বাংলাদেশের প্রাথমিক স্কুলে ভর্তির পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘তারা যদি লেখাপড়া শিখে ছাপানো প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে স্কুলে ভর্তি হতে পারে তাহলে আর স্কুল কী শিখাবে? প্রাক প্রাথমিক বা প্রাথমিক তাদের কী শিখাবে?’
তিনি বলেছেন, ‘শিশুরা যে এলাকায় বসবাস করে, সে এলাকার স্কুলে ভর্তি হওয়া তাদের অধিকার। সরাসরি তাদের আগে ভর্তি করিয়ে নিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ, জাতির গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু নিজে থেকে অনুধাবন করার জন্য। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, নতুন কোনো ভাবনা, কিংবা ইস্যু সরকার প্রধানের দৃষ্টিতে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। আমলাতান্ত্রিক বলয় নতুন কোনো ভাবনাই সরকার প্রধানের কাছে পৌঁছুতে দেয় না।
আবার সেগুলো পৌঁছুনো গেলেও সব সরকারের প্রধানই এগুলো হৃদয়ঙ্গম করার মতো মননশীলতার অধিকারী হন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজের স্বতন্ত্রতার পরিচয় দিলেন।
কানাডার কথাই বলি। এখানে কোন শিশুটি কোন স্কুলে পড়বে- তা নির্ধারিত হয়-অভিভাবকের বাড়ীর ঠিকানা দেখে। শিশুটি যে ঠিকানায় বসবাস করবে তার নিকটবর্তী স্কুলেই তাকে ভর্তি হতে হবে। আমার ধারণা পশ্চিমের অন্যান্য দেশগুলোতেও এই ধরনের নিয়ম প্রচলিত আছে।
প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়াই শুধু নয়, প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষার পাঠ্যক্রম- এগুলোর সবকিছুই ঢেলে সাজানো জরুরি হয়ে পড়েছে। বাচ্চাদের পিঠে ভারী স্কুল ব্যাগ চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে মাঝে মধ্যেই সুধীজনের আহাজারি শুনতে পাই। কিন্তু এগুলো নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ধরনের আলোচনা বা পর্যালোচনার কথা শোনা যায় না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যখন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন, এ নিয়ে কিছু পদক্ষেপের আশা আমরা করতে পারি বৈকি।
প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কোনো টাস্কফোর্স বা বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের প্রস্তাব আমি তুলবো না। এগুলো আসলে কোনো কাজ দেয় না। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পশ্চিমা কয়েকটি দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা, পাঠ্যক্রমের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আমার ধারণা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাঙালিরা স্ব-উদ্যোগে যারা যে দেশে বসবাস করেন, সেই দেশের শিক্ষা পদ্ধতির বিবরণ পাঠাতে দ্বিধা করবেন না। সেগুলো সমন্বয় করে- বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির বাস্তবতায় সুনির্দিষ্ট একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা সম্ভব।
বাংলাদেশের শিশুদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মমত্ববোধ বাস্তবতা পাক, শেখ হাসিনার উপলব্দিকে ঘিরেই দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের কাজ শুরু হোক।