে পারে। এছাড়া জনগণও প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উপরে আস্থা হারাবে। আমাদের আশাবাদ, উভয়পক্ষ এসব বিষয় যৌক্তিক ও সংযত আচরণের সঙ্গে সমাধান করবেন এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও এ বিষয়ে কার্যকর নির্দেশনা আসবে।